Holika Dahan 2022: মনের অন্ধকার ধুয়ে দিয়ে বয়ে যাক শুভশক্তির অগ্নিবন্যা
অশুভ শক্তির চেয়ে ভক্তির শক্তি বেশি-- এই বার্তাই লুকিয়ে থাকে এই আগুনে-উৎসবের মধ্য়ে। অগ্নিসংস্কারের মধ্যে দিয়ে ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা সরিয়ে আগামি দিনে এক পরিচ্ছন্ন শুদ্ধ বলয়ে প্রবেশ।
সৌমিত্র সেন
ব্যর্থপ্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলার লগ্ন সব সময়ে আসে না। কিন্তু হোলি সেই লগ্ন এনে দেয়। হোলির লগ্নেই আসে হোলিকা দহনের লগ্নও। অশুভ শক্তির চেয়ে ভক্তির শক্তি বেশি-- এই বার্তাই লুকিয়ে থাকে এই আগুনে-উৎসবের মধ্য়ে।
পঞ্জিকা অনুযায়ী ফাল্গুন মাসের শুক্ল পক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে দোল উৎসব পালিত হয়। এ বছরও হচ্ছে ১৮ মার্চ। আর হোলিকা দহন ১৭ মার্চ, ২০২২ বৃহস্পতিবার। হোলিকা দহনের শুভ সময় এ বছরে রাত ০৯:২০ থেকে ১০:৩১ পর্যন্ত।
হোলিকা দহন আদতে এক বহ্নি-উৎসব। একে 'নেড়াপোড়া' বা 'মেড়াপোড়া'ও বলে। দোলের আগের দিন সন্ধেয় এই অগ্ন্যুৎসব হয়। কেন দোলের আগের সন্ধেই হোলিকা দহন হয়?
পুরাণে এর কাহিনি আছে। স্কন্দপুরাণ গ্রন্থের ফাল্গুনমাহাত্ম্য অংশে হোলিকা ও প্রহ্লাদের উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে। হোলিকা হিরণ্যকশিপুর বোন। ব্রহ্মার বরে হিরণ্যকশিপু দেব-মানবজয়ী হয়ে দেবতাদের অবজ্ঞা করতে শুরু করলেন। এদিকে প্রহ্লাদ অসুরবংশে জন্মেও পরম ধার্মিক ছিলেন। তাই তাঁকে বিভিন্নভাবে হত্যার চেষ্টা চলছিল। কিন্তু বিষ্ণুর আশীর্বাদে তা করা যাচ্ছিল না।
তখন হিরণ্যকিশপুর বোন হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুনে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন। কারণ হোলিকা বর পেয়েছিলেন যে, আগুনে তাঁর কোনও ক্ষতি হবে না। কিন্তু অন্যায়কর্মে শক্তি প্রয়োগ করায় হোলিকার অলৌকিক ক্ষমতা খর্ব হয়। ফলে তিনি প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে প্রবেশ করলে বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদ অগ্নিকুণ্ডে থেকেও অক্ষত থেকে যান আর হোলিকা পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যান।
অন্য একটি মতও প্রচলিত। দৈত্যকুলে জন্ম হলেও হোলিকা নাকি সৎ ও নীতিবোধসম্পন্ন এক নারীই ছিলেন। দাদা হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে আগুনে পোড়ানোর চেষ্টা করছেন শুনে তিনি প্রহ্লাদকে বাঁচাতেই চেয়েছিলেন। ব্রহ্মার বরে তাঁর ছিল অগ্নিনিরোধক পোশাক। তাঁকে আগুনে পোড়ানো সম্ভব ছিল না। তাই তিনি ঠিক করেছিলেন, প্রহ্লাদকে নিয়ে তিনি আগুনের ভিতর প্রবেশ করবেন এবং যথাসময়ে তাঁর পোশাক প্রহ্লাদকে দিয়ে বরং নিজে আগুনে পুড়ে আত্মত্যাগ করবেন। সেটাই তিনি করেছিলেন। হিরণ্যকশিপুকে তিনি তাঁর আসল অভিপ্রায় বুঝতে দেননি।
যা-ই ঘটুক অনুমান, ঘটনাটি ঘটেছিল ফাল্গুন মাসের শুক্ল পক্ষের পূর্ণিমার আগের দিন। সেই থেকেই এটা চলে আসছে। এবং এই হোলিকা দহন থেকেই নাকি পরবর্তী কালে 'হোলি' কথাটির উৎপত্তি বলে মনে করেন কেউ কেউ।
দোলের আগের দিন সন্ধেবেলায় পশ্চিমবঙ্গে নেড়াপোড়া বা মেড়াপোড়া হয়। হয় উত্তর ও পশ্চিম ভারতে। হোলিকা দহনের পরের দিন হোলি তথা দোল উৎসব। অসতের উপর সততার জয়, অশুভের উপর শুভের জয়ের প্রতীক হোলিকা দহন। পুরাণের সেই ঘটনার অনুষঙ্গ আজও বয়ে আসছে।
তবে একালে মানুষ এতটা শাস্ত্রীয় আঙ্গিকে হয়তো আর দেখেন না দহন উৎসবকে, তাঁরা এটিকে নিছক এক অগ্ন্যুৎসব হিসেবেই দেখেন। এদিন তাঁরা অনেক বাতিল জিনিসপত্র এই আগুনে বিসর্জন করেন। দেখতে গেলে এটাও এক ধরনের সংস্কার। অগ্নিসংস্কার। আর এই অগ্নিসংস্কারের মধ্যে দিয়েই ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা সরিয়ে দিয়ে আগামি দিনে এক পরিচ্ছন্ন শুদ্ধ বলয়ে প্রবেশ করা। তাই-বা মন্দ কী!
আরও পড়ুন: Dol Purnima 2022: রঙে-রসে জাল বোনার এক রঙ-রঙিন তিথি! মুগ্ধ বর্ণময়তার স্নিগ্ধ প্লাবন