কিং লিয়র থেকে অপু-- সিঙ্গল ফাদারের নানা বর্ণ ও অভিঘাত
সিঙ্গল ফাদার ভাবলে To Kill a Mockingbird উপন্যাসের Atticus Finch চরিত্রটি যেন এক Model Father হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়ে যান।
সৌমিত্র সেন
বিভূতিভূষণের অপুই কি বাঙালির অন্যতম দীপিত 'সিঙ্গল ফাদার' নন? স্ত্রী অপর্ণার মৃত্যুর পর যদিও সে শিশুপুত্রকে নিজের কাছে এনে রাখেনি, তবে, শেষবারের মতো একবার শ্বশুরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ছেলেক কাছ থেকে দেখে প্রাথমিক অস্বস্তি কাটিয়ে বাত্সল্যরসে আপাদমাথা ভেসে যায় সে। নিজের চালচুলোহীন জীবনেই সে বড় আপন করে টেনে নেয় তার ছোট্ট ছেলেটিকে।
আজ, ২০ জুন, Father's Day। সেই উপলক্ষ্যে আলাদা করে 'সিঙ্গল ফাদার'দের নিয়েও ভাবনার বৃত্ত প্রসারিত হওয়া স্বাভাবিক। কেননা, বাবাদের নিয়ে সাধারণত সন্তানদের নানা দ্বিধা, ভয়, জড়তা, দূরত্ব, জটিলতা কাজ করে। সেই সব বিপত্তি অতিক্রম করে বাবারা তাঁদের সন্তানদের কাছে কী ভাবে প্রতিভাত হন আর উল্টো দিক থেকে সন্তানরাই-বা কীভাবে বাবাদের এই জেসচারে দ্যোতিত হয়, সেটা একটা বড় আগ্রহের জায়গা।
আরও পড়ুন: World Refugee Day 2021: 'দাদা, আমি বাঁচতে চাই' যেন আজও তীব্র সুরে ধ্বনিত হয়
বাবা বললেই কি অনেকের মনে King Lear এর কথা ওঠে না? Shakespeare-এর এই মহত্তম নাটকে তিন মেয়ের সঙ্গে বাবার রসায়নের, জটিলতার নানা ইতিবৃত্ত খুলে গিয়েছে পরতে পরতে। নানা বোকামির প্রান্ত ছুঁয়ে ছুঁয়ে লিয়ার শেষে এক প্রগাঢ় উন্মত্ততার দিকে চলে যায়। করুণ পরিণতি।
সাহিত্যক্ষেত্রে বাবা বললেই Pride and Prejudice-এর Mr Bennet-র কথাও ওঠে। বাবা হিসেবে খুবই ভাল এই বেনেট। মেয়েকে পাগলের মতো ভালবাসে। এবং মেয়ের ভাললাগা-মন্দলাগা নিয়ে যথেষ্ট প্রাণিত।
কিন্তু আলাদা করে সিঙ্গল ফাদার ভাবলে To Kill a Mockingbird উপন্যাসের Atticus Finch চরিত্রটি যেন এক Model Father হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়ে যান। সন্তান তার বাবার মধ্যে ঠিক যে যে গুণগুলি প্রত্যাশা করে ফিনচের মধ্যে তার সবই ছিল-- খুব কেয়ারিং, নৈতিকতা দৃঢ়, সাহসী এবং মানবিক।
University of Toronto-র কয়েক বছর আগে করা একটি সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, বিশ্বের প্রায় আড়াই কোটি শিশু সিঙ্গল পেরেন্টিংয়ে বেড়ে ওঠে। শতাংশের হিসেবে যা ১৪%। এর ৪% সিঙ্গল ফাদার শুধু আমেরিকাতেই। ভারতে সিঙ্গল পেরেন্টের সংখ্যাটা ঠিক সমীক্ষাকৃত নয়। তা আমেরিকার মতো এত বেশি না হলে নেহাত কমও নয়। মোট কথা, আধুনিক ভারতীয় সমাজব্যবস্থাতেও ধীরে ধীরে মান্যতা পাচ্ছে সিঙ্গল ফাদারহুড।
বাংলায় একটা পাখি পাওয়া যায়, ময়ূরের মতো পেখম না মেললেও যাদের 'জলময়ূর' বলে ডাকা হয়। এই পাখি সঙ্গিনী ছাড়াই সন্তান পালন করে। পাখিদের রাজ্যের এই পুরুষ পাখিটিকে স্ত্রী-পাখিটি ডিম দিয়েই ছেড়ে চলে যায়। তার পরই 'সিঙ্গল ফাদার' বনে যায় পুরুষ পাখিটি। ডিমে তা দেওয়া থেকে বাচ্চাদের বড় করা-- সবটাই একার হাতে, থুড়ি একার 'ডানা'য় করে এই পুরুষ জলময়ূর। পাখি বিশেষজ্ঞেরা বলেন, টানা ২৬ দিন এভাবে তা দেওয়ার পরেও সন্তানদের খাওয়ায় সে, আগলে রাখে। যদিও বাচ্চারা চোখ ফুটে একটু বড় হলেই তাদের বাবাকে ছেড়ে চলে যায়।
মানুষের সমাজেও এই জলময়ূর-দশা হয় বইকি বাবা-মায়ের। নানা অভিমুখে হয়। কিন্তু যে-বাবা সেই কোন ছোট্টবেলা থেকে নানা ঘাত-প্রতিঘাত সামলে সন্তানকে একার হাতে বড় করে তোলে, জীবনের উপান্তে যদি সেই সন্তানও তাঁদের ছেড়ে চলে যায়, কী হবে তাঁদের?
সিঙ্গল ফাদার-এর স্মরণদিনে উল্টোদিকের ক্রাইসিসটাকেও চিহ্নিত করা জরুরি। সন্তানের প্রতি বাবার নিষ্ঠুরতার বিপরীতে তা যেন বাবার প্রতি সন্তানের নিষ্ঠুরতার গল্পে পর্যবসিত না হয়! তা হলে সেখানে 'বাড়ি থেকে পালিয়ে'র বাবা, কিং লিয়রের বাবা, 'অপুর সংসারে'র বাবা আর মকিংবার্ডের বাবা-- সব এক জায়গায় মাত্রায় এক নিয়তিতে নিক্ষিপ্ত হন। স্নেহ-প্রেম-মমতার গোটা গল্পটা ঘেঁটে যায়।
(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)
আরও পড়ুন: আসছে ভয়ঙ্কর এক খরা 'অতিমারী', হুঁশিয়ারি রাষ্ট্রপুঞ্জের