জরায়ুতে নয়, সন্তান বড় হচ্ছিল মায়ের পাকস্থলী, লিভারের ফাঁকে, কলকাতায় ‘ওয়ান্ডার বেবি’!

দেখা যায়,  মাথা  হাত  পা পূর্ণ শারীরিক গঠন নিয়ে প্রায় ৫ মাস বয়সের গর্ভস্থ সন্তান রয়েছে পাকস্থলী, লিভার, অন্ত্রের মতো একাধিক প্রত্যঙ্গের মাঝে।

Updated By: Jul 29, 2019, 12:38 PM IST
জরায়ুতে নয়, সন্তান বড় হচ্ছিল মায়ের পাকস্থলী, লিভারের ফাঁকে, কলকাতায় ‘ওয়ান্ডার বেবি’!

নিজস্ব প্রতিবেদন:  চিকিত্সকরা তাকে বলছেন ‘ওয়ান্ডার বেবি’। ‘ওয়ান্ডার’ই বটে! কারণ ছোট্ট সেই শিশুটি  মায়ের জরায়ুতে নয়, পাঁচটা মাস ধরে বেড়ে উঠেছে মায়ের পাকস্থলী, অন্ত্র, খাদ্যনালী, লিভারের ফাঁকে। ‘ইউরিন টেস্ট’এ ধরা পড়েছিল,  মায়ের নিজস্ব একটি অনুভূতি ছিল বটে, কিন্তু কোনওভাবেই পরীক্ষায় ধরা পড়ছিল না তাঁর গর্ভবস্থার প্রমাণ। শেষমেশ থ্রি ডি স্ক্যানে ধরা পড়ল তার অস্বিত্বের প্রমাণ। পাঁচ মাসেই গর্ভস্থ শিশুকে অস্ত্রোপচার করে বার করলেন চিকিত্সকরা। নাম দিলেন ‘ওয়ান্ডার বেবি।’  মাকে বাঁচাতেই চিকিত্সকরা তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। চিকিৎসকদের কথাতেই, এটি  বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা।

 

বৃহস্পতিবার বছর পঁচিশের  প্রতিমা বাগ পেটের যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা আগের বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা, রিপোর্ট  সব খতিয়ে দেখেন।  নতুন করে  কিছু পরীক্ষা, অল্ট্রাসোনোগ্রাফি করা হয়। কিছুই ধরা পড়েনি। প্রেগনেন্সি টেস্ট করে প্রেগন্যান্সির সন্ধান মেলে। শুরু হয় গর্ভস্থ সন্তানের খোঁজ। কোনওভাবেই জরায়ুর মধ্যে কিছুরই হদিস মেলে না। তারপর সিদ্ধান্ত হয় 3D স্ক্যান করার। দ্রুত তা করা হয় শুক্রবার। NCCT অর্থাত্  নন কন্ট্রাস্ট সিটি স্ক্যান। দেখা যায়,  মাথা  হাত  পা পূর্ণ শারীরিক গঠন নিয়ে প্রায় ৫ মাস বয়সের গর্ভস্থ সন্তান রয়েছে পাকস্থলী, লিভার, অন্ত্রের মতো একাধিক প্রত্যঙ্গের মাঝে।

চিকিৎসক প্রবোধ সোরেঙের  কথায় , “এই গর্ভস্থ সন্তান খাদ্যনালী,  লিভার পাকস্থলীর দেওয়াল থেকে তার খাবার সংগ্রহ করছিল।  আর একটু বড় হলেই সে যেভাবে খাবার সংগ্রহ করতে তাতে শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ হত। মৃত্যু হতো মায়ের। সাধারণত এ ধরণের ঘটনায় ১০ হাজারে একটি সন্তান বাঁচে।  এক্ষেত্রে মাকে বাঁচাতে অস্ত্রোপচার করে গর্ভস্থকে বাদ দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।”

প্রতিমার হিমোগ্লোবিন ছিল ৭।  শুক্র ও শনিবার পরপর  দু’ইউনিট  ব্লাড দেওয়া হয়। শনিবার অস্ত্রোপচার করা হয়।  অধ্যাপক তপন নস্করের  তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা হয়।   সঙ্গে ছিলেন চিকিত্সক প্রবোধ সোরেঙ,  পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়ে ভৌমিক, চৈতালি সেনগুপ্ত, জোৎস্না ঝা, দেবাশিস ঘোষ। এটি এক ধরণের ‘ অ্যাবডোমিন্যাল প্রেগন্যান্সি।’

রাজ্যে এলেন নতুন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর, বিমানবন্দরে দেওয়া হল গার্ড অফ ওনার

হিস্টোপ্যাথোলজি পরীক্ষা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হতে চাইছেন, এটি ‘Primary Abdominal Pregnancy’  নাকি ‘Secondary Abdominal Pregnancy’? যদি primary হয়, তাহলে তা পৃথিবীর ২৬ তম ঘটনা হিসেবে  চিকিৎসা বিজ্ঞানের পাতায় লেখা থাকবে, বলছেন বিশিষ্ট চিকিত্সকরা। চিকিত্সক পূজা বন্দ্যোপাধ্যায় ভৌমিক বলেন, “প্রতিমার পেটে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। অস্ত্রোপচার করে ভ্রূণটিকে বার না করলে তাঁর প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল।”

আপাতত ভালো আছেন প্রতিমা বাগ। অস্ত্রোপচারের শারীরিক যন্ত্রণা আছে বটে, তবে তা ছাপিয়ে যাচ্ছে  সন্তান হারানোর বেদনা। তাঁর আফসোস, “ও এল, কিন্তু আমি বুঝতেই পারলাম না। মা হয়েও মা হতে পারলাম না আমি।”

.