চিয়ার্স! প্রথম বৃষ্টির ফোঁটায় প্রেমের নেশা
'আকাশ এতো মেঘলা
যেও নাকো একলা
এখনি নামবে অন্ধকার
ঝড়ের জল-তরঙ্গে
নাচবে নটি রঙ্গে
ভয় আছে পথ হারাবার
গল্প করার এইতো দিন
মেঘ কালো হোক মন রঙিন
সময় দিয়ে হৃদয়টাকে
বাঁধবো নাকো আর...'
কলকাতা গিরগিটির মত রং বদলাচ্ছে। গ্রীষ্ম আসেনি এখনও, তবে বইছে উষ্ণতা। একটা দাবদাহের মধ্যেও কানে অনবরত বাজছিল বসন্ত এসে গেছে আর ঠোঁটে ফাগুনের প্রেমের আগুণ। বৃষ্টি ভেজা শীতে মনে উষ্ণতার আমেজ। চায়ের কাপে আজ তুফান নেই, মনে আজ সুনামি। কলকাতার সাদা নীল শহরটা আজ জলে মুক্তর ঝলকের বদলে ধূসর রঙে সেজেছে। মেঘে মেঘে মন উদাসীন, তবু হোক কলরবের কলকাতা আনমনেই বিদ্যুতকে চমকে আকাশে স্লোগান দেবে। ছাত্রের ওপর পুলিসি বর্বতার বিচার সেদিনও রাস্তা দাপিয়েছে আজও দাপাবে। মিরচির সকালে গোটা কলকাতা শুনেছে, ছাত্র রাজনীতির কচকচানি! পড়াশোনা করতে গিয়ে ছাত্ররা নাকি রাজনীতিতে মন দিয়েছে। ছাত্রদের বিগড়ে যাওয়া মনকে বাগে আনতে পুলিসের অবাধ লাঠি, যেন বেসবল! ঝাণ্ডার তলায় ডাণ্ডার সঠিক ব্যবহার! ক্যাম্পাস একটা ডাক্তার দেবে, একটা ইঞ্জিনিয়ার দেবে আর রাজনীতির বেলাতেই সবটা খারাপ, খারাপ আর খারাপ। সমাজ তো এমনটাই মনে করে। এমন ভাবনা কর্পরেটেরও। সেনসেক্সের মতো ওঠা পড়া, কখনও মাথায় হাত আর কখনও আনন্দে লম্ফ-ঝম্ফ এতটাই হয় যেন এভারেস্টের ওপরের বট বৃক্ষের মগ ডালে পৌঁছে গিয়েছে। আবেগ ছাড়া জীবনে কেবল টার্গেট। স্যাক রেসও নয়, এখানে লড়াইটাই অসম। জয় হয় কেবল টার্গেটের। আর রোজ হারে যারা টার্গেট অ্যাচিভ করে। তবুও শহরটার নাম কলকাতা। ট্রেনে বাসে ভিড়ে গুঁতো না খেলে মনে হয় কী একটা মিস! পাড়ার মোড়ে মোড়ে রিক্সার প্যাপু, মানুষের হঠাৎ হঠাৎ চিৎকার, অলি-গলিতে নস্টালজিয়া। বৃষ্টির অকাল বোধন এই শহরে। এই কলকাতা বিশ্বের আর ৫টা শহরের থেকে স্বতন্ত্র। এই শহরটা পারে অন্য শহরে প্রেম নিয়ে যেতে, পারে অন্য একটা মেট্রোসিটিতে কেবল হাত বাড়িয়ে নিজের প্রেমিকাকে ইন্টারনেটের থেকেও বশি গতিতে হৃদয়ে হৃদয় মিলিয়ে দিতে। রাতে স্কাইপ, সেকেন্ড পেরিয়ে, মিনিট পেরিয়ে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘড়ির কাঁটাকে থামিয়ে দিয়ে যে প্রেমে দুই মন 'উথালি পাথালি' করে সেই মন ভোরে বৃষ্টি পেলে আর পালায় কোথায়? অরন্যরোদন কাটিয়ে চাঁদের পাহাড়ে আজ বন্যতা। বৃষ্টি যেমন না বলে এল, প্রেমও যেন মনের দরজায় যখন তখন কড়া নাড়ছে। এক মন আরেক মনকে বলছে-
'হয়ত তোমার জন্য
হয়েছি প্রেমে যে বন্য'
কলকাতা থেকে আকাশপথে বেঙ্গালুরু যেতে সময় লাগে মাত্র ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। দূরত্ব ১৫৬০কিলোমিটার। এই পথটাই পিচের রাস্তায় ১৮৮৬ কিলোমিটার। রেলপথে দূরত্ব আরও বাড়ে, প্রায় ১৯৪৬ কিলোমিটার। প্রায় দু'হাজার কিলোমিটারের দূরত্ব দু'মিনিটের বৃষ্টি আর দু'ফোটাতেই দু'জনকে কাছে নিয়ে আসে দু'সেকেন্ডেই। সেদিন দুজনে, তাই আজ কোরাসে গেয়ে ওঠে-
'এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকে না তো মন
কাছে যাবো
কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ...'