ট্রাক্টরওয়ালা কৃষক না কি ভূমিহীন খেতমজুর, কাদের কথা ভাববে দেশ

এক্ষেত্রে আমাকে যেটা অবাক করেছে, সেটা হল, তাঁদের অজ্ঞতা।

Updated By: Feb 4, 2021, 01:51 PM IST
 ট্রাক্টরওয়ালা কৃষক না কি ভূমিহীন খেতমজুর, কাদের কথা ভাববে দেশ

বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি 

দেশ জুড়ে চলছে  #IndiaAgainstPropaganda নিয়ে বিতর্ক। ভারতের তরফে টুইটার ট্রেন্ডিং-এর প্রথম সুরটি বেঁধে দিলেন শচীন তেন্ডুলকার। বুধবার রিহানা, থানবার্গের টুইটের বিরোধিতা করে কড়া সুরে টুইট করেছেন শচীন। ফলে এ নিয়ে একটা বিতর্ক দানা বেঁধেছে। যে কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বহির্দেশের কেউ কিছু বলতে পারেন কি না।

প্রাথমিক ভাবে আমার মনে হয়, কে কী টুইট করবেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। এটাতে একেবারে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে না। বিশ্বের যে কোনও ঘটনা নিয়ে যে কোনও মানুষ টুইট  করতেই পারেন। এটা আমাদের মানতে হবে। আমরাও কি বিশ্বের কোনও কিছু নিয়ে কিছু বলতে পারি না?

তবে এক্ষেত্রে আমাকে যেটা অবাক করেছে, সেটা হল, তাঁদের অজ্ঞতা নিয়ে। ফলপ্রসূ হোক বা না হোক, ভারত সরকার তো বিক্ষুব্ধ কৃষকদের নিয়ে বসেছে, হয়তো আবারও বসবে। হয়তো একটা সমাধানও পাওয়া যাবে। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে একটা আলটপকা মন্তব্য করে দিলাম, এটা ঠিক নয়।

২৬ জানুয়ারির ঘটনায় পুলিস যে সংযম দেখিয়েছে সেটা তো আমাদের গর্বের ব্যাপার। অন্য় দেশগুলিতে পুলিশ কী ভাবে কাজ করে, তা তো আমরা সবাই জানি। সেদিন কত পুলিস আক্রান্ত হয়েছেন! ফলে এরকম একটা প্রেক্ষিতে কেউ যদি না জেনে না বুঝে কোনও মন্তব্য করেন তবে সেটার কোনও মানে দাঁড়ায় না। এক্ষেত্রে যেহেতু কোনও দেশ মন্তব্য করেনি, ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন, সেটাকে এত গুরুত্ব দেওয়ারও দরকার নেই। সকলেই জানে, ভারত তার সমস্ত রকম বৈচিত্র্য নিয়েও কী ভাবে রাজনীতিতে বহুত্বের স্বর ধরে রেখেছে। এটা ধরে রাখতেও হবে।

অতীতে একই রকম ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর করা মন্তব্য নিয়ে একটা পাল্টা কথা শোনা যাচ্ছে। আমেরিকার একটি বিষয়ে 'নজর রাখছে ভারত' এই মর্মে মোদী টুইট করেছিলেন। এবং  তার  সূত্রে অন্যরা বলছেন, ভারতও তাহলে এরকম করে থাকে। 

এ প্রসঙ্গে বলতে পারি, কোনও পদস্থ ব্যক্তি কোনও বিষয় নিয়ে মন্তব্য করলেন সেটা একটা বিষয়। কিন্তু বিষয়টা না জেনে আলটপকা কিছু বলে দেওয়া ঠিক নয়। মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি যদি অন্য দেশের ব্যাপারে কিছু বলেন তার একটা অন্যরকম মানে হয়। তার একটা রাষ্ট্রিক বা আন্তর্জাতিক গুরুত্ব আছে। যেমন ইমরান খান ভারত নিয়ে অনেক মন্তব্য করেন। আমরা হয়তো একমত হতে পারি না। কিন্তু একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে এটা তিনি বলতেই পারেন। 

আরও পড়ুন: নির্দেশ মেনে চলুন নচেৎ ব্যবস্থা, 'কৃষক গণহত্যা' হ্যাশট্যাগে কড়া কেন্দ্র

কিন্তু আলটপকা মন্তব্যটা মেনে নেওয়া কঠিন। রিহানা বা গ্রেটা থানবার্গ টুইটে তাই করেছেন। তাঁরা নিজের নিজের ক্ষেত্রে বিখ্য়াতও। তবে এটাও ঠিক, আলটপকা মন্তব্য এখন বিশ্বের সর্বত্র সকলেই করছেন। তবে যে কোনও ক্ষেত্রে যিনি যত বড়ই হন না কেন, কোনও বিষয়ে মন্তব্য করতে গেলে, বিশেষ করে যে ক্ষেত্রে কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ আইন শৃঙ্খলরা সমস্যা হতে পারে, সেক্ষেত্রে মন্তব্যের আগে সেখানকার ইতিহাস-ভূগোলটা জানা দরকার। না জেনে কিছু বলাটা ঠিক নয়। 

আর বাইরে থেকে করা মন্তব্য যে, যে কোনও বিষয়ের গভীরে পৌঁছতে পারে না, তার অন্যতম নজিরই হল এই কৃষি আন্দোলন। এ ক্ষেত্রে একটা মূল বিষয়ে কারও দৃষ্টিই পড়ছে না। আমাদের মাথায় রাখতে হবে, ভারতে বিরাট সংখ্যক ভূমিহীন কৃষক আছেন। তাঁরা অন্যের জমিতে কাজ করেন। তাঁদের মজুরি কী হবে, সেটা কি নির্ধারিত হয়েছে? ট্রাক্টর নিয়ে আন্দোলন চলছে, কিন্তু এ দেশে কতজন কৃষকের কাছে ট্রাক্টর আছে? যাঁদের জমি নেই, ট্রাক্টর নেই, সেই সব জমিহীন গরিব কৃষকদের নিয়ে ক'জন ভাবছেন? কেউই ভাবছেন না!

আমার মনে হয়, কৃষি আইন নিয়ে সারা ভারতের কৃষকদের মতামত নিতে হবে। যদি তাঁরা চান, এটা থাকবে। না চাইলে অন্যরকম ভাবতে হবে সরকারকে। তবে সবার আগে ভূমিহীন কৃষকদের কথাটা ভাবা দরকার। এগুলি তো অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। এগুলি আলোচনা না করে কেন অন্য় বিষয়ের চর্চা হবে? 

আরও পড়ুন: 'বহিরাগত কোনও শক্তি ভারতের বিষয়ে মাথা গলাতে পারে না', শচীনের টুইটে উত্তাল দেশ

.