Kolkata: ‘আমার উচ্ছে সেদ্ধ চাই’, না পেলেই গালিগালাজ মা-মেয়ের, কিড স্ট্রিটের ঘটনায় নতুন তথ্য
হটেলের তরফে জানানো হয়েছে ১৯ তারিখ ১২টা নাগাদ চেক আউট করার কথা ছিল তাদের। সেই অনুযায়ী ১৮ তারিখ থেকেই তাঁদের ফোন করা হচ্ছিল যদিও কেউই ফোন তোলেননি বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এরপর ১৯ তারিখ সকালে ব্রেকফাস্ট নিয়ে যাওয়া হলেও কেউই গেট খোলেননি বলে জানানো হয়। এই ঘটনায় হোটেল কর্তৃপক্ষের সন্দেহ বাড়তে থাকে এবং পুলিসে খবর দেওয়া হয়।
রণয় তেওয়ারি: ‘আমার উচ্ছে সেদ্ধ চাই’, না পেলেই গালিগালাজ মা-মেয়ের। কিড স্ট্রিটের হোটেলের থার্ড ফ্লোরের ৩০৩ নম্বর রুমে উঠেছিলেন পলি মিত্র এবং তাঁর মেয়ে ঈশিতা মিত্র।
হোটেলের রিসেপশনিস্ট জানান, ‘ওনাদের নানান আবদার ছিল। কখনও বলত উচ্ছে সেদ্ধ নিয়ে আসুন। উচ্ছে সেদ্ধ না পেলেই গালিগালাজ করতেন’।
তিনি আরও বলেন, এক মাসের জন্য রুম নিয়েছিলেন দু’জনে এবং ছয় থেকে সাত দিন অন্তর টাকা পেমেন্ট করতেন। এই টাকা কার্ড ব্যবহার করে পেমেন্ট করা হতো বলেও জানানো হয়েছে।
জানা গিয়েছে ওই হোটেলে মোট ১ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা পেমেন্ট করা হয়েছে। ৮ জুন থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত থাকার কথা ছিল তাদের যদিও হোটেল করত্রিপক্ষকে তাঁরা পরে জানান যে আরও ১০ – ১২ দিন থাকবেন।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: মমতা-অভিষেকের বিরুদ্ধে এফআইআর, অনুমতি চেয়ে জনস্বার্থ মামলা আদালতে
হটেলে ওনারা জানিয়েছিলেন, ওদের বাড়িতে কনস্ট্রাকশনের কাজ হচ্ছে। মেয়ে অসুস্থ। ওখানে থাকতে পারছে না। তাই হোটেলে এসেছেন।
হোটেলের তরফে বলা হয়, এই মা মেয়ের ব্যাবহার অত্যন্ত জঘন্য ছিল। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, আমরা পুলিসকে বিষয়েটা আগেই জানিয়েছিলাম। পুলিস এসে কথাও বলেছিল।
তাঁরা আর জনিয়েছিলেন, এই ৩৯ দিনে, একদিনই মাত্র দেখা গিয়েছিল যে একটি ছেলে তাঁর স্ত্রী, এবং তাঁদের সন্তান দেখা করতে এসেছিলেন পলি মিত্র এবং তাঁর মেয়ে ঈশিতা মিত্রর সঙ্গে।
হটেলের তরফে জানানো হয়েছে ১৯ তারিখ ১২টা নাগাদ চেক আউট করার কথা ছিল তাদের। সেই অনুযায়ী ১৮ তারিখ থেকেই তাঁদের ফোন করা হচ্ছিল যদিও কেউই ফোন তোলেননি বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee, 21 July: একুশে জুলাইয়ের আগেই দলীয় কর্মীদের কড়া নির্দেশ অভিষেকের!
এরপর ১৯ তারিখ সকালে ব্রেকফাস্ট নিয়ে যাওয়া হলেও কেউই গেট খোলেননি বলে জানানো হয়। এই ঘটনায় হোটেল কর্তৃপক্ষের সন্দেহ বাড়তে থাকে এবং পুলিসে খবর দেওয়া হয়।
জানা গিয়েছে সন্ধের দিকে পুলিস আসে এবং মা, মেয়ে দুজনকেই বিছানাতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। একই সঙ্গে প্রচুর ওষুধের প্যাকেট পরে থাকতেও দেখা যায় বলে জানা গিয়েছে।
আরও জানানো হয়েছে যে হোটেলে মা, মেয়ে থাকতেন, তার রুম ভাড়া ছিল প্রত্যেকদিন ৪৮০০ টাকা। খাওয়া দাওয়ার খরচা আলাদা। ৮ জুন চেক ইন করেছিলেন। প্রতিদিনের টাকা ঠিক সময়ে দিয়ে দিতেন। ১৯ তারিখ সকালে হোটেল থেকে বেরোনোর কথা ছিল তাদের। ১৮ তারিখ থেকেই ফোন করা শুরু করেন হোটেল কর্তৃপক্ষ।
১৯ তারিখ সকালে ব্রেক ফাস্ট নিয়ে যাওয়া হয়। কেউই গেট খোলেন না। মাস্টার কি দিয়ে গেট খোলা হয়। মা মেয়ে দুজনকেই খাটে পড়ে থাকতে দেখা যায়। একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে, তাতে আর্থিক অনটনের কথা বলা হয়েছে।
হোটেল কর্তৃপক্ষ পুলিসকে জানিয়েছেন, এই মা মেয়ে, হোটেলে ওঠার আগে জানায়, তাদের বাড়ি কনস্ট্রাকশন হচ্ছে। সেই জন্যই তাঁরা হোটেল রুম ভাড়া নিতে চায়। তবে ব্যাবহার অত্যন্ত জঘন্য ছিল। যেহেতু পেমেন্ট প্রত্যেকদিন করে দিতো, তাই আমরাও গেস্ট কে কিছু বলতাম না।
তবে এর আগেও তাদের ওপর সন্দেহ হাওয়ায় পুলিসকে জানানো হয়েছিল।
বুধবার কিড স্ট্রিটের এমিরেটাস নামক হোটেল থেকে অচেতন অবস্থায় মা-মেয়েকে উদ্ধার করে পুলিস। তারপর হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে পুলিসের অনুমান, মা-মেয়ে দুজনেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। দুজনেই ওভার ডোজ ঘুমের ওষুধ খেয়ে নেন। তাতে মায়ের মৃত্যু হলেও, মেয়ে বেঁচে গিয়েছেন। প্রসঙ্গত, হোটেলের ঘর থেকে পাওয়া গিয়েছে একটি সুইসাইড নোট। যা থেকেই জোরালো হচ্ছে আত্মঘাতী হওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু কেন এভাবে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিল মা-মেয়ে? প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গিয়েছে, আদতে হরিদেবপুরের ব্যানার্জি পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন মা ও মেয়ে। স্বামী স্বপন মিত্রর মৃত্যুর পর থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন স্ত্রী পলি মিত্র ও মেয়ে ইশিতা মিত্র। সেইসঙ্গে আর্থিক অনটনও ছিল। যে অবসাদ ও অনটনের কথা সুইসাইড নোটে উল্লেখ করেছেন মা-মেয়ে।