পড়ুন মমতাক্ষর...
দুবছরের সরকার। পরিবর্তনের পর ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন ১০০ শতাংশ কাজ করে ফেলেছেন। সেটা বিতর্কিত বিষয় হতে পারে। তবে তাঁর এ অবধি মন্ত্যবে বাংলা ভাষার পরিবর্তন কিছুটা হলেও হয়েছে তা বলা যায়। মুখ্যমন্ত্রী কখনো সাংবাদিক বৈঠকে কখনো জনসভায় যেসব বক্তৃতা রেখেছেন তা থেকে কিছু উক্তি তুলে ধরা হল। তিনি কথনো মজা করে, কথনো রেগে বা সন্দহের চোখে এমন কিছু কথা বলছেন যা সব মহলে বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিতর্কিত বিষয়গুলি বেশ কিছু অক্ষর দিয়ে চেনা যেতে পারে, এই যেমন ধরুন `এ` ফর অ্যাপেল, `বি` ফর ব্যাট-এর জায়গা এখন মমতাক্ষরের নতুন শব্দ....ক থেকে চন্দ্রবিন্দু অবধি বিভিন্নভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর তাঁর ভাষণ---
দুবছরের সরকার। পরিবর্তনের পর ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন ১০০ শতাংশ কাজ করে ফেলেছেন। সেটা বিতর্কিত বিষয় হতে পারে। তবে তাঁর এ অবধি মন্ত্যবে বাংলা ভাষার পরিবর্তন কিছুটা হলেও হয়েছে তা হরফ করে বলা যায়। মুখ্যমন্ত্রী কখনো সাংবাদিক বৈঠকে কখনো জনসভায় যেসব বক্তৃতা রেখেছেন তা থেকে কিছু উক্তি তুলে ধরা হল। তিনি কখনো মজা করে, কখনো রেগে বা সন্দহের চোখে এমন কিছু কথা বলছেন যা সব মহলে বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিতর্কিত বিষয়গুলি বেশ কিছু অক্ষর দিয়ে চেনা যেতে পারে, এই যেমন ধরুন `এ` ফর অ্যাপেল, `বি` ফর ব্যাট-এর জায়গা এখন মমতাক্ষরের নতুন শব্দ....ক থেকে চন্দ্রবিন্দু অবধি বিভিন্নভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর তাঁর ভাষণ---
ক১- কার্টুনকাণ্ড। ফেসবুকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৌতুক চিত্র শেয়ার করে গ্রেফতার হন অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র। কম্পিউটার থেকে বেশ কয়েকজনকে একটি ব্যাঙ্গচিত্র ফরোয়ার্ড
করেছিলেন৷ এই অপরাধে এমন সাজা পেতে হল অধ্যাপককে যা এই বিতর্কে গোটা দেশ তোলপাড় হয়ে ওঠে। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হল, মমতা রাজে ব্যঙ্গচিত্র নিষিদ্ধ।
ক২-কলকাতা। কলকাতাকে লন্ডন বানাব। এমন কথাই বলছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহাকরণ, মিনি মহাকরণের ক্ষমতা থেকেও শহরের বিভিন্ন রাস্তার হাল খারাপ, অল্প বৃষ্টিতেও জল জমছে।
খ- খাই খাই- খাই খাই পার্টি `(সিপিএমকে দেওয়া বিশেষণ)। সবমসয় বলেন না, তবে যে মিটিং মিছিলে লোক কম থাকে তখনই বিরোধী দলকে নিয়ে এমন কথা বলেন।
গ- গুডি গুডি পলিটিসিয়ান। ভাল মানুষের ভান বোঝাতে মাঝে মাঝেই বলে থাকেন।
ঘ- ঘটনা- সব সাজানো ঘটনা- পার্ক স্ট্রীট ধর্ষণ কাণ্ডের পর বললেন
'সাজানো ঘটনা' শব্দটি পরিবর্তন সরকারের কাছে খুব পরিচিত শব্দ। যে কোনও ঘটনাকে লঘু করে দেখার জন্যই এই কথাগুলো বারবার শোনা যায়।
চ- "চাবকানো উচিত"। এটি কী স্নেহের শাসন না অহেতুক মাথা গরম বলা খুব মুশকিল। বইমেলায় গাড়ির জন্য অধৈর্য্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর উত্তেজিত হয়ে পুলিশকে বললেন, "আপনাদের ধরে চাবকানো উচিত"।
ছ- ছোট। মহেশতলার আগুন লেগে বহু মানুষ ঘর ছাড়া ও গৃহহীন হওয়ার পর বললেন এটা `ছোট` আগুন।
জ- জনসংখ্যা। জনসংখ্যা বাড়ছে, তাই ধর্ষণও বাড়ছে। বিধানসভায় বিরোধী বিধায়কদের উদ্দেশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বললেনন, ‘আপনারা বলছেন ধর্ষণ বাড়ছে, জনসংখ্যাও তো বাড়ছে। বিধান রায়ের সময়ে যে লোকসংখ্যা ছিল এখন কি আর তা আছে? গাড়ি, পরিকাঠামো, শপিং মল সবই বাড়ছে। ছেলেমেয়েরাও আধুনিক হচ্ছে, সেটা অবশ্য আমি ওয়েলকাম করি।’
ঝ- ঝুট-"দেশে লুঠ চলছে, ঝুট চলছে।" সোনিয়া গান্ধী তাঁকে গুরুত্ব না দেওয়ায় ফেসবুকে লিখলেন এই কথা। প্রশ্ন হল তাহলে তিনি এতগুলো বছর একসঙ্গে ছিলেন কেন?
ট-টোটাল। টোটালটাই শেষ করে দিয়েছে। বিরোধীদেরকে একহাত নিলে এই বলে থাকেন।
ঠ- ঠিক।`ঠিক আছে, সব ঠিক আছে`। হলদিয়ায় এবিজি কাণ্ডে রাজ্য যখন বিতর্কে উত্তাল তখন মমতা বললেন, "ঠিক আছে, হলদিয়ায় সব ঠিক আছে।"
ড- ডাক। ফেডারাল ফ্রন্টের ডাক। দিল্লি দখলের স্বপ্নে ফেডারাল ফ্রন্টের ডাক দিলেন। নীতীশ, বিজুরা সাড়াও দিলেন। তবে এখন আর সেভাবে ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না কেউ। ক মাস আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে হার মানতে হয় মমতাকে। পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত কোনও নেতারা পাশে থাকে নি।
ঢ- ঢাল। চাপে পড়লেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেশ কিছু ঢাল আছে। এই যেমন ক দিন আগে সারদা কাণ্ডে যখন তিনি খুব চাপে তখন বললেন, "আমি চোর, মুকুল চোর, কুণাল চোর, তোমরা সব সাধু!!!" আবার যখন চ্যানেলে দেখানো হল সারদা সাম্রাজ্যের মালিক সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে তাঁর দলের নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, কাউন্সিলাররা একসঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেছেন, কিংবা সরাসরি আর্থিক লেনেদেন জড়িত। তখন বললেন, ওসব চ্যানেল দেখবেন না। এটা অবশ্য আগেও বলতেন।
ত- তানিয়া ভরদ্বাজ। প্রশ্ন পছন্দ না হওয়ায় একটি বেসরকারি টিভি শো থেকে ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। প্রশ্নটা করেছিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তানিয়া ভরদ্বাজ। অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়েই মমতা বলেছিলেন, তানিয়া মাওবাদীদের লোক, সিপিএমের ক্যাডার। এমনকী অনুষ্ঠানস্থলেই গোয়েন্দা কর্মকর্তারা প্রশ্নকারী ছাত্রছাত্রীদের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছিলেন।
থ- থোড়বড়ি খাঁড়া। সব করে দিয়েছি, সব শেষ, ওরা কিছু করেনি এসব কথাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলছেন। থোড়বড়ি কথা শুনতে এখন আর মমতার সভায় ইদানিং লোক হচ্ছে না।
দ- দিল্লি। "আমিও দিল্লিতে দশ লাখ লোক আনতে পারি, কালই সিপিএমকে দেখিয়ে দিতে পারি"। সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুর ঘটনায় এসএফআই-এর বিক্ষোভের পরে এই কথা বলেন। মমতার
এই কথা বলা পরদিনই রাজ্যের বিভিন্ন অংশে সিপিআইএম-এর পার্টি অফিস ভাঙচুর হয়।
ধ- ধমক। পছন্দ না হলেই ধমক দেন। এই যেমন কামদুনিতে গিয়ে করলেন। গ্রামের মেয়েকে হারানোর দুঃখ থেকে রাজ্যের প্রধানকে মনের কথা জানাতে গিয়ে এক মহিলা তাঁর ধমক খেলেন। মমতা বললেন, চোপ...তুমি সিপিআইএমের লোক...
ভ- ভোট। ভোটের আগে কোকিল কুহু কুহু ডাকে (বাংলার রাহুল গান্ধীর ভোট প্রচার প্রসঙ্গে)
ম১- মদ খাবে, মা উচ্ছের রস (তরুণদের মতিগতি নিয়ে মতামত)/
ম২- মিডিয়াফোবিয়া। সাংবাদিক বৈঠক হোক বা জনসভা মুখ্যমন্ত্রী মিডিয়াকে সবসময় একহাত নেন। তিনি ঠিক করে দেন কোন চ্যানেল দেখবেন আর কোনটা দেখবেন না।
য- যা গেছে তা গেছে। সারদায় টাকা রেখে সর্বহারা মানুষদের বললেন, যা গেছে তা যাক। এই বিতর্কিত কথাটার বিরুদ্ধে গান বাঁধলেন তাঁর দলের সাংসদও।
র- রাফ এ্যান্ড টাফ । পাহাড় সফরে মমতার সামনে গোর্খাল্যান্ডের বিক্ষোভ জানান পাহাড়বাসীরা। সেই প্রসঙ্গে এই কথা বলেন 'আমি রাফ এ্যান্ড টাফ'।
ল- লোবা। লোবায় পুলিসের গুলি চালানো নিয়ে বললেন একেবারেই স্থানীয় স্তরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমাদের কাছে কোনও খবর ছিল না। এমনকী, ওখানে আমাদের পঞ্চায়েতও জানত না। নন্দীগ্রামের সময় অবশ্য একদম অন্য কথা বলেছিলেন।
ব-বেঙ্গল লিডস। বেঙ্গল লিডস-এ জাপানের এক প্রতিনিধিকে ডেকে বললেন, হ্যালো মাই জাপানি ফ্রেন্ড।
স- স্যাটাস্যাট ফ্যাটাফ্যাট। কাজের গতি বোঝাতে এমন কথা বলেন। সিঙ্গুরে জমি ফেরত দেওয়া প্রসঙ্গে এই কথাটা প্রথম বলেছিলেন। ফলটা সবার জানা।
শ-শিলাদিত্য চৌধুরি। বেলপাহাডি়র সভায় দাঁড়িয়ে গ্রামের ছেলে শিলাদিত্য কিছু প্রশ্ন করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী কিছু না বুঝেই বললেন, ও মাওবাদী ওকে ধরো। এরপর সভাস্থল থেকে শিলাদিত্য জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ কয়েকদিন জেলও খাটেন শিলাদিত্য।
ষ-ষড়যন্ত্র। এই কথাটা খুব বলেন। ইদানিং আরও বেশি বলছেন। সারাদা কাণ্ডের পর সাংবাদিক সম্মেলনে এই কথাটা যখন বললেন, তাঁর মন্ত্রীসভারই এক সদস্য মাথায় হাত দিলেন।
মানে কী! কুণাল ঘোষরাও তো আর সিপিআইএম-এর সাংসদ নন, তাহলে এই ষড়যন্ত্রটা কার। তবে ষড়যন্ত্র কথাটায় সবচেয়ে বড় বিপদে পড়েছিলেন জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডের পর।
স- সাজানো ঘটনা। বিপদে পড়লেই বলেন।
হ- হ্যালো মিস্টার প্যাটন ট্যাঙ্ক । বেঙ্গল বিল্ডস-এর স্বাগত ভাষণে প্যাটন ট্যাঙ্কের মালিক তথা শিল্পপতি সঞ্জয় বুধিয়ার প্রতি) বাদ গেল ঙ, ষ, ঞ, ণ, ড়, ঢ়। এগুলো দিয়ে বাংলা শব্দ গড়া বেশ মুশকিল।
তাই আরও কিছু-
দশ বছর কুম্ভকর্ণের ঘুম ঘুমোও- বামেদের চুপ থাকতে বললেন।