পরিবর্তনের ২৬ মাস, কোপে ৬ উপচার্য

ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষাঙ্গনকে দলতন্ত্র-মুক্ত করার কথা বলেছিল রাজ্যের নতুন সরকার। সেই সরকারের আমলে গত আড়াই বছরে ৫ জন উপাচার্য তাঁদের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। দায়িত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন এক সহ-উপাচার্যও। কী এমন ঘটল যে রাজ্যের শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, বর্তমান সরকারের আমলে স্বাধীনভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো যাচ্ছে না?

Updated By: Oct 22, 2013, 08:14 PM IST

ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষাঙ্গনকে দলতন্ত্র-মুক্ত করার কথা বলেছিল রাজ্যের নতুন সরকার। সেই সরকারের আমলে গত আড়াই বছরে ৫ জন উপাচার্য তাঁদের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। দায়িত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন এক সহ-উপাচার্যও। কী এমন ঘটল যে রাজ্যের শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, বর্তমান সরকারের আমলে স্বাধীনভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো যাচ্ছে না?
১. অমিতা চট্টোপাধ্যায়: রাজ্যে পালাবদলের সময় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে কর্মরত ছিলেন অমিতা চট্টোপাধ্যায়। বিভিন্ন বিষয়ে সরকারি হস্তক্ষেপ মানতে পারেননি তিনি। সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্য বাড়তে থাকায় অমিতা চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, মেয়াদ শেষের পর নতুন করে আর প্রেসিডেন্সির দায়িত্ব নিতে চান না তিনি।
২. সুব্রত পাল: মেয়াদ শেষের আগেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ থেকে সরে দাঁড়ান সুব্রত পাল। রাজ্যপালকে চিঠি লিখে তিনি জানিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজের পরিবেশ নেই। একজন শিক্ষাবিদ হিসাবে তিনি কাজ করতে পারছেন না।
৩. গোপা দত্ত: রাজ্যে পালাবদলের সময় গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন গোপা দত্ত। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়ান তিনি। যদিও, বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, ক্ষমতাসীন দলের নানা অন্যায় আবদার মেটাতে না পেরেই পদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
৪. অচিন্ত্য বিশ্বাস: গোপা দত্তের পর গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যর দায়িত্ব নেন অচিন্ত্য বিশ্বাস। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এই অধ্যাপক তখন সরকারের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন। কিন্তু, তিনিও বেশিদিন পদে থাকতে পারেননি। কম্পিউটার কেনার দরপত্র নিয়ে তাঁর সঙ্গে মতপার্থক্য হয় পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীর। শেষপর্যন্ত পদ ছাড়তে বাধ্য হন অচিন্ত্য বিশ্বাস। রাজ্যপালকে পাঠানো পদত্যাগপত্রে অচিন্ত্যবাবু জানান, কোন পরিস্থিতিতে সরে দাঁড়াতে হচ্ছে তাঁকে।
৫. মহাপাত্র: নতুন সরকারের সঙ্গে বিরোধ বেধেছিল রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী সেনগুপ্তর। রাজ্যপালের হস্তক্ষেপে মেয়াদ শেষ করেন তিনি। সহ-উপাচার্য প্রশান্ত কুমার মহাপাত্র জানিয়ে দেন, উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হলে তিনিও আর পদে থাকতে চান না। নিজের মেয়াদ ফুরনোর অনেক আগেই প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় নেন অধ্যাপক মহাপাত্র।
৬. শৌভিক ভট্টাচার্য: এই তালিকায় নবতম সংযোজন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শৌভিক ভট্টাচার্য। দায়িত্ব নেওয়ার চোদ্দো মাসের মধ্যে পদ ছাড়ার কথা জানিয়ে দিলেন তিনি। শিক্ষাঙ্গনে দলতন্ত্রের জন্যই উপাচার্যরা সরে দাঁড়াচ্ছেন বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।
২০১২-র ৫ জানুয়ারি রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের অধ্যক্ষ দিলীপ দে সরকার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের হাতে নিগৃহীত হন। তারপর, আরও তিনবার অধ্যক্ষ বদল হয়েছে এই কলেজে। প্রতিবারই অভিযোগ উঠেছে, শাসকদলের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে কেউই বেশিদিন পদে টিকে থাকতে পারেননি। সরকারের সঙ্গে বিরোধের জেরে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মালবিকা সরকারকেও সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু, মেন্টর গ্রুপের তদ্বির ও রাজ্যপালের হস্তক্ষেপে শেষপর্যন্ত পদে রয়ে যান তিনি।

.