শেফ অফ দ্য উইক: ইন্দ্রনীল মুখার্জি

রাজাবাজার মুখার্জি বাড়ির দুর্গাপুজোর এবার ২৯০ বছর। এই পরিবারের অন্যতম সদস্য ইন্দ্রনীল মুখার্জি।

Updated By: Sep 27, 2012, 10:13 PM IST

রাজাবাজার মুখার্জি বাড়ির দুর্গাপুজোর এবার ২৯০ বছর। এই পরিবারের অন্যতম সদস্য ইন্দ্রনীল মুখার্জি। কথা বললেন প্রমা মিত্রর সঙ্গে।
ইন্দ্রনীলের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন হোঁদলপাড়া চন্দননগরে জমিদার। সেখানেই মা মঙ্গল চণ্ডীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে প্রথম পুজো শুরু করেন তাঁর পূর্বপুরুষেরা। মুখার্জি পরিবারের বংশধর হরিনাথ মুখার্জি ১৭২২ সালে কলকাতায় চলে এসে রাজাবাজার জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই থেকে প্রতিবছরই হয়ে আসছে দুর্গাপুজো।
মুখার্জি বাড়ির বংশধর রমেন্দ্রনাথ মুখার্জির ছেলে, রবীন্দ্রনাথ মুখার্জির সন্তান ইন্দ্রনীল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এই প্রজন্মে বাড়ির একমাত্র ছেলে হওয়ার দরুণ পুজোর হেঁসেলের সমস্ত দায়িত্বই সামলাতে হয় তাঁকে। ১২ বছর আগে উপনয়নের পর থেকেই পুজোর হেঁসেল সামলাচ্ছেন ইন্দ্রনীল। ভোগ রান্নার সময় তাঁর পূর্বপুরুষদের শতাব্দী প্রাচীন রেসিপিই অনুসরণ করা হয়ে বলে জানালেন গর্বিত ইন্দ্রনীল।
প্রতিপদ থেকে শুরু হয় মায়ের ভোগ। এদিন ভোগে থাকে আখনি পোলাও, পাঁচরকম ভাজা, ফুলকপির রোস্ট, পাঁপড়, গোলাপচাঁদ পায়েস, মিষ্টি, দই, রাবরি, রসমালাই ও পান। প্রতিপদ থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত চলে নিরামিষ ভোগ। সপ্তমীর সকালে কলাবউ স্নানের পর থেকে শুরু হয় আমিষ ভোগ। প্রতিদিন থাকে ৩ রকমের মাছ। গোটা মাছের লেজা এবং মুড়ো মাকে দেওয়া হয়। ফুলকপি দিয়ে ভেটকি মাছ, ইলিশ মাছ, মালাইকাড়ি, মাছের ঝাল, নারকেল দম দিয়ে মাছ একেক দিন একেক রকম রান্না তুলে দেওয়া হয় মায়ের পাতে। কলকাতার নামীদামী দোকান থেকে আসে ক্ষীরকদম, আম দই, চকোলেট রাবরি। মুখার্জি বাড়ির একেবারে নিজস্ব কিছু রেসিপির মধ্যে থেকে বিখ্যাত গোলাপচাঁদ পায়েসের রেসিপি ইন্দ্রনীল ভাগ করে নিলেন ২৪ ঘণ্টার পাঠকদের সঙ্গে।

গোলাপচাঁদ পায়েস
আগে নবাবদের ঘর থেকে বাবুর্চি নিয়ে এসে বানানো হতো এই পায়েস। এখন ইন্দ্রনীলের তত্ত্বাবধানেই পাক ধরে পায়েসে।
কী কী লাগবে
দুধ:- ১ লিটার
গোবিন্দভোগ বা কামিনীভোগ চাল:- ৫০০ গ্রাম
শুকনো গোলাপ পাঁপড়ি:- ২০০ গ্রাম
দারচিনি:- ২টো বড়
এলাচ:- ২ থেকে ৪টে
লবঙ্গ:- ২ থেকে ৪টে
তেজপাতা:- ২টো বড়
জায়ফল
জয়িত্রী
ঘি:- ৭৫ থেকে ১০০ গ্রাম
চিনি:- পরিমান মতো
গোলাপ জল
মধু সামান্য
বড় গোটা কাজুবাদাম
লম্বা কিসমিস
কুচো আখরোট
পেস্তা মাঝখান থেকে ফালি করা
কেসর:- ১চিমটে
রুপোর তবক
এক টুকরো সাদা কাপড়
পায়েস জমানোর জন্য
একটা গোলপচাঁদ বাটি (চাঁদের আকারের বাটি। পাথরের হলে ভালো)
অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ১টা
কীভাবে বানাবেন

দুধ কম আঁচে ফুটিয়ে ঘন করে নিন। ঘন দুধে কয়েকটা শুকনো গোলাপ পাঁপড়ি ছড়িয়ে দিন। দুধ আর গোলাপ পাঁপড়ি একসঙ্গে ফুটে গোলপি হয়ে এলে একটা সাদা নরম কাপড়ের মধ্যে অল্প থেঁতো করা গরম মশলা, এক চিমটে জায়ফল গুঁড়ো, এক চিমটে জয়িত্রী, দু-একটা গোলাপ পাঁপড়ি দিয়ে ভালো করে কাপড়ের মুখ বেঁধে দুধের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। মশলা দেওয়ার ২-৩ মিনিটের মধ্যেই চাল দিয়ে দিন। চাল সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত কম আঁচে ভালো করে ফোটাতে থাকুন। চাল সিদ্ধ হয়ে গাঢ় গোলপি রঙ ধরে এলেই চিনি দিয়ে দিন। ঘি দিয়ে আঁচ বাড়িয়ে দিন। কাজুবাদাম, কিসমিস, আখরোট, পেস্তা দিয়ে আবার আঁচ কমিয়ে দিন। দুধ থেকে ক্রিম ছাড়তে থাকলে গোলাপজল ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।
এবারে গোলাপচাঁদ বাটিতে পায়েস ঢেলে কাজুবাদাম, কিসমিস, আখরোট, পেস্তা, রুপোর তবক দিয়ে গার্নিশ করে এক চিমটে কেসর ছড়িয়ে দিন। অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে বাটি ঢেকে পায়েস জমিয়ে নিন। মনে রাখবেন ঢেকে না দিলে কিন্তু পায়েসের সুবাস উড়ে যাবে। আর স্বাদের পাশাপাশি সুন্দর গন্ধই হল এর সুখ্যাতির অন্যতম কারণ।

.