পোষাকে ঢালুন একটু রং: সায়ন্তন সরকার

পুজো চলে যেতেই শিরশিরে ভাব। হেমন্তের আমেজ গায়ে মাখলেও শীতবুড়োর আগমনী বার্তায় কাবু হয়ে পড়ছে প্রায় সকলেই। শীতের মোকবিলা করতে গেলেই স্টাইল উধাও। কীভাবে ফ্যাশনে থেকেও শিরশিরানিকে বশ করা যায় সেই উপায়ই বাতলে দিলেন ডিজাইনার সায়ন্তন সরকার।

Updated By: Nov 2, 2012, 07:15 PM IST

পুজো চলে যেতেই শিরশিরে ভাব। হেমন্তের আমেজ গায়ে মাখলেও শীতবুড়োর আগমনী বার্তায় কাবু হয়ে পড়ছে প্রায় সকলেই। শীতের মোকবিলা করতে গেলেই স্টাইল উধাও। কীভাবে ফ্যাশনে থেকেও শিরশিরানিকে বশ করা যায় সেই উপায়ই বাতলে দিলেন ডিজাইনার সায়ন্তন সরকার কথা বলেছেন প্রমা মিত্র। কী ধরণের ফ্যাশন করলে স্টাইল, কমফর্ট দুটোই বজায় থাকবে?
আজকের সময়ে সবথেকে ইন্টেরেস্টিং কনসেপ্ট লেয়ারড ড্রেস। আগে আমরা শীতকাল মানেই সোয়েটার আর গরম কাল মানেই টি-শার্ট ভাবতাম। এখন বিভিন্ন রকম পোষাক এসে গেছে। পুরুষদের জন্য সামার শার্টস, সামার জ্যাকেট এসে গেছে। মহিলাদের জন্য আমার বেশ কিছু কালেকশন আছে যেখানে একটা ড্রেস, তারওপর একটা ফ্লোই জ্যাকেট রয়েছে। এই ধরণের পোষাক এখনকার সময়ের জন্য খুব ভাল। যেই কনসেপ্টগুলো এখন আমরা আনছি সেগুলো হল ভিতরে ফিটেড কোনও পোশাক, উপরে লিনেন বা জর্জেটের ফ্লোই জ্যাকেট। শীতকাল লোকে উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরতে পছন্দ করে। সেগুলো মাথায় রেখে আমরা ডিজাইন করছি।
কোন ধরণের ফ্যাব্রিকস এখনকার জন্য ভাল?
লেয়ারড পোষাকের ক্ষেত্রে ফ্যাব্রিক খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে আমরা লিনেন খুব ব্যবহার করছি। ধরুন আপনি টি-শার্টের ওপর লিনেনের সামার জ্যাকেট পরে নিতে পারেন। বা লিনেন শার্টের ওপর একটা সিল্ক ব্লেন্ডেড হালকা স্মার্ট স্লিভলেস বন্ধগলা পরে নেওয়া যায়। আর মহিলাদের জন্য জর্জেটের, লিনেন পোষাক খুব বানাচ্ছি এখন। এছাড়াও খাদি, মটকা, খাদি কটনও বানানো হচ্ছে।
এগুলো কি সবরকম পোষাকের সঙ্গেই পরা যায়?

আমরা যেসব জ্যাকেট বানাই মানে জর্জেট, লাইক্রা বা লাইক্রা সাটিন আথবা নেটেড জ্যাকেট এগুলো মূলত ড্রেপ জ্যাকেট। যেকোনওরকম পোষাকের সঙ্গেই এগুলো পরা যায়। এগুলো ডেমিনের সঙ্গে আপনি যেরকম পরতে পারবেন, আবার ব্রিচেস, ধোতি প্যান্টসের ওপর পরা যায়। যেরকম খুশি পোষাকের সঙ্গেই এই জ্যাকেটগুলো খুব ভালভাবে পরা যায়।
ছোটখাট অনুষ্ঠান তো এইসময় লেগেই থাকে। শাড়ি পরতে চাইলে কীভাবে স্টাইলিং করা যায়?
শাড়িতে মূলত ট্রাডিশনাল ফ্যাব্রিকসই সবসময় ভাল লাগে। খদ্দর, কটন, ঢাকাই, টাঙ্গাইল, মাহেশ্বরী এগুলো সবসময়ের জন্য খুব ভাল। মাহেশ্বরীর মধ্যে একটু ব্রাইটার কালার নিয়ে বর্ডারগুলো একটু চেঞ্জ করে দিলে খুব সুন্দর লাগে। তারপর হালকা বেনারসি, যেটাকে বলে রেশম অন বেনারসি সেগুলো খুব ইন এই সিজনে।
কিন্তু শাড়ির সঙ্গে তো জ্যাকেট পরা যায় না...
এখন ব্লাউজের মধ্যেই অনেকরকম স্টাইল করা যায়। যেমন বন্ধগলা ব্লাউজ হতে পারে। লং জ্যাকেট ব্লাউজ হতে পারে। সেখানেও একটা লেয়ারড লুক থাকবে। এছাড়াও নেহরু গলা ব্লাউজ, এয়ারহোস্টেস ব্লাউজ পরা যায়। যেগুলোকে আমরা পিরিয়ড ব্লাউজ বলি, মানে ধরো এলার চার অধ্যায়ে পাওলি দাম যেরকম ব্লাউজ পরেছিল সেই স্টাইলটা এই আবহাওয়ায় খুব ভাল যাবে।

স্কার্ফস বা স্টোলস কেমন চলছে এবার?
স্কার্ফস বা স্টোল যেকোনও পোষাকের সঙ্গে খুব গুরুত্বপূর্ণ অ্যাক্সেসরি হতে পারে। ধরুন আপনি চারটের সময় বেরোচ্ছেন, সন্ধে আটটার সময়ে ফিরবেন। একটা স্কার্ফ বা স্টোল ক্যারি করা সবথেকে ভাল। আর যদি আমাদের দিক দিয়ে মানে ডিজাইনারদের দিক দিয়ে ভাবি, তাহলে ধরুন একটা বেসিক ড্রেস বানাবো কালো বা ছাই রঙের। তার সঙ্গে যদি লাইট পিঙ্ক শিফন, জর্জেট বা সিল্ক স্কার্ফ বানাই তাহলে একটা নতুন স্টাইলও তৈরি হবে আবার ড্রেসে কিছুটা রঙও ঢেলে দেওয়া যায়।
এই ঋতুর জন্য কোন ধরণের কালারগুলোর ওপর আপনি বেশি জোর দেবেন?
যেটাকে আমারা ফল উইন্টার কালেকশন বলি সেটা সাধারণত একটু মিউট কালারে হয়। যেরকম বেজ, হোয়াইট, ব্ল্যাক, গ্রে এগুলোই থাকে। কিন্তু ভারতে শীতকালে রঙচঙে পোষাক পরারই রীতি। যেই রংগুলো সবথেকে ভাল চলছে সেগুলো হল কোরাল রেড, ব্রিক রেড, রাস্টিক অরেঞ্জ, ক্যানারি ইয়েলো আর ইলেকট্রিক ব্লু। এই রংগুলো পুরো পোষাকটাই বদলে দেয়। ধরুন একটা সিম্পল সাদা বা কালো রঙের শাড়িতে একটা ব্রাইট কোরাল রেড বর্ডার দিয়ে দিলে পুরো শাড়িটাই দেখতে অন্যরকম হয়ে যাবে।
পার্টি ওয়্যারে একটু খোলামেলা পোষাক, ককটেল ড্রেস পরতে ইচ্ছা হচ্ছে। কিন্তু আবার ঠান্ডাও লাগছে। কীভাবে ড্রেসটা টিমআপ করলে স্টাইলও হবে আবার ঠান্ডাও লাগবে না?

অনেকরকম ভাবে স্টাইল করা যায়। শ্রাগস ব্যবহার করা যায়। বিভিন্ন রকমের স্টকিংস আর লেগিংস এখন সারা ওয়ার্ল্ডে রমরমিয়ে চলছে। ভারতেই আমরা এখনও সলিড কালার লেগিংস বা স্টকিংসে আটকে আছি। সারা বিশ্বে নেটেড লেগিংস বা নেটেড স্টকিংস দারুনভাবে চলছে। এছাড়াও ড্রেসের সঙ্গে বেসিক জ্যাকেটসতো রয়েছেই। সেখানে ইন্দো-ওয়েস্টার্ন ফিউশনও করা যায়। ব্রিচেস, ট্রাউজারসও পরা যায়। স্ট্রেট ড্রেস উইথ সিগরেট প্যান্ট অ্যান্ড ফ্লোই জ্যাকেট আমি প্রচুর বানিয়েছি। এগুলো খুব ভাল পার্টিওয়্যার।
এখন পার্টিতে যেতে গেলেই সবাই খুব আনারকলি বেছে নিচ্ছে। সেটাকে কীভাবে টিম আপ করা যায়?

প্রত্যেকটা ফ্যাশনেরই একটা সাইকেল থাকে। আনারকলি অনেকদিন ধরে ফ্যাশনে ছিল, এখন ওটা যাওয়ার সময়। আনারকলি কাটটা থাকবে কিন্তু পোষাকটার অনেক মডিফিকেশন হয়ে যাবে। আমার কিছুদিন আগে একটা আনারকলি কালেকশন ছিল। যেখানে একটা ব্ল্যাক সলিড কালার আনারকলির সঙ্গে রেড বর্ডার, একটা খুব হেভি মটকার স্টোল অথবা পশমিনা স্টোল যেটা দুপাট্টা হিসেবে ব্যবহার হবে। এই পোষাকটা এখনকার আবহাওয়ায় খুব ভাল যাবে।
এই সময়ে হঠাত ওয়েদার চেঞ্জে একটু ফুট প্রবলেম হয় অনেকেরই। কী ধরণের মোজা বা স্টকিংস ব্যবহার করলে ভাল লাগবে?
ক্যাজুয়াল ওয়্যারের সঙ্গে আমরা যে স্লিপারস পরি তার সঙ্গে শকিং কালার মোজা খুব ভাল যায়। শকিং কালারের মোজা একটা দারুন ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। ফ্লোটাসের সঙ্গে এইরকম মোজা খুব ভাল লাগে। কিন্তু ফর্মাল ড্রেসের সঙ্গে মোজা দিয়ে টিম আপ করা ডিফিকাল্ট হয়ে যায়। তখন যতটা সম্ভব পা ঢাকা জুতো পরা যায় ততটাই ভাল।

.