আরুষি হত্যার সাড়ে পাঁচ বছর পরও রয়ে গেছে অনেক ধোঁয়াশা

প্রত্যক্ষ প্রমাণ নয়। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির বিচারে তলওয়ার দম্পতিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। উত্তরপ্রদেশ পুলিস বা সিবিআই, কেউই তাঁদের বিরুদ্ধে মেয়েকে খুনের প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেশ করতে পারেনি। ফলে, আরুষি হত্যার সাড়ে পাঁচ বছর পরও রয়ে গেছে অনেক ধোঁয়াশা। অনেক অসঙ্গতি।  

Updated By: Nov 26, 2013, 06:31 PM IST

প্রত্যক্ষ প্রমাণ নয়। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির বিচারে তলওয়ার দম্পতিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। উত্তরপ্রদেশ পুলিস বা সিবিআই, কেউই তাঁদের বিরুদ্ধে মেয়েকে খুনের প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেশ করতে পারেনি। ফলে, আরুষি হত্যার সাড়ে পাঁচ বছর পরও রয়ে গেছে অনেক ধোঁয়াশা। অনেক অসঙ্গতি।  

২০০৮-এর ১৬ মে। নয়ডার জলবায়ু বিহারের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ১৪ বছরের স্কুলছাত্রী আরুষি তলওয়ারের মৃতদেহ। পরে, পরিচারক হেমরাজের দেহ পাওয়া যায় বাড়ির ছাদে। হেমরাজকেই খুনি বলে প্রথমে মনে করা হয়েছিল। যদিও, পরে উত্তরপ্রদেশ পুলিস দাবি করে পরিচারকের সঙ্গে মেয়েকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন রাজেশ ও নুপুর তলওয়ার। মেয়ে আরুষি ও পরিচারক হেমরাজকে তাঁরাই খুন করেন। এরপর, তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে।

তলওয়ার দম্পতির পরিচিতদের বাড়িতে কর্মরত তিন পরিচারককে গ্রেফতার করে তারা। যদিও, প্রমাণের অভাবে তিনজনই ছাড়া পেয়ে যান। ২০০৯-এর সেপ্টেম্বরে সিবিআইয়ের অন্য একটি দল তদন্ত শুরু করে। আদালতে সিবিআই দাবি করে, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণ বলছে, তলওয়ার দম্পতিই মেয়ে আরুষি ও পরিচারক হেমরাজকে খুন করেছেন। 
 
সম্মানরক্ষার্থে খুনের তত্ত্ব খাড়া করলেও প্রত্যক্ষ প্রমাণ না থাকায় সিবিআই, তদন্তে দাঁড়ি টানতে চায়। যদিও, তাদের সেই ক্লোজার রিপোর্টকেই চার্জশিট হিসাবে ধরে শুনানি শুরুর নির্দেশ দেয় সিবিআই আদালত। রাজেশ ও নুপুর তলওয়ার এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেলেও সর্বোচ্চ আদালত নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেয়। গত দু`বছর ধরে দীর্ঘ সওয়াল-জবাবের পর মঙ্গলবার, তলওয়ার দম্পতিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় গাজিয়াবাদের সিবিআই আদালত। সিবিআই প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেশ করতে না পারায়, আরুষি হত্যার সাড়ে ৫ বছর পরেও কিন্তু রয়ে গেছে নানা রহস্য। যুক্তি, পাল্টা যুক্তি।
 
সিবিআইয়ের যুক্তি, ঘটনার দিন বাড়িতে ছিলেন তলওয়ার দম্পতি, তাঁদের মেয়ে ও পরিচারক। বাইরে থেকে অন্য কেউ ঘরে না ঢোকায় রাজেশ ও নুপুর তলোয়ারই আরুষি ও হেমরাজকে খুন করেছেন। যদিও, তলওয়ারদের আরেক পরিচারিকা ভারতী দাবি করেন, ফ্ল্যাটের গেট বাইরে থেকে বন্ধ করা ছিল।
 
ঘটনার দিন বাড়িতে আরুষি, হেমরাজ, রাজেশ ও নুপুর তলওয়ারই শুধু ছিলেন বলে সিবিআই দাবি করে। যদিও, ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া মদের বোতলে অন্য পাঁচ জনের আঙুলের ছাপ মিলেছে বলে পাল্টা দাবি করেন অভিযুক্তরা।     
 
সিবিআই দাবি করে, গল্ফ স্টিক দিয়ে আরুষি ও হেমরাজের মাথায় মারা হয়। আদালতে, তলওয়ারদের আইনজীবীর পাল্টা দাবি ছিল, খুনের অস্ত্র হিসাবে গল্ফ স্টিকের তত্ত্ব সত্যি নয়। ঘটনার ১৫ মাস পরে গল্ফ স্টিকের কথা বলে সিবিআই।
 
খুনের রাতেই তলওয়ার দম্পতির বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠলেও আদালতে তাঁরা পাল্টা দাবি করেন, এমন কোনও প্রমাণ সিবিআই দাখিল করতে পারেনি। পুলিসের সামনেই ঘটনাস্থল পরিষ্কার করা হয়।
  
তদন্তের এইসব ধূসর দিককে হাতিয়ার করেই সিবিআই আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এলাহাবাদ হাইকোর্টে যাচ্ছেন দোষী সাব্যস্ত তলওয়ার দম্পতি।  

.