বৈঠকে উপমুখ্য নির্বাচন কমিশনার, স্পর্শকাতর বুথের দাবি নিয়ে যুযুধান শাসক-বিরোধী
কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্যের এখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী খুব বেশি হলে ৩০ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর ও অতি স্পর্শকাতর ঘোষণা করা যেতে পারে।
নিজস্ব প্রতিবেদন : নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী-ই শনিবার সকালে রাজ্যে এসে উপস্থিত হয়েছেন উপমুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন। বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সে সর্বদলীয় বৈঠক করছেন তিনি। প্রথমে জাতীয়স্তর, পরে রাজ্যস্তর, মোট ৯টি স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আজ বৈঠক করার কথা উপমুখ্য নির্বাচন কমিশনারের। বৈঠকে উপস্থিত আছেন উপস্থিত আছেন অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক এল এন মীনা।
রাজ্যের সব বুথকে স্পর্শকাতর ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বিরোধীরা। আজও সেই প্রসঙ্গে নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রপাপ্ত বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলেন, "আমরা নতুন কিছু বলব না। তথ্য দিয়ে সব বলছি। ২০১১ সালে মমতা যা বলেছিলেন, সেটাই বলেছি। স্বাভাবিকভাবেই এরাজ্য সব বুথ সেন্সিটিভ। পঞ্চায়েত ভোটের কাগজ দেখালাম। এই রাজ্য সব সীমা পার করেছে। বাংলার পুলিসের উপর বিশ্বাস নেই।" তিনি দাবি করেন, কমিশন পশ্চিমবঙ্গের পুলিসের উপর ভরসা করে নয়, নিজের দায়িত্বে ভোট করুক।
যদিও মুকুল রায়ের দাবি খারিজ করে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় পাল্টা দাবি করেন, "রাজ্যে উন্নয়ন, শান্তি থাকার পরেও ছলচাতুরি করছে। অসাধু ঝুলি নিয়ে আছে ওরা। আমরা নথি দিয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রমাণ দিয়েছি পঞ্চায়েত ভোটের পর। সুপার সেন্সিটিভ বুথ কি? বাংলার মানুষ ভোট দেবে। ছলচাতুরি ও উচ্ছিষ্টদের নিয়ে ওরা দল করেছে।"
আরও পড়ুন, আধাসেনা মোতায়েনে কোনও অসুবিধা নেই: মমতা
অন্যদিকে, উপমুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে আসার পর কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্যও রাজ্যের ৭৯ হাজার বুথের প্রত্যেকটিকে স্পর্শকাতর ঘোষণার দাবি জানান। বলেন, "এরাজ্যের পরিস্থিতি কী সেটা বলা হয়েছে। একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। মনে হচ্ছে, মানুষদের হাতকড়া পরানো হয়েছে। কোনও প্রশাসনিক পুলিস, গুন্ডা দিয়ে যেন ভোট না হয়। কমিশনকে বলেছি দু'মাসের জন্য কী এসেছেন? যারা দু'মাসের ভয় দেখাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা?"
সিপিআইএম নেতা রবিন দেব বলেন, ভোটে যেন সিভিক ভলেন্টিয়াররা না থাকে। তিনি অভিযোগ করেন, অবাধ নির্বাচন কী করে হবে? যারা শাসক, তারা-ই আদর্শ নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করছে। রবিন দেব বলেন, "এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে, অবাধ ভোট হবে না। জেলাশাসকরা সুবিধার অপব্যবহার করছেন।" তিনি দাবি করেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী শুধু সীমানা এলাকায় রুটমার্চ করলে চলবে না। সর্বত্রই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুন, 'যেমন চরিত্র, তেমন আলোচনা', ফেসবুক ট্রোলিংয়ে খোঁচা দিলীপের
উল্লেখ্য, রাজ্যের স্পর্শকাতর বুথ নিয়ে কমিশনের রিপোর্ট অবশ্য অন্য কথা বলছে। বিজেপি তথা অন্যান্য বিরোধীদের অভিযোগ মান্যতা দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের কাছে যে তথ্য থাকা দরকার, রিপোর্ট তার উল্টো কথা বলছে। কমিশনের নিজস্ব রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময়ে রাজ্যে স্পর্শকাতর ও অতি স্পর্শকাতর বুথ প্রায় ৫০ শতাংশের কম ছিল। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেটাই ২০১৪-র তুলনায় আরও ২০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে, এখনও পর্যন্ত রাজ্যের যা পরিস্থিতি, সেক্ষেত্রে ২০১৪ ও ২০১৬ সালকে ছাপিয়ে যাওয়ার কোনও ইঙ্গিত নেই। বরং আগের পরিসংখ্যানের সঙ্গে বিচার করে, রাজ্যের এখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী খুব বেশি হলে ৩০ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর ও অতি স্পর্শকাতর ঘোষণা করা যেতে পারে।