অদম্য সেরেঙ্গেটির টানে...
অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মন যদি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের দিকে ছুটে যেতে চায়, আফ্রিকার সেরেঙ্গেটি ন্যাশনাল পার্ক কিন্তু সেই উড়ুক্কু মনের পূর্ণ রসদের যোগান দেবেই।
অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মন যদি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের দিকে ছুটে যেতে চায়, আফ্রিকার সেরেঙ্গেটি ন্যাশনাল পার্ক কিন্তু সেই উড়ুক্কু মনের পূর্ণ রসদের যোগান দেবেই।
সবুজ গাছের ক্যানোপি ঘেরা আলো আঁধারে মাখা ঘন জঙ্গলের যে কনসেপ্টটা ভারতে থাকার সৌজন্যে আমাদের মনে তৈরি হয়, আফ্রিকার জঙ্গলের সান্নিধ্যে এলে তা এক্কেবারে খানখান হয়ে যায়। আফ্রিকার 'ছাদ' কিলিমাঞ্জারোর কোলে ছোট্ট দেশ তানজানিয়া। আর এই তানজানিয়ার শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ সেরেঙ্গেটি। এই জাতীয় উদ্যানের বিস্তৃত প্রাঙ্গন দিগন্ত ছুঁয়ে থাকা বৃক্ষ হীন ঘাস জমিতে ঢাকা। এই 'ন্যাড়া' জঙ্গলের এই পথ ধরে প্রতি বছর মাইলের পর মাইল পাড়ি দেয় লাখ খানেক সাদা গোঁফের ওয়াইল্ড বিস্টের দল। তাদের এই বিখ্যাত মাইগ্রেশনের সঙ্গী হয় সাদা কালো ডোরার জেব্রা বাহিনী। সেই কবে বন্য জীবনকে সুরক্ষিত করতে এখান থেকে চলে গিয়েছিলেন আদিবাসী মাসাই প্রজাতির মানুষরা। তার পর থেকেই এই অঞ্চল বন্য পশুদের মুক্ত ভূমি।
সেরেঙ্গেটি প্লেন, ওয়েস্টার্ন করিডোর আর নর্দান করিডোর - এই তিনটে অংশে মোটামুটি ভাগ করে নেওয়া যায় এই 'অন্য রকম' বন ভূমিকে। তার মধ্যে সেরেঙ্গেটি প্লেন আসলে এই ন্যাশনাল পার্কের বেশির ভাগ এলাকা দখল করে আছে। প্রাণী সম্পদে অতন্ত্য সমৃদ্ধ সেরেঙ্গেটি প্লেন জাতীয় উদ্যানটির মুখ হিসাবেই বিখ্যাত। ঘাস জমির মাঝে মাঝে সবজে ঘাসে ঢাকা ছোট্ট ছোট্ট পাথুরে টিলা এই জায়গার পর্যটনের ইউএসপি বেশ কিছুটা বাড়িয়ে দেয় বৈকি।
কালো মাটিতে ঢাকা ওয়েস্টার্ন করিডোরের বুক চিড়ে গ্রুমিটি নদীতে ঘর বেঁধে থাকে নাইল কুমীর। এর আসে পাশেই দেখা মেলে কোলাবাস বাঁদর আর মার্শিয়াল ঈগলদের। সেরেঙ্গেটির উত্তর দিক বাকি অংশের থেকে বেশ কিছুটা হট্কে। আয়তনে বেশ ছোট হলেও এই অঞ্চলে বেশ কিছু গাছ পালার দেখা মেলে। ভবঘুরে ওয়াইল্ড বিস্ট আর জেব্রারা ছাড়া এখানে দেখা মেলে লম্বা গলা জিরাফ আর বিশাল দেহী আফ্রিকান হাতিদের।
আফ্রিকার মধ্যে সর্বাধিক সিংহ পরিবারের দেখা মেলে এখানেই। সেরেঙ্গেটি প্লেনে ঘুরতে ঘুরতে দেখা মিলে যেতেই পারে গম্ভীর কালো গন্ডার বা আফ্রিকান বাফেলো দলের। তবে চোরা শিকারিদের দাপটে বিপন্ন গন্ডারদের জীবন। ছোট পাথুরে টিলা গুলোতে ওত পেতে থাকে হিংস্র লেপার্ড, বা পাইথন। এছাড়াও এর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে চিতা, ডিক ডিক, টোপি, হায়না, বেবুন, বুনো কুকুর। পাঁচশোর উপর বিভিন্ন ধরনের পাখিরও দেখা মেলে এখানে। অস্ট্রিচ, কোরি, মুকুট পরা সারস, মারাবউ সারস, লাভ বার্ডস্ আর অনেক রকমের শকুন।
যাওয়ার পথ: সেরেঙ্গেটির নিকটতম বিমান বন্দর কিলিমাঞ্জারো। দিল্লি থেকে বেশ কিছু বেসরকারি বিমান সংস্থার বিমান তানজানিয়া যায়। কলকাতা থেকে প্রথমে ট্রেনে বা বিমানে দিল্লি। সেখান থেকে বিমানে তানজানিয়া। তানজানিয়া থেকে আবার কিলিমাঞ্জারো বিমান বন্দর। এই বিমান বন্দর থেকে আরুসি হয়ে চলে আসতে হয়ে সেরিঙ্গেটি। এখানে জিপ আর বেলুন সাফারির ব্যাবস্থা আছে।
থাকার ঠিকানা: সেরেঙ্গেটি সারা বিশ্বের মানুষের কাছেই অন্যতম প্রিয় ঘোরার জায়েগা। বিদেশ সফরের সাথে মোটা পকেটের সম্পর্কটা বেশ ঘনিষ্ট। ভারত থেকে তানজানিয়ায় দিন আটেকের সফরের জন্য মাথা পিছু খরচ লাখ খানেক। এখানে প্রচুর লগ হাট, সাফারি ক্যাম্প, হোটেলস রয়েছে। এখন বহু পর্যটন সংস্থা কলকাতা থেকেই সেরেঙ্গেটি সহ তানজানিয়া সফরের ব্যবস্থা করে। বিদেশ ঘুরতে যাওয়ার অভ্যাস বিশেষ না থাকলে এদের উপর ভরসা করাই ভালো।