বেনিয়মের শাস্তি, অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের ডিম খাওয়াতে মেডিকাকে ১০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ কমিশনের

মেডিকার পাশাপাশি এদিন রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন বি পি পোদ্দার হাসপাতালকেও মোটা টাকার জরিমানা করেছে। 

Reported By: তন্ময় প্রামাণিক | Edited By: সুদেষ্ণা পাল | Updated By: Nov 11, 2020, 11:01 PM IST
বেনিয়মের শাস্তি, অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের ডিম খাওয়াতে মেডিকাকে ১০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ কমিশনের
ফাইল ফোটো

তন্ময় প্রামাণিক : নজিরবিহীন! বেআইনি কাজের জন্য একেবারেই অন্য রকমের শাস্তি দেওয়া হল মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালকে। মেডিকার বেআইনি কাজ ধরার পর  শাস্তি হিসেবে ১০ লক্ষ টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেওয়ার নির্দেশ দিল রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন। আর ওই টাকায় অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের ডিম সিদ্ধ খাওয়ানোর প্রকল্পের কথা ঘোষণা করলেন কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীম বন্দোপাধ্যায়। হাসপাতাল বেনিয়ম করেছে। সেই বেনিয়ম ধরাও পড়েছে। তবে তার জন্য ১০ লক্ষ টাকা 'জরিমানা' নয়। টাকা জমা দিতে হবে একটি ডিম খাওয়ানোর প্রজেক্টে। অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের দিনে একটি করে ডিম খাওয়ানো হবে, এমনই প্রজেক্ট নিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন। রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের কোভিড সংক্রান্ত নিয়ম বিধি লঙ্ঘন করার জন্য এভাবেই বুধবার শাস্তি ঘোষণা করলেন রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান।

চেয়ারম্যান অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমরা অগাস্ট মাসে করোনা সংক্রান্ত নিয়মবিধি জানিয়েছি। তারপরেও মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তা সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করেছে। অমিতাভ চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের আউটডোরে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন ১৫ অক্টোবর। চিকিৎসকের ফি বাবদ আউটডোরে দু'জনের কাছ থেকে মাথাপিছু ২৫০ টাকা করে ইনফেকশন কন্ট্রোল চার্জ নিয়েছিল মেডিকা। তাঁদের অনুরোধে কান দেয়নি মেডিকা কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ করেছিলেন আমাদের কাছে। আমাদের নিয়ম অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি হাসপাতালে ঢুকলে স্যানিটাইজেশন বাবদ মাথাপিছু 50 টাকা করে নেওয়া যেতে পারে। চিকিৎসক পিপিই পরে আউটডোরে দেখলে ৫০ টাকা নিতে পারেন। তার বেশি নয়। আমি মেডিকাকে বলেছি যে কেন তারা নিয়ম মানলেন না? মেডিকা সঠিক জবাব দিতে পারেনি। এদিকে এতদিন পর্যন্ত প্রায় ৩ মাস হাসপাতালে আউটডোরে যাঁরা দেখাতে আসেন, তাঁদের কাছ থেকে তাঁরা ২৫০ টাকা করে নিয়েছেন। সেই বেনিয়মে  কত লক্ষ টাকা মেডিকা নিয়েছে, জানি না। প্রত্যেককে সেই টাকা ফেরত দিতে হবে নাম খুঁজে খুঁজে বের করে।" 

একইসঙ্গে অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, "ওরা বেআইনি কাজ করেছে। তবে আমরা 'পেনাল্টি' শব্দ ব্যবহার করছি না। ১০ লক্ষ টাকা কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি হিসেবে খরচ করার জন্য চাওয়া হয়েছে। লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজের ছাত্রীরা, সেখানকার প্রিন্সিপাল, আমাদের কমিশনের সদস্যরা ও ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থের বিশেষজ্ঞকে নিয়ে আমরা একটা প্রকল্প করছি। তাতে ওই কলেজ এলাকার অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের দিনে একটি করে ডিম খাওয়ানো হবে। এই ফান্ড সেকাজেই খরচ করা হবে। ফান্ড যতক্ষণ না শেষ হচ্ছে, প্রকল্প চলবে। এই প্রকল্পে সাহায্য করার জন্য পুলিস কমিশনারকেও আমরা বলেছি। তাঁরা সাহায্য করলেও খুব ভালো হয়।"

মেডিকার পাশাপাশি এদিন রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন বি পি পোদ্দার হাসপাতালকেও মোটা টাকার জরিমানা করেছে। স্বাস্থ্য কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, রঙ্গুন ওয়ালা বলে এক ব্যক্তি ৬ জুলাই ভর্তি হয়েছিলেন বি পি পোদ্দার  হাসপাতালে। ২০ জুলাই তাঁর ছুটি হয়। বিল হয় ৪ লক্ষ ৩৪ হাজার ৮০০ টাকা। এই ঘটনায় ওই ব্যক্তি স্বাস্থ্য কমিশনে অভিযোগ করেন যে, বাড়তি বিল নেওয়া হয়েছে। এদিন স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই প্রসঙ্গে বলেন, "টাকার অঙ্ক বিবেচনা করে ওই বিলের কোনও যুক্তি আমরা পাইনি। চিকিৎসক ফি বাবদ নেওয়া হয়েছে প্রতিদিন ৫০০০ টাকা করে। আমরা সেখানে বলেছিলাম হাজার টাকা নিতে। পিপিই বাবদ প্রতিদিন ২০০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। আরএমও চার্জ প্রতিদিন ১৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। ডায়েটিশিয়ান চার্জ নেওয়া হয়েছে প্রতিদিন সাড়ে ৭০০ টাকা করে। প্যাথোলজি টেস্টের বিল যা খুশি ধার্য করা হয়েছে। সবদিক বিবেচনা করে আমরা দেখলাম বিলের অঙ্ক আড়াই লক্ষ টাকার বেশি হওয়ার কথা না। তাই বাকিটা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮০০ টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে বি পি পোদ্দারকে।"

আরও পড়ুন, 'উত্সব গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু জীবনরক্ষা অগ্রাধিকার', বাজি নিষিদ্ধ রায় বহাল রাখল সুপ্রিমকোর্ট

.