উড়োটোন
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
এখনও টুকুন নীরবে তাকিয়ে থাকে ওর মোবাইলটার দিকে। মনে পড়ে যায় কত কথা। টুকুন জানে প্রমিত আর কখনো ওর জীবনে ফিরে আসবেনা তবুও... ফোনটা ধরতে গেলেই বাজতে বাজতে থেমে যায়। ঐ উড়ো নাম্বারে ফোন করলেই ওপাশ থেকে বলে.... দিস নাম্বার ইজ নট ভ্যালিড।
এই হ্যান্ডসেটটা টুকুনকে গিফট করেছিল প্রমিত। তার সংগে জীবনের সব ভাঙা-গড়ারগল্প, জীবনের ক্রিয়া, বিক্রিয়া, টানাপোড়েন সব শেষ হয়ে গেলেও এই ফোন ছিল একদম শেষ যোগসূত্র। । এরপর অনেকদিন কেটেছে। ভুলতে পারেনি তাই ফোনটাও রয়ে গেছে । কিন্তু রোজ দুপুরে এখনও ঠিক একই সময়ে বেজে ওঠে ঝনঝন করে। মনখারাপের সুরগুলো
রিনরিন করে বুকের মধ্যে। অনুভূতিগুলো আছড়ে পরে দুপুরের চৌকাঠে। ওপাশ থেকে কে যেন বলে ওঠে, 'ফোনটা ধর একটিবার।'
টুকুন আর প্রমিত এক নামকরা মিশনারী বয়েজ স্কুলের ছোটবেলাকার বন্ধু । তার পরেই বন্ধুত্ব ও ঘনিষ্ঠতা....সহপাঠী থেকে নিজেদের শরীরকে জানার ও বোঝার চেষ্টায় কাছকাছি আসা ওদের। কিন্তু ওদের বুঝল না কেউ। বুঝতে দিল না ওদের গঠন। ওদের চালচলন। টুকুন বেঁচেছিল প্রমিতের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে।
প্রমিত নিজের পকেটমানিতে জমানো টাকা দিয়ে একটা সেলফোন কিনে টুকুনের সাথে সম্পর্কটা টিঁকিয়ে রাখতে চেয়েও পারেনি। সমাজ ও সংসার হেয় করেছিল তাদের সম্পর্ককে। প্রমিত থাকতে না পেরে সোজা ঝাঁফ দিয়েছিল মেট্রোরেলের লাইনে। তারপর টুকুন হয়েছিল মানসিক এক ঘরকুনো। আর সেই থেকে সে জানে, একদিন প্রমিতকে ঠিক মেনে নেবে ওর বাড়ির লোকজন। ঘর বাঁধবে ওরা। ঘর-সংসার হবে ওদের আর পাঁচটা স্বামী-স্ত্রীর মত।