পালানি-পন্নিরের হাতে হাত, সংযুক্ত আম্মার দল
ওয়েব ডেস্ক: হাতে হাত। বিভেদ পিছনে ফেলে এবার একসঙ্গে চলার বার্তা। জুড়ে গেল আম্মার এআইডিএমকে। পালানিস্বামী ও পন্নিরসেলভাম শিবির অবশেষে সংযুক্তির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল। জয়ললিতার মৃত্যুর পরপরই ভিকে শশীকলার দলে ও সরকারে ক্ষমতার শীর্ষে বসার বসনা থেকে যে বিবাদের সূচনা তারই পরিণতি হয়েছিল ভাঙনে। আলাদা দল গড়েছিলেন 'আম্মার পছন্দের' তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী ও পন্নিরসেলভাম। সেই বিচ্ছেদ আজ ঘুচে গেল শশীকলা-দিনাকরণকে কোণঠাসা করার শর্তে। এই ঘোষণার আগের ঘটনাক্রমে পরতে পরতে ছিল নাটক।
সেই নাটক ক্লাইম্যাক্স ছোঁয় আজ সকালে। আম্মার এআইডিএমকের ঐক্যবদ্ধ হওয়া অর্থাত্ পালানি-পন্নির শিবিরের মিলে মিশে এক হয়ে যাওয়া কার্যত সময়ের অপেক্ষা বলা হচ্ছিল বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে। কিন্তু সেই 'সময়ের অপেক্ষা' বাস্তবে কতটা দীর্ঘায়িত হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল দিয়েছিল আজ সকালে ভিকে শশীকলার ভাইপো তথা এআইডিএমকের ডেপুটি জেনারেল সেক্রেটারি টিটিভি দিনাকরণের বেসান্ত নগরের বাসগৃহে দলের ১৭ আইন প্রণেতার অবস্থান। আর তার জেরেই দলের সদর দফতেরে যাওয়ার পূর্বনির্ধারিত সূচি বাতিল করলেন মুখ্যমন্ত্রী ই পালানিস্বামী। সূত্রের খবর অনুযায়ী, পন্নির শিবিরের দাবি মেনে আজ এআইডিএমকের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে ভিকে শশীকলাকে পদচ্যুত করার জন্য লিখিত প্রস্তাব পাস করানোর পরিকল্পনা ছিল পালানির। আপাতত সেই পদক্ষেপ স্থগিত হল।
প্রসঙ্গত, সংযুক্তির প্রশ্নে ও পন্নিরসেলভাম শিবিরের শর্ত মেনে আগেই 'আম্মা' জয়ললিতার মৃত্যু তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পালানিস্বামী এবং জয়ললিতার পোয়েজ গার্ডেনের বাসভবনে সংগ্রহশালা তৈরি করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন তিনি। পন্নিরদের এরপরের দাবি ছিল, দলের শীর্ষ পদ থেকে ভিকে শশীকলা ও দিনাকরণের অপসারণ। জানা যাচ্ছিল সেই প্রস্তাবেও সায় দিয়েছিলেন ক্ষমতাসীন পালানিস্বামী। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ায় বেঁকে বসেছেন শশীকলার প্রতিনিধি দিনাকরণ। একদা 'আম্মা কর্তৃক দল থেকে বিতাড়িত' দিনাকরণ সম্প্রতি জানিয়েছেন, এআইডিএমকে হল একটি বাসের মতো। একসময় পন্নিরসেলভামকে সেই বাস চালানোর জায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন না করায় তাঁকে স্টিয়ারিং থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীকালে চালকের আসনে বসানো হয়েছে পালানিস্বামীকে। এবার তিনিও যদি কর্তব্য ঠিকভাবে পালন না করেন, তাহলে তাঁকে সরানোর কথা ভাবতে হবে। অর্থাত্ ইঙ্গিত স্পষ্ট যে, পিসি-ভাইপোকে অস্তিত্বহীন করে সংযুক্তির যে পথে হাঁটতে চাইছেন পন্নির-পালানি তাতে বাধা দেবেন দিনাকরণ। আজ ১৭ বিধায়ক নিয়ে নিজের বাসভবনে বৈঠক সেই 'পাল্টা চাপেরই' ইঙ্গিত।
উল্লেখ্য, জয়ললিতার মৃত্যুর পর দলের সর্বময় ক্ষমতা হাতে নেন তাঁর বান্ধবী ভিকে শশীকলা। দলের ক্ষমতা পেয়েই মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার পাওয়ার আশায় ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেন তিনি। প্রাথমিকভাবে দলের কোষাধ্যক্ষের পদ থেকে পন্নিরকে সরাতে চাওয়া নিয়ে বিরোধ বাঁধলেও পরবর্তীকালে সার্বিকভাবে অশান্তি শুরু হয় আম্মার নির্বাচিত তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী ও পন্নিরসেলভামের সঙ্গে। আলাদা দল গড়েন পন্নিরসেলভাম। কিন্তু আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি ও দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলে যেতে হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি লাভের স্বপ্ন অধারই থেকে শশীকলার। তখন তিনি 'নির্ভরযোগ্য' ই পালানিস্বামীকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে যান এবং দলের উপর কর্তৃত্ব কায়েম রাখতে নিজের প্রতিনিধি স্বরূপ সহ সাধারণ সম্পাদকের পদে বসিয়ে দেন নিজের ভাইপো টিটিভি দিনাকরণকে।