জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি তুললেই, পরিবহ মুখোপাধ্যায়কে হাসপাতালে দেখতে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী
এবার থেকে সব সরকারি হাসপাতালের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য থাকবেন নোডাল অফিসার। কলকাতার হাসপাতালগুলির নজরদারির ক্ষেত্রে একজন ও প্রত্যেক জেলায় এক জন করে নোডাল অফিসার থাকবেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন: জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি তুললেই, পরিবহ মুখোপাধ্যায়কে হাসপাতালে দেখতে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠকে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সময় চাইলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ফিরে সকলের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তবে দ্রুত আন্দোলন প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।
এবার থেকে সব সরকারি হাসপাতালের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য থাকবেন নোডাল অফিসার। কলকাতার হাসপাতালগুলির নজরদারির ক্ষেত্রে একজন ও প্রত্যেক জেলায় এক জন করে নোডাল অফিসার থাকবেন। তাঁদের ফোন নম্বর থাকবে প্রত্যেক ডাক্তারের কাছে। এছাড়া সরকারি হাসপাতালে পিআর নিয়োগ করা হবে। তিনটে শিফটে থাকবে তিনজন করে পিআর। তাঁরাই রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলবেন। নবান্নে জুনিয়র চিকিত্সকদের সঙ্গে বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এক্ষেত্রে একটি টোল ফ্রি নম্বর খোলা হবে। ডাক্তারদের তরফে একটি ওয়েবসাইট চাওয়া হয়েছে, যেখানে চিকিত্সকদের ওপর আক্রমণের ঘটনায় অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার বিবরণ থাকবে।
এছাড়া সব সরকারি হাসপাতালের এমার্জেন্সির বাইরে কলাপসিবল গেট লাগানোর নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এরফলে একসঙ্গে দুজনের বেশি ঢুকতে পারবে না। বহিরাগতদের ঢোকা আটকাতে কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অভিযোগ জানাতে হাসপাতালগুলিতে নির্দিষ্ট সেল থাকবে। সেখানেই অভিযোগ জানাতে পারবেন রোগীর পরিবার।
রণক্ষেত্র করুণাময়ী, বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিকাশভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ পার্শ্বশিক্ষকদের
আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, “আমরা পদবি দেখে চিকিত্সা করিনা।” মুখ্যমন্ত্রী তাঁর উত্তরে বললেন, “এমনটা করা উচিতও নয়।” জুনিয়র চিকিত্সকদের কাজে ফেরার আবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “নাগরিক জাগরণ ঘটাতে হবে। কেউ যেন আইন হাতে তুলে না নেয়। পুলিসকে আরও বেশি করে সক্রিয় হতে হবে।” তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “ডাক্তারকে কাজে ফিরলেই, পরিবহকে দেখতে যাব আমি।” ডাক্তারদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সবার সঙ্গে আলোচনা করেই কাজে ফিরবেন তাঁরা।
এদিন বৈঠকে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে ১২ দফা দাবি আরও একবার পেশ করা হয়। বলা হয়, “খুব সঙ্কটের মধ্যে পড়ে আমরা এসেছি। আমরা খুব তাড়াতাড়ি কাজে ফিরতে চাই। কিন্তু পরিবেশ ঠিক করতে হবে। একজন ডাক্তারের গায়ে হাত দেওয়া হচ্ছে, এটা কিছু মানুষের জন্য স্পর্ধাতে পরিণত হয়েছে। কিছু মানুষের স্পর্ধা যাতে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচারিত হয়ে আজ আমরা নিরুপায়। আপনার সদিচ্ছায় আমাদের পুরো আস্থা আছে। আমরা এর সমাধান চাই।”
রাজ্যের তরফে বলা হয়, “ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনও মিথ্যা মামলা নেই। ডাক্তারকে মারার ঘটনা ৫জন গ্রেফতার হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কড়া মামলা দেওয়া হয়েছে রাজ্য। এনআরএস-এর সেই রাতের ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে।” জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে ফের এদিন বলা হয়, "আমরা পদবি দেখে চিকিত্সা করি না।" মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন, "এমনটা করাও উচিত নয়।"
আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, “মুখ্যমন্ত্রী নিরাপত্তার মুখ, আমরা আপনাকেই পাশে চাই। আমরা চাই জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে মুখ্যমন্ত্রী নিজে এসে দাঁড়ান। ডাক্তারদের নিরাপত্তা নিয়ে কড়া বার্তা দিক রাজ্য।” মুখ্যমন্ত্রীর জানান, “রাজ্য সরকার সর্বতভাবে পাশে রয়েছে।” এদিন জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে পরিকাঠামো সংক্রান্ত নানা অভাব অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর সামনে পেশ করা হয়। সব অভিযোগই শোনেন মুখ্যমন্ত্রী। তা সমাধানের আশ্বাসও দেন। তিনি বলেন, “গত ৭ বছরে স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকাঠানোর উন্নতি হয়েছে। পরিকাঠামো পরিবর্ধনের কাজ ভোটের জন্য পিছিয়ে গিয়েছে। চলতি বছরে আরও ১০টি মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হবে।”
এদিনের বৈঠকের সব কথোপকথনের লিখিত চান জুনিয়র ডাক্তাররা। মুখ্যমন্ত্রী তাতে রাজি হন। এদিনের বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে।"