বাড়ির ফ্রিজে দু'দিন ধরে পড়ে রইল করোনা আক্রান্ত রোগীর দেহ, শরীরে ধরল পচন!

মৃতের আত্মীয় বলেন, "মৃত্যুর পর আমরা থানায় যাই। তারা বলেন স্বাস্থ্য ভবন এ যোগাযোগ করুন । স্বাস্থ্য ভবনের হেল্পলাইনের ফোন করে আমরা ফোন পাইনি।  হেল্পলাইন নম্বর বেজেই গেল। রাত নটা পর্যন্ত কিছু করতে না পেরে দেহটি সংরক্ষণ করার চেষ্টা করি। চিকিৎসক সেইমতো লিখেও দেন। কিন্তু কোন সংরক্ষণ কেন্দ্র এই দেহ নিতে চায়নি।" পুলিসকে জানিয়েও কোনও ব্যবস্থা হয়নি বলে অভিযোগ।

Reported By: তন্ময় প্রামাণিক | Updated By: Jul 1, 2020, 03:35 PM IST
বাড়ির ফ্রিজে দু'দিন ধরে পড়ে রইল করোনা আক্রান্ত রোগীর দেহ, শরীরে ধরল পচন!
নিজস্ব চিত্র

তন্ময় প্রামাণিক:  করোনা  আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পর সেই মৃতদেহ দুদিন ধরে বাড়িতেই পড়ে রইল। চিকিৎসক দিবস এমন অমানবিক ঘটনা এই শহরে প্রকাশ্যে এল।

মৃত্যুর প্রায় ৪৪ ঘণ্টা ধরে পড়ে রয়েছে আমর্হাস্ট স্ট্রিট  একটি আবাসনে করোনা আক্রান্তের মৃতদেহ। সোমবার দুপুর তিনটায় মৃত্যু হয়েছে ওই ব্যক্তির। তারপর থেকে পরিবার একবার থানা একবার স্বাস্থ্য ভবন, একবার কলকাতা পুরসভা এইভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন দেহ সংরক্ষিত করার জন্য একাধিক জায়গায় যোগাযোগ করেন। কিন্তু কোন জায়গা থেকে সাহায্য মেলেনি। দেহতে পচন শুরু হয়ে যায়। পরে মঙ্গলবার অনেক কষ্টে একটি ফ্রিজ জোগাড় করেন।  
বুধবার সকালের পর কলকাতা পুরসভার দেহ নেওয়ার উদ্যোগ শুরু করেছে। প্রথম এমন ঘটনার সাক্ষী হল এই শহর কলকাতা।

আমর্হাস্ট  স্ট্রিটের ওই  বাসিন্দা সোমবার দুপুর ৩টায় মারা যান বাড়িতেই। পরিবারের লোকজন চিকিৎসক ডেকে আনেন বাড়িতে। একাধিক প্রতিবেশির মতে, করোনা  উপসর্গ ছিল ওই প্রবীণের। মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ওই চিকিৎসক সম্পূর্ণভাবে পিপিই পড়ে ওই বাড়িতে আসেন। করোনা আক্রান্ত কিনা সেই নমুনা ওই দিন সকালেই চিকিৎসকের পরামর্শে একটি বেসরকারি ল্যাবে দেওয়া হয়েছিল। বাড়ি ফিরে খাওয়া-দাওয়া পর হঠাৎ মৃত্যু হয়েছিল ওই প্রবীণের । সেই কারণে ওই চিকিৎসক  রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে বলেন।  

মৃতের আত্মীয় বলেন, "মৃত্যুর পর আমরা থানায় যাই। তারা বলেন স্বাস্থ্য ভবন এ যোগাযোগ করুন । স্বাস্থ্য ভবনের হেল্পলাইনের ফোন করে আমরা ফোন পাইনি।  হেল্পলাইন নম্বর বেজেই গেল। রাত নটা পর্যন্ত কিছু করতে না পেরে দেহটি সংরক্ষণ করার চেষ্টা করি। চিকিৎসক সেইমতো লিখেও দেন। কিন্তু কোন সংরক্ষণ কেন্দ্র এই দেহ নিতে চায়নি।" পুলিসকে জানিয়েও কোনও ব্যবস্থা হয়নি বলে অভিযোগ।

দেহ পড়ে থাকে ওই আবাসনের বাড়িতেই। মঙ্গলবার সকালে পরিবারের সদস্যরা যান কলকাতা পুরসভার অফিসে। নিয়ম জানিয়ে তারা জানিয়ে দেয় স্বাস্থ্য ভবনে যেতে। কিন্তু স্বাস্থ্যভবন থেকেও রিপোর্ট আনার জন্য বলে দেয়।
রাত এগারোটায় রিপোর্ট হাতে পান পরিবারের সদস্যরা। সেখানে করোনা আক্রান্ত অর্থাৎ রিপোর্ট পজিটিভ আসে। মঙ্গলবার থেকে একটি ফ্রিজে দেহটি সংরক্ষণ করে রাখা হয়।

আরও পড়ুন: নিউটাউনে আক্রান্ত বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ
অভিযোগ,  রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর স্বাস্থ্য ভবনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও  কেউ ফোন ধরেনি বলে অভিযোগ। বুধবার সকালে অবশেষে স্বাস্থ্য ভবনে যোগাযোগ সম্ভব হয় সেখান থেকে কলকাতা পৌরসভার খবর যায়।
মৃতের ছেলে বলেন, "বাবার মৃতদেহ দুদিন ধরে চোখের সামনে বাড়িতেই রয়েছে। যন্ত্রণাটা বোঝার চেষ্টা করুন। অসহায় লাগছে। কি করবো বুঝতে পারছিনা। সুরক্ষার বিষয়ে রয়েছে। অন্যান্য প্রতিবেশী এবং এখানকার সকলের সব নিয়ে চিন্তিত আমরা। আর যন্ত্রণা ভিতরেই রয়েছে। মৃত্যুর পর এমন অভিজ্ঞতা হবে স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। এক দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকল গোটা পরিবার

.