আইনজীবী দম্পতির হঠাৎ CBI হওয়ার ইচ্ছায় ৪০ লক্ষ টাকা প্রতারণার শিকার, গ্রেফতার কৃশানু
৩ লক্ষ দিয়ে শুরু হয় সিবিআই-তে চাকরি করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। আসতে আসতে বিগত ৫ বছরে সেটি পৌঁছে যায় ৪০ লক্ষে।
নিজস্ব প্রতিবেদন: আইনজীবী দম্পতির হঠাৎ সিবিআই অফিসার হওয়ার ইচ্ছা জাগে। তাও আবার ঘুর পথে টাকার বিনিময়ে! ব্যাস, অগত্যা প্রতারণার শিকার। প্রায়, ৪০ লক্ষ টাকা দিয়েও সিবিআই অফিসার হতে পারলেন না আইনজীবী দম্পতি। বরানগর থানায় অভিযোগ জানান তাঁরা। গ্রেফতার করা হয় প্রতারক ভুয়ো সিবিআই অফিসার কৃশানু মন্ডলকে।
বরানগরের বাসিন্দা ইন্দ্রানী চ্যাটার্জি ও বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জি। দম্পতি দু-জনই আইনজীবী। শিয়ালদহ কোর্টে প্র্যাকটিস করতেন তাঁরা। ২০১৬ সালে অভিযুক্ত কৃশানু মন্ডল বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জির কাছে আসেন ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রি করার জন্য। তারপরই চ্যাটার্জি পরিবারের সঙ্গে বিরাট আলাপ জমিয়ে ফেলেন। বাড়ি পর্যন্ত যাতায়াত শুরু হয়ে যায় কৃশানুর। একদিকে আইনজীবী দুই দম্পতি অন্যদিকে ভুয়ো সিবিআই অফিসার কৃশানু মন্ডল, গড়ে ওঠে পারিবারিক সম্পর্ক। সুযোগ বুঝে কৃশানু মন্ডল তাঁদের জানান সিবিআই লোক নিচ্ছে। তাঁরা যদি ইচ্ছুক হন, তাহলে আবেদন করতে পারেন। কিন্তু এর জন্য লাগবে টাকা।
৩ লক্ষ দিয়ে শুরু হয় সিবিআই-তে চাকরি করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। আসতে আসতে বিগত ৫ বছরে সেটি পৌঁছে যায় ৪০ লক্ষে। এর মাঝে অবশ্য কোনও ইন্টারভিউ, পরীক্ষা ছাড়াই অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিমার কার্ড, আইডি কার্ডও চলে আসে তাঁদের কাছে। যা হুবহু আসল সিবিআই অফিসারের কার্ডের নকল। কিন্তু কবে থেকে কাজ শুরু করবেন তা জানাতে পারছিলেন না দম্পতি।
সিজিও কমপ্লেক্সের সামনে থেকেও ফিরে আসেন তাঁরা। যেদিনই জয়েনিং থাকত সেদিনের ঘণ্টা দুয়েক আগে, কৃশানু তাঁদের ফোন করে জানাত পিছিয়ে গিয়েছে জয়েনিং। এরকমই একদিন জয়েনিংয়ের সময় দম্পতি জোর করে পৌঁছে যান সিজিও কমপ্লেক্সে। তখন গেটে তাঁদের দাঁড় করিয়ে সিজিও কমপ্লেক্সের ভিতরে ঢোকেন কৃশানু মন্ডল। তারপর বেরিয়ে এসে বলেন আজও হবে না। এমনভাবে দিনের পর দিন ঠকতে থাকেন দম্পতি। তাঁদের এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে কৃশানু মন্ডল নিয়ে যায় যে তাঁরা ঘুণাক্ষরেও টের পান না।
যখন বেতনের প্রসঙ্গ ওঠে, তখন কৃশানু মন্ডল জানান রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে বাতিল হয়ে গিয়েছে। আইনজীবীদের কাছে মিথ্যের জল গড়িয়ে যায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। এরপরই দৃঢ় হতে থাকে সন্দেহ। বুঝে যান বিরাট প্রতারণার শিকার হয়েছেন তাঁরা। অভিযোগ জানান বরানগর থানায়। নোয়াপাড়া থেকে অভিযুক্ত কৃশানু মন্ডলকে গ্রেফতার করে বরানগর থানার পুলিস। আজ সকালে তাকে বারাকপুর আদালতে পাঠানো হয়।