খুশির ইদে পরিবারের কাছে পৌঁছলেন ওঁরা, নেপথ্যে কলকাতার জয়সওয়াল সমাজ

মানিকতলার বাসিন্দা বিকাশ জয়সওয়ালকে হয়তো কখনো দেখেননি ওরা। ১৮০ জন  শ্রমিকের  দায়ভার লকডাউন এ প্রথম দিন থেকে কাঁধে তুলে নিয়েছেন

Reported By: প্রিতম দে | Edited By: শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী | Updated By: May 25, 2020, 11:13 AM IST
খুশির ইদে পরিবারের কাছে পৌঁছলেন ওঁরা, নেপথ্যে কলকাতার জয়সওয়াল সমাজ
নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন: জয়সওয়াল সমাজের উদ্যোগে ইদে বাড়ি ফিরল ইসমাইল ফিরোজের মতো পরিযায়ী শ্রমিকরা। বাড়ি কলকাতা থেকে অনেকটাই দূরে। বিহারের হাজি়পুর। পেটের দায়ে কাজে আসতে হয়েছিল কলকাতায়।  কারও বাড়িতে  ছয় মাসের বাচ্চা কারও স্ত্রী আবার অন্তঃসত্ত্বা। পরিবারের দায়ভার থেকে বাচ্চার মুখের দুধ জোগানও সবটাই ছিল ওদের হাতে। 

মার্চ মাসের ২২ তারিখ হঠাৎ ঘোষণা হয় একদিনের জন্য জনতা কারফিউ। ভাবতে পারিনি তারপরের দিন থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। কেউ কাজ করেন উত্তর কলকাতার ওলিগলি চায়ের দোকানে কেউ বা আবার রাস্তার ধারের অফিসপাড়ার হোটেলে মাজে বাসন। সেই ভোর পাঁচটা থেকে উঠে রাত বারোটা অবধি  চলতো অক্লান্ত পরিশ্রম। ব্যস্ত শহর কলকাতায়  চারিদিকে গাড়ির হর্নের আওয়াজে  সকাল হত ওঁদের। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর রাত্রে একটু সময় কথা হত পরিবারের সঙ্গে। কেউ আবার পেটের তাগিদে স্বামী স্ত্রী মিলে বাচ্চাদের বাড়িতে রেখে এসে কাজ করতেন কলকাতা শহরে। এই ব্যস্ত শহর আজ কাঁদছে তবে তা নিঃশব্দে।

প্রতি নিয়ত পরিবার-পরিজনকে ফোন করে খোঁজ নিয়ে চলেছেন তারা খেতে পারছে কিনা! কী করে জোগাড় করবেন বাড়িতে ফেলে আসা বাচ্চা দুধ, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী এর ওষুধ। কারণ বন্ধ রুজি রোজগার। আশ্রয় অন্যের ঠিকানায়। নিজের অন্ন সংস্থানের অন্যের ভরসায়। অজানা কেউ  তুলে নিয়ে গিয়ে থাকতে দিয়েছে কোন এক অচেনা জায়গায় । এই ভাবেই দিন কেটেছে লকডাউন এর প্রথম দিন থেকে।

মানিকতলার বাসিন্দা বিকাশ জয়সওয়ালকে হয়তো কখনো দেখেননি ওরা। ১৮০ জন  শ্রমিকের  দায়ভার লকডাউন এ প্রথম দিন থেকে কাঁধে তুলে নিয়েছেন। দু’বেলা নিজের সামর্থ্য মত খাইয়েছেন। জয়সওয়াল সমাজ কমিউনিটি কিচেন করে। তার দৌলতে বাড়ি ফেরার ইচ্ছা প্রকাশও করেন প্রায় ১৮০ জন। অনেকবার চেষ্টা করেন বিহারে যাওয়ার। সম্ভব হয়নি৷ বারবার বলা হয় সরকারি নিয়ম মেনে আবেদন করতে। কিন্তু সেটা কিভাবে করতে হতো সেটা ওদের জানা ছিল না৷ অত ইংরেজি জানতেন না তাঁরা। জানতেন শুধুমাত্র বাড়ির ঠিকানা। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিহার পাঠানো লকডাউনের মধ্যে খুব সোজা বিষয় নয়।

আরও পড়ুন- সিকিম আলাদা দেশ! বিজ্ঞাপনের লেখা ঘিরে তোলপাড় দিল্লি

তারমধ্যেই ওদের সবাই কর্মহীন হয়ে যান লকডাউনে। সেই সব চিন্তা ছেড়ে বিকাশবাবু শুরু করেন সরকারি নিয়ম মেনে বাড়ি যাবার ব্যবস্থা৷ যারা চেয়েছিলেন বাড়ি যেতে, তাদের নাম ও লিখে নেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী ত্রিশ জনের বেশি একটি বাসে যেতে পারবেন না। অনেক চেষ্টা করে হাতে আসে ছাড়পত্র। ধর্মতলায় একটি বাসে ত্রিশ জনকে থার্মাল স্ক্যান করে বাসে তুলে দেন বিকাশ জয়সওয়াল। ওদের মুখে বাড়ি ফেরার একরাশ হাসি থাকলেও উদ্যোক্তার মন খারাপ ছিল৷ তিনি জানিয়েছেন যে, অনেকদিন এদের সঙ্গে অনেক সময় কাটানো গেল, খুব ভাল লাগছে। খুশির ইদের ঝলক তার মুখেও।

.