সংক্রমণের আশঙ্কা, মেডিক্যালের মর্গে 'কোভিড দেহ' খুবলে খাচ্ছে ইঁদুর
ইঁদুর দৌরাত্ম্য আটকাতে জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার শুরু হয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে। সে কারণেই বুধবার সেখানে মৃতদেহ রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
তন্ময় প্রামাণিক: মর্গে করোনা আক্রান্তের মৃতদেহ খুবলে খাচ্ছে ইঁদুর। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ভয়? ইঁদুরের দৌরাত্ম্য আটকাতে বুধবার সকাল থেকেই জরুরি ভিত্তিতে মর্গের সংস্কার শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবন ও মেডিকেল কলেজ সূত্রে খবর এ তথ্য পৌঁছয় স্বাস্থ্য ভবন এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। তারপরেই তড়িঘড়ি ব্যবস্থা।
ইঁদুর দৌরাত্ম্য আটকাতে জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার শুরু হয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে। সে কারণেই বুধবার সেখানে মৃতদেহ রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সুপার স্পেশালিটি বিল্ডিং এর ফার্স্ট ফ্লোর এবং গ্রীন বিল্ডিংয়ের ফাস্ট ফ্লোরর নির্দিষ্ট এসি রুমে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা চিকিৎসার ওই নির্দিষ্ট দুটি বিল্ডিংয়ের একটি করে ঘর আপাতত দেহ রাখার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কড়া ঠান্ডা, নিউমোনিয়ায় মৃত্যু রোগীর! নিউরো সায়েন্সকে জরিমানা স্বাস্থ্য কমিশনের
হাসপাতাল কর্তাদের একাংশ স্বীকার করে নিয়েছেন এমন বিষয়। তবে এক আধিকারিকের বক্তব্য, এখানকার মর্গে ৬টি দেহ রাখা যায়। ইঁদুরের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কোনও কোনও দেহ ইঁদুর খাচ্ছে এমন খবর এসেছে। কোনও ভাবে যাতে সংক্রমণ না ছড়িয়ে পড়ে, সব দিক বিবেচনা করে অতি দ্রুততার সঙ্গে সংস্কার চলছে।
অন্যান্য দিনের স্বাভাবিক চিত্র হল, শববাহী গাড়ি এসে দাঁড়ায় গ্রীন বিল্ডিং বা সুপার স্পেশালিটি বিল্ডিংয়ের নিচে। সেখানে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর দেহ গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় মর্গে।
তবে বুধবার দুপুরে পুরো উলট-পুরান। বুধবার দুপুর ১টা নাগাদ দেখা যায় মৃতদেহ বহনকারী শববাহী গাড়ি এসে দাঁড়ায় গ্রীন বিল্ডিংয়ের নিচে। ৩ ব্যক্তি মৃতদেহ বহনের দরজা খুলে ভিতরে করোনা আক্রান্তের প্যাক করা দেহ থেকে টেনে নামান। তারপর ওই মৃতদেহটিকে একটি স্ট্রেচারে তোলা হয়। তারপর সেই স্ট্রেচার টিকে ঠেলে গ্রিন বিল্ডিং-এর ভিতরে ঢুকে যান তাঁরা।
সাধারণত এই বিল্ডিংয়ের নিচে অ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়ায়। সেখান থেকে রোগী নামানো হয়। তাকে চিকিৎসার জন্য ভিতরে নির্দিষ্ট বেডে নিয়ে যাওয়া হয়। রোগীর পরিবর্তে এদিন মৃতদেহ নামিয়ে স্ট্রেচারে করে বিল্ডিং-এর ভেতরে নিয়ে যাওয়া নিয়ে উঠতে থাকে প্রশ্ন।
পিপিই পড়ে থাকা এক কর্মী বলেন, "আমাদের মর্গে প্রচুর ইঁদুর। খুব উৎপাত তাদের। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতদেহ রাখা হয় যে মর্গে সেখানে ইঁদুর মৃতদেহ প্যাকেট কেটে দিচ্ছে। মৃতদেহ খুবলে দিচ্ছে।" আর এক কর্মী বলেন, "ওই ইঁদুরগুলো গোটা মেডিক্যাল কলেজে ঘুরে বেড়ায়। তাই সংক্রমণ ছাড়ানোর ভয় রয়েছে বলে শুনেছি। মনে হয় সে কারণেই বুধবার থেকে মর্গ সংস্কার করা হচ্ছে। যাতে কোন ইঁদুর ঢুকতে না পারে। তাই মৃতদেহ আপাতত এখানে কিছুক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট এসি ঘরে রেখে দেওয়া হবে। এটুকুই শুনেছি।"
আর এক আধিকারিক বয়ানে, "মর্গে ৬টি দেহ থাকে। সুপার স্পেশালিটি বিল্ডিং ও গ্রিন বিল্ডিং-এর একটি করে ঘর নির্দিষ্ট করা আছে। দেহের সংখ্যা বেশি হলে সেখানে সাময়িক সময়ের জন্য রেখে দেওয়ার হবে। কারণ মৃত্যুর ৪০ মিনিটের মধ্যে আমরা ওয়ার্ড বা বেড থেকে মৃতদেহ সরিয়ে ফেলি। আর পুরসভা দ্রুত শেষকৃত্যের জন্য দেহ নিয়ে যায়।"
হাসপাতাল সুপারকে অবশ্য এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,"মর্গে কাজ চলছে।"