ন্যায্য মূল্যের দোকানে ১২ টাকার ওষুধ ৩২ টাকায়

তৃণমূল সরকারের আমলে স্বাস্থ্যে সেরা চমক বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ফেয়ার প্রাইস শপ চালু করা। এখনও পর্যন্ত মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতাল সহ রাজ্যের ৭০টি জায়গায় চালু হয়েছে সস্তার ওষুধের দোকান। কোথাও ৫০, কোথাও ৬৫, কোথাও আবার বাজারমূল্যের থেকে ৭০ শতাংশ ছাড়ে মিলছে ওষুধ। হাসপাতালে হাসপাতালে ঝলমল করছে সস্তায় ওষুধ বিক্রির সরকারি বিজ্ঞাপন। কিন্তু সত্যি সত্যি কি সস্তায় ওষুধ পাওয়া যায় ফেয়ার প্রাইস শপে। 

Updated By: Jul 26, 2015, 09:11 PM IST
ন্যায্য মূল্যের দোকানে ১২ টাকার ওষুধ ৩২ টাকায়

ওয়েব ডেস্ক: তৃণমূল সরকারের আমলে স্বাস্থ্যে সেরা চমক বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ফেয়ার প্রাইস শপ চালু করা। এখনও পর্যন্ত মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতাল সহ রাজ্যের ৭০টি জায়গায় চালু হয়েছে সস্তার ওষুধের দোকান। কোথাও ৫০, কোথাও ৬৫, কোথাও আবার বাজারমূল্যের থেকে ৭০ শতাংশ ছাড়ে মিলছে ওষুধ। হাসপাতালে হাসপাতালে ঝলমল করছে সস্তায় ওষুধ বিক্রির সরকারি বিজ্ঞাপন। কিন্তু সত্যি সত্যি কি সস্তায় ওষুধ পাওয়া যায় ফেয়ার প্রাইস শপে। 

ন্যায্য মূল্যের দোকানগুলি আসলে সরকারের থেকে সুযোগ সুবিধা নিয়ে মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। এমআরপির ওপর বিপুল পরিমান ছাড় দেওয়া সত্ত্বেও ন্যায্যমূল্যের দোকানে ওষুধের দাম যা দাঁড়াচ্ছে, তা বাজারের অধিকাংশ নামী কোম্পানির ওষুধের দামের কাছাকাছি বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে কিছু বেশি। 

ডাক্তাররা জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন লিখলেও ন্যায্যমূল্যের দোকান রোগীদের ব্র্যান্ডেড ওষুধ কিনতে বাধ্য করছে। বিভিন্ন সূত্রে এরকম একঝাঁক অভিযোগ। খোঁজ খবর নিতে কলকাতার ৫টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ফেয়ার প্রাইস শপে হাজির ২৪ ঘণ্টা। 

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ 

এই হাসপাতালে ফেয়ার প্রাইস শপ চালায় এম এস লাইফ নামে একটি সংস্থা। এখানে অ্যামোক্সিসিলিন ৫০০ অ্যান্ড পটাশিয়াম ক্ল্যাভিওনেট, জেনেরিক নামের বহুল ব্যবহৃত একটি অ্যান্টিবায়োটিকের খোঁজ করি আমরা। দেখা যায় ওষুধটি এখানে বিক্রি হচ্ছে মোক্সটাস (সিভি) ৬২৫ ব্র্যান্ড নামে। ৬-টি ট্যাবলেটের একটি স্ট্রিপের ছাপানো দাম ২৬০ টাকা। এমআরপি-র ওপর  ৬৬.২৫% ছাড় দিয়ে ওষুধের দাম পড়ল ৮৭ টাকা ৭৫ পয়সা। 

একটু খুঁজতেই এক নামি সংস্থার তৈরি একই ওষুধ পাওয়া গেল মেডিক্যাল কলেজের বাইরে। ব্র্যান্ড নেম অ্যাকুক্ল্যাভ। কোনও ছাড় নেই। ৬-টি ট্যাবলেটের একটি স্ট্রিপের দাম ৭০ টাকা ৮০ পয়সা। অর্থাৎ ফেয়ার প্রাইস শপের থেকে ১৬ টাকা ৯৫ পয়সা কম। এটা শুধু মেডিক্যাল কলেজের ঘটনা। কলকাতার অন্য সরকারি হাসপাতালগুলিতেও প্রায় একই ছবি।

এনআরএস হাসপাতাল

টেলমি সার্টন ফর্টি। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার ওষুধ। চিকিত্সকের প্রেসক্রিপশন নিয়ে এই জেনেরিক নামের ওষুধটি খুঁজতে এনআরএসের ফেয়ার প্রাইস শপে পৌছেছিলাম আমরা। এখানেও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে ফেয়ার প্রাইস শপ চালাচ্ছে এমএস লাইফ ড্রাগ প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থা। না। জেনেরিক নামে ওষুধ মিলল না। বদলে ভেনপ্রেস নামে লিফোর্ড সংস্থার তৈরি ব্র্যান্ডেড ওষুধ তুলে দিলেন দোকানদার। দশটি ট্যাবলেটের একটি স্ট্রিপের ছাপানো দাম ৭১ টাকা ৫০ পয়সা। এর ওপর ৬৬.`২৫ শতাংশ ছাড়। দিতে হল মাত্র ২৪ টাকা। 

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ

আরও বেশি ছাড় মিলতে পারে। এই আশায় এরপর আমরা যাই পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। ফ্রাঙ্করসের ফেয়ার প্রাইস শপে। এখানে ছাড়ের পরিমান ৫৬.`৬০ শতাংশ। এখানেও জেনেরিক নামে ওষুধ পাওয়া গেল না। টেলমি সার্টন ফর্টির বদলে গালফা সংস্থার তৈরি টেলমি গাল ফর্টির স্ট্রিপ বের করে দিলেন দোকানদার। দশটা ট্যাবলেটের দাম ৬৮ টাকা। ছাড় দিয়ে ৬৮ টাকার ওষুধ পাওয়া গেল মাত্র ২৯ টাকায়। 

একই ওষুধের দাম এনআরএসে চব্বিশ টাকা। ন্যাশনালে উনত্রিশ। তাহলে সাধারণ ওষুধের দোকানে  দাম কত? ন্যাশনাল মেডিক্যাল লাগোয়া একটি দোকানে টেলমি সার্টন ফর্টির খোঁজ করি আমরা। ওষুধটা পাওয়া গেল। তবে অন্য ব্র্যান্ডের। ম্যান কাইন্ড সংস্থার তৈরি করা। নাম টেলমি কাইন্ড ফর্টি। স্ট্রিপের গায়ে ছাপানো রয়েছে ওষুধের দাম। চব্বিশ বা উনত্রিশ নয়। মাত্র একুশ টাকা পঞ্চাশ পয়সা

সস্তার ওষুধের আড়ালে, চলছে এমআরপি-র ওপর ছাড়ের নাটক। বিভিন্ন ফেয়ার প্রাইস শপে একই ওষুধে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন রকম দাম। মেডিক্যাল কলেজ, এনআরএস, ন্যাশনালের পর এবার আমাদের গন্তব্য আরজি কর হাসপাতাল। 

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ

জেনেরিক নাম অ্যাট্রোভাসটেটিন টেন। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে হামেশাই এই ওষুধ প্রেসক্রাইব করে থাকেন চিকিত্সকেরা। ওষুধটা খুঁজতে আরজি করের এমএস লাইফ ড্রাগ প্রাইভেট লিমিটেডের ফেয়ার প্রাইস শপে গিয়েছিলাম আমরা। ওষুধটা মিলল। তবে কার্ডিওজেন টেন ব্র্যান্ড নামে। দশটা ওষুধের ছাপানো দাম ৭৮ টাকা। ছাড় ৬৬.২৫ শতাংশ। খরচ হল মাত্র ২৬ টাকা ৩২ পয়সা। 

এমএস লাইফ সংস্থাই ফেয়ার প্রাইস শপ চালায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। একই ওষুধ কিনতে সেখানেও হাজির হয়েছিলাম আমরা। দেখা গেল, মেডিক্যাল কলেজে অ্যাট্রোভাসটেটিন টেন বিক্রি হচ্ছে অ্যাটোরভেডক টেন ব্র্যান্ড নামে। স্ট্রিপের গায়ে দাম লেখা ৯৬ টাকা। ৬৬.২৫ % ছাড় দিয়ে মেডিক্যাল কলেজে ওষুধটা বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকায়। 

একই সংস্থার ফেয়ার প্রাইস শপ। ওষুধটাও এক। কিন্তু দুই সরকারি হাসপাতালে বিকোচ্ছে দু-রকম দামে। এখানেই শেষ নয়। খোলা বাজারে ওষুধটার দাম কত, সেটাও যাচাই করেছিলাম আমরা। দেখা গেল, একটি নামি বহুজাতিক সংস্থাও তৈরি করে একই কম্পোজিশনের এই ওষুধটা। ব্র্যান্ডের নাম জেনেক্সভাস্ট টেন। ২৬ বা ৩২ টাকা নয়। বিনা ছাড়ে খোলা বাজারে ওষুধটির দাম মাত্র ১২ টাকা।

এসএসকেএম

পিজি হাসপাতালের ফেয়ার প্রাইস শপে ওমিপ্রাজল  টুয়েন্টি নামের একটি জেনেরিক ওষুধ খুঁজতে গিয়েছিলাম আমরা। খুবই সাধারণ ওষুধ। হাইপার অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণে হামেশাই কাজে লাগে ওষুধটা। দেখা গেল, স্বাস্থ্য দফতর যতই জেনেরিক নামে ওষুধ বিক্রির ফতোয়া জারি করুক না কেন, এসএসকেএম রয়েছে এসএসকেএমেই। ওমিপ্রাজল টুয়েন্টি পাওয়া গেল না। এর বদলে মিলল ওমেক টুয়েন্টি নামে একটি ব্র্যান্ডেড ওষুধ। কনসেপ্ট সংস্থার তৈরি ওষুধটির ছাপানো দাম ৭৫ টাকা। ৬৭.২৫ শতাংশ ছাড় দিয়ে ওষুধটার দাম ২৪ টাকা ৫৬ পয়সা। 

একই ওষুধ বিনা ছাড়ে, খোলা বাজারেও পাওয়া যায়। অস্কার টুয়েন্টি নামে একই ওষুধ তৈরি করে ম্যানকাইন্ড সংস্থাও। দাম অনেকটাই কম। মাত্র ১৯ টাকা ৮০ পয়সা। 

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ

গ্লিমিপ্রাইড। ডায়াবেটিসের এই ওষুধটা খুঁজতে ন্যাশনাল মেডিক্যালের ফেয়ার প্রাইস শপে গিয়েছিলাম আমরা। জেনেরিক নামের বদলে ওষুধটা পাওয়া গেল গ্লিমিপ ওয়ান ব্র্যান্ড নেমে। ৪৫ টাকার ওষুধ ৫৬.৬০ শতাংশ ছাড় দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে ১৯ টাকা ৫০ পয়সায়। একই কম্পোজিশনের ওষুধ, ইসরিল ব্র্যান্ড নামে বিনা ছাড়ে খোলা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১১ টাকায়।

.