শিকেয় পঞ্চায়েত মামলা, `নজিরবিহীন` ঝগড়া বিচারপতি ও আইনজীবীর

রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারের দ্বৈরথ ছাপিয়ে গেল কলকাতা হাইকোর্টে এক নজিরবিহীন ঘটনায়। প্রধান বিচারপতি ও আইনজীবী সমরাদিত্য পালের মধ্যে তুমুল বাদানুবাদ হল। যে ঘটনায় ব্রাত্য হয়ে গেল আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ।

Updated By: Jun 3, 2013, 05:54 PM IST

রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারের দ্বৈরথ ছাপিয়ে গেল কলকাতা হাইকোর্টে এক নজিরবিহীন ঘটনায়। প্রধান বিচারপতি ও আইনজীবী সমরাদিত্য পালের মধ্যে তুমুল বাদানুবাদ হল। যে ঘটনায় ব্রাত্য হয়ে গেল আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ।
সংঘাত ছিল নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারের। কিন্তু সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট সাক্ষী থাকল নজিরবিহীন অন্য এক সংঘাতের। একদিকে প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র, অন্য দিকে কলকাতা হাইকোর্টের দুঁদে আইনজীবী সমরাদিত্য পাল, যিনি নির্বাচন কমিশনের হয়ে মামলা লড়ছেন। প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেওয়ার সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, "অন্তর্বর্তীকালীন এই নির্দেশে নজরদারি করবে আদালত।"
 
সঙ্গে সঙ্গে কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল বলেন, নির্দেশটা আরেকবার পড়ে শোনান। এর মধ্যে মনিটরিংয়ের বিষয়টি আছে কি না... শুনেই দৃশ্যত ক্রুদ্ধ প্রধান বিচারপতি চিত্কার করে ওঠেন। তিনি বলেন, "আমি যথেষ্ট জোরে মাইকে পড়েছি। তাতে শোনার সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কেউ পরে কোনও কিছু অস্বীকার করলে আমাদের কিছু বলার নেই।" 
দু`জনের কেউই মুখে বলেননি, কিন্তু সবাই বুঝে যান বাদানুবাদের পিছনের কারণটা কী। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের জারি করা নির্দেশে বলা হয়েছিল, সরকার ও কমিশন সহমতের ভিত্তিতে ওই সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু পরে কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল বলেন, সহমত শব্দটিতে তাঁর আপত্তি আছে। বিচারপতি যখন নির্দেশ পড়ছিলেন তখন তিনি শুনতে পাননি। নির্দেশ জারির আগে তিনি মোটেই সহমত হননি বা কেউ এব্যাপারে তাঁর সঙ্গে কথাও বলেনি। সহমতে সায় নেই তাঁর মক্কেলেরও। তাঁর মত না নিয়েই সহমত শব্দটি লেখা হয়েছিল। ডিভিশন বেঞ্চেও সেই আপত্তির কথা জানান সমরাদিত্য পাল। সোমবার কেউই সে প্রসঙ্গ উল্লেখ না করলেও সেটাই যে বাদানুবাদের আসল কারণ সেটা বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি। 
 
প্রধান বিচারপতি বলেন, "আমি যথেষ্ট জোরে মাইকে পড়েছি। তাতে শোনার সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কেউ পরে কোনও কিছু অস্বীকার করলে আমাদের কিছু বলার নেই। যা হচ্ছে এটা ঠিক হচ্ছে না। আদালতের কিছু করার নেই মনে করলে ভুল করবেন। আদালত স্ট্রিকচার দিতে পারে।"
 
সমরাদিত্য পাল পাল্টা বলেন,  "মনিটরিং শব্দটা অর্ডারে আছে কি না, জানার জন্যেই আমি পড়তে বলেছি। বিচারপতিরা বুঝতে পারছেন না, আমাদের এখান থেকে সব কথা সব সময় শোনা সম্ভব হয় না। দ্বিতীয়বার পড়ে শোনাতে সমস্যা কোথায়?"
 
প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, "আপনি কি বিশ্বাস করছেন না? সিস্টেমটা বদলে দিতে চাইছেন?"
 
জবাবে সমরাদিত্য পাল বলেন, "এটাই আদালতের সিস্টেম। আদালতের নির্দেশে ধোঁয়াশা থাকছে। দ্বিতীয়বার শুনে বুঝে নেওয়া প্রয়োজন। আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করার জন্য প্ররোচিত করবেন না।"
 
তা শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, "আমার পেশাগত জীবনে এটা দেখিনি। সমরাদিত্য পালও জবাবে বলেন, "৪৩ বছর ধরে আমিও আদালতে কাজ করছি। এরকম ঘটনা আমিও দেখিনি।"
 
অর্থাত্ দুজনই সহমত হলেন যে এরকম ঘটনা নজিরবিহীন। এখানেই শেষ হল প্রধান বিচারপতি আর প্রবীণ আইনজীবীর দ্বৈরথ।

.