Mamata Banerjee: কমপিটিশন করে লোক বসিয়ে দিচ্ছে; দল-নেতা দেখব না, পুরবৈঠকে অগ্নিশর্মা মমতা

Mamata Banerjee: সল্টলেকের কাউন্সিলররা কেন কাজ করে না? এরপর কি আমাকে ঝাঁটা হাতে বের হতে হবে?

Updated By: Jun 24, 2024, 05:55 PM IST
Mamata Banerjee: কমপিটিশন করে লোক বসিয়ে দিচ্ছে; দল-নেতা দেখব না, পুরবৈঠকে অগ্নিশর্মা মমতা

সুতপা সেন: পুরপ্রধানদের নিয়ে বৈঠকে পুরসভাগুলির উপরে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি সরাসরি টাকা খেয়ে লোক বসিয়ে দেওয়ার কথাও তিনি বললেন। পাশাপাশি মনে করিয়ে দিলেন এসব আর চলবে না। ওই বৈঠকে মমা বলেন, মিউনিশিপ্যালিটি ও পঞ্চায়েত মানুষের সেবা দেয়। সরকার টাকা দেয়। বিনাময় সেবা দেয় তারা। কিন্তু লক্ষ্য করছি রাস্তা দিয়ে গেলে যদি দেখি কোথাও দখলদারি হচ্ছে। যখন দখল হচ্ছে তখন সঙ্গে সঙ্গে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছি না? কেউ টাকা খেয়ে, কেউ টাকা খাইয়ে এসব করা হচ্ছে। এমনকি একটি গ্রুপ এসব করছে টাকার বিনিময়ে। কিন্তু তারা এটা ভুলে গিয়েছে রাজ্যের আইডেনটিটিটা এতে নষ্ট হচ্ছে। মানুষ যদি উন্নয়নের কাজ না পায় তাহলে সেই পুরসভা রাখার দরকার কী!

আরও পড়ুন-সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিন! মোদীর 'জরুরি' খোঁচা কংগ্রেসকে, রাহুলের পালটা মনস্তাত্ত্বিক চাপ...

মমতা বলেন, হাওড়ার ক্ষেত্রে যদি কিছু কথা বলি তাহলে বলতে হয় গোটা হাওড়ায় বেআইনি ঘরে ভরে গিয়েছে। রথীন যখন চেয়ারম্যান ছিল তখন হাওড়াটার বারোটা বাজিয়ে দিয়ে গিয়েছে। তার পরেও যারা হয়েছে তারা দেখেনি। রাস্তা সরু হয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্স যাওয়ার জায়গা নেই। প্ল্য়ান পাস করাতে গিয়েও নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আমরা অনলাইন করে দিয়েছি তার পরেও এটা হচ্ছে। অনেকে এর মধ্যে রয়েছে। কারও নাম করছি না। একটা গ্রুপ তৈরি হয়ে গিয়েছে। খালি জায়গা দেখলেই লোক বসিয়ে দিচ্ছে। বাংলার আইডেনটিটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আপনাদের টাকা খাওয়ার জন্য। রাজ্য সরকারের জমি বেচে দেওয়া হচ্ছে।  জায়গা পেলেই লোক বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

হাওড়ার কথা বলতে গিয়ে মমতা বলেন, হাওড়ায় ময়লা তোলা হয় না। রাস্তায় ময়লা চলে আসে। যিনি দায়িত্বে আছেন তিনি কী করেছেন? হাওড়ার এসডিও অমৃতা রায় বর্মন বালি মিউনিশিপ্যালিটির জন্য কী করছেন? সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থা আছে। কেন হচ্ছে না! ইচ্ছে মতো টেন্ডার করছেন। কতটা খাচ্ছেন জানি না। নিশ্চয় দিয়েথুয়ে খাচ্ছেন। একটা গ্যাং হয়ে গিয়েছে। রাস্তায় লাইট জ্বলেই যাচ্ছে, কলে জল পড়েই যাচ্ছে। রাস্তা আমরা সারালে তবেই সারানো হয়। তাহলে আপনাদের টাকা কোথায় যাচ্ছে। পাইপ লাইনে নোংরা জল মিশে যাচ্ছে। মিউটেশন অনলাইন করা হয়েছে। কাজ ঠিক মতো হচ্ছে না। টাকার বিনিময় পুরসভার বহু জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। হাওড়া পুলিসকে বলব তদন্ত করার জন্য। সেখানে যেই দোষী হোক ছাড়া যাবে না। সরকারি সম্পত্তি কারও নয়। বাইরের লোকরা এসে এখানে টাকার বিনিময়ে বড় বড় জায়গা দখল করে নিচ্ছে। আমি মুখ্য সচিবকে বলছি একটা তদন্ত করে দেখতে।‌ তাতে যদি কেউ দোষী হয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে সে যে কেউ হোক না কেন । হাওড়ায় একের পর এক জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। সরকারি জমি দখল করে মাল্টিস্টোরেড বিল্ডিং তৈরি হয়ে যাচ্ছে। হাওড়ায় তো কোনো বোর্ড নেই। ফলে চারজন বিধায়ক যা ইচ্ছা তাই করে দিচ্ছেন। নাম করছি না। আমি আগে এটা সাফ করবো, তারপর নির্বাচনে যাবো।

রাস্তা সারানো নিয়ে মমতা বলেন, রাজ্য সরকার বহু রাস্তা করে দিয়েছে। কিন্তু সেগুলোর কোনও রক্ষাণবেক্ষণ হয় না। আমি বলেই দিয়েছিলাম যারা রাস্তা করবে তাদের ৫ বছর রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। করা হচ্ছে না। সোলার পাওয়ারের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এসব আর হবে না। পুরসভা এসব দায়িত্ব পালন করছে না। পুরসভাগুলি ট্যাক্স বসানো ছাড়া, বাড়ি তৈরি ও লোক বসানো ছাড়া আর কোনও কাজ করছে না। হাতিবাগানটা কখনও তাকিয়ে দেখেছেন কী অবস্থা। ওয়েবেলের সামনে বহু স্টল বসে গিয়েছে। কিন্তু দেখতে কী ভালো লাগছে? এলাকা নোংরা করে রেখে গিয়েছে।

সল্টলেক নিয়ে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সল্টলেকের অবস্থা খুব খারাপ। রাজারহাটের অবস্থা খারাপ। যে যেখানে পারছে টাকা নিয়ে লোক বসিয়ে দিচ্ছে। সল্টলেকে তো সুজিত বোস কমপিটিশন করে লোক বসিয়ে দিচ্ছে। সল্টলেকের কাউন্সিলররা কেন কাজ করে না? এরপর কি আমাকে ঝাঁটা হাতে বের হতে হবে? বাইরের লোক এসে এখানে বসে পড়ছে। বাংলার আইডেনটিটি বদলে যাচ্ছে। কোনও ব্যক্তিকে পোষার জন্য এখানে আসিনি। মানুষকে েদখার জন্য এখানে এসেছি। কোন পার্টির এমএলএ দেখার দরকার নেই। প্রশাসনকে বলে দিচ্ছি। যারা লোভ করবে তাদের মুখ লিউকোপ্লাস্ট দিয়ে বন্ধ করে দিন। টেন্ডার আর লোকালি হবে না। টাকা তোলার লোক আমি চাইছি না। সেবা করার লোক চাইছি।

মমতা আরও বলেন, দীঘা ডেভলপমেন্ট অথরিটির প্রয়োজন আছে কি আর ?
শুধু বড়বড় বাড়ি করছে, তিন চারশো লোক নিচ্ছে। তাদের কাজ কি ? শুধু পা টেপাচ্ছে, গা টেপাচ্ছে।

অফিসারদের কাজ দেখার জন্য আলাদা কমিটি গঠন। তারা পদ ছেড়ে যাওয়ার আগে তাদের কাজের মূল্যায়ন করা হবে।

পুরসভায় শক্তিশালী লিডার দরকার।

বালি পুরসভার কাজ দেখার জন্য জেলাশাসক কে স্থানীয় বিধায়ককে নিয়ে আলাদা কমিটি গঠন। তারাই এই পুরসভার কাজ দেখবে।

শালিমার এলাকায় পার্কিং নিয়ে একটা ঝামেলার কথা আমার নজরে এসেছে। এসব চলবে না‌। পুলিশ যদি কড়া হয় তাহলে এসব চলতে পারে না।

যা ইচ্ছা তাই হবে এটা আমি কিছুতেই সহ্য করবো না। আজ আমার বলার দিন, আপনাদের বলার দিন নয়। আপনারা শুধু চুপ করে শুনবেন।

বিধাননগর, আসানসোল, রায়গঞ্জ ও কাঁথি। সবচেয়ে খারাপ পুরসভা।

আমি অনেক ভদ্রতা দেখিয়েছি।

বিনোদ কুমার আবার পুর সচিব পদে ফিরছেন। এখন সঞ্জয় বনসল আছেন।

২০১১ সাল থেকে ৫১,৫০০ কোটি টাকা আমরা দিয়েছি আরবান ডেভলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট কে। কিন্তু কি কাজ হয়েছে ?

বিবেক কুমার তুমি ভূমি দফতর দেখবে। বিএল‌আর‌ও, ডি‌এল‌আর‌ও মাত্র ১ শতাংশ হয়তো ভালো পাওয়া যাবে। দরকারে বাকিদের চেঞ্জ করে দাও।

(উত্তরবঙ্গে) জমি দখল করেছে যারা তারা টোটালটাই ভোট টা দিয়েছে বিজেপি কে।

আমি চাই সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট এর কাজ ২০২৬ এর মধ্যে শেষ করতে।
লোকটাকে

কেন্দ্রিয় সরকার বাংলার জল বিক্রি করে দিচ্ছে। ফারাক্কা নিয়ে ট্রাইপারটাইট চুক্তি হলো বাংলাকে বাদ দিয়ে। আপনারা জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন আর ওরা বাংলাটা কে বিক্রি করে দিচ্ছে। আমি প্রধানমন্ত্রী কে একটা চিঠি দিচ্ছি।

বাংলা কে ভাতে মারার চক্রান্ত। এখনও শপথ নেওয়া শেষ হলো না, তার আগেই বাংলাকে শেষ করে দিচ্ছে।

পুকুর ভরাট করে দিচ্ছে নিজের ইচ্ছে মতো।
পুকুর জলাশয় ভরাট হলে সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে দিতে হবে। সে যত বড় নেতাই হোক।

বাড়ি ভেঙে পড়লে দোষ হচ্ছে আমাদের, কিন্তু করবার সময় কেউ দেখছে না। নবান্নের পাশে রথীন একটা বাড়ির অনুমতি দিয়ে গেছিলো। (হাওড়ার বিধায়কদের কড়া বার্তা) তোমরা উন্নয়নের কাজে নাক গলাবে না।

অফিসাররা আবার অনেকে ভাগ দিচ্ছে বিজেপি কে।
গরুর টাকা, কয়লার টাকা সবচেয়ে বেশি খায় বিজেপি।

রাস্তা, ফুটপাতে জবরদখল বেড়েই চলেছে। পুরসভাও দেখে না, পুলিশ‌ও দেখে না চোখ দিয়ে। আমি বললে তখন হয়তো কিছুদিনের জন্য দেখে, তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়ে।

রাস্তা তৈরির জন্য ১৬ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।‌

টাকা দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ দফতরের খাতে, সেই টাকা অন্য খাতে খরচ হয়ে যাচ্ছে। এমন চললে আমরা টাকা দেওয়াই বন্ধ করে দেবো।

ভালো করে ভিজিলেন্স করলে বেড়িয়ে আসবে কে কত নিয়েছে।

মিউটেশন অকারনে দেরি করা বন্ধ করতে হবে। নচেৎ যে দেরি করবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার আগে আগে এনকোয়্যারি করে দেখে নিতে হবে।

রাজ্যের জমি কার‌ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়।

কেন্দ্র সরকার তো আমাদেরই টাকা দেয় না তো আমি পাঁচটা রাজ্যকে কি করে টানবো।
এরপর তো স্টেট টার আইডেন্টিটি‌ই নষ্ট হয়ে যাবে।‌বাংলায় কথা বলার আর কেউ থাকবে না।
অর্থের বিনিময়ে বাংলার আইডেন্টিটি যেন কেউ নষ্ট করতে না পারে। এটা আমার প্রথম ও শেষ হুঁশিয়ারি।

কিছু না করেও আমার বদনাম হচ্ছে। বাংলার আইডেন্টিটি বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে টাকার বিনিময়ে।

এসডিও রা কাজ না করলে তাঁকে শোকজ করুন।

যারা সঠিকভাবে সার্ভিস দিতে পারছে না, প্রয়োজনে সেখানে কাজের লোককে দায়িত্ব দেওয়া হোক।‌ অনেক ভালো লোক আছে, কিন্তু তাঁদেরকে ইনভলভ করা হচ্ছে না।

ডেভলপমেন্ট অথরিটি গুলোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করার জন্য আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় কে দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর। যেখানে যেখানে এই অথরিটিগুলোর কাজ শেষ হয়ে গেছে, প্রয়োজনে সেগুলো ভেঙ্গে দেবো।

(ঝালদা ও তাহেরপুর মিউনিসিপ্যালিটি কে না ডাকা নিয়ে)
দুটো মিউনিসিপ্যালিটিকে ডাকতে পারি নি কারণ আমি আমাদের লোকেদের যতটা বকতে পারি, অন্য রাজনৈতিক দলের লোকেদের ততটা বকতে পারি না। তারা তো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই না। তারা তাদের মতো কাজ করুক। আমার শুভেচ্ছা র‌ইলো।

ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি জমি জবরদখল করা নিয়ে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী গৌতম দেব কে বলেন, প্রয়োজনে যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেফতার করাও।

আমরা বাংলার কোনো শিল্পপতিদের কাছ থেকে নির্বাচনের সময় টাকা নিই না। আমি টাকা নেওয়া বরদাস্ত করবো না।‌ আমি প্রয়োজনে ভিক্ষা করে খাবো। কিন্তু এসব চলবে না।

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)

.