অসমে চিরকালই নির্যাতিত বাঙালি, ফিরে দেখা নৃশংস ইতিহাস
শুধুমাত্র ১৯৬০ সালে প্রায় ৫০ হাজার বাঙালি অসম ছাড়তে বাধ্য হন।
নিজস্ব প্রতিবেদন: নাগরিকপঞ্জি আর নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বিতর্ক। এর মাঝেই ফের অসমে গণ নিধনের শিকার বাঙালিরা। উলফার সন্ত্রাস থেকে নেলির গণহত্যা। স্বাধীনতার পর থেকে বহুবার বাঙাল খেদা। অতীতের অভিজ্ঞতায়, তিনসুকিয়া-কাণ্ডের পর আতঙ্কে অসমের বাঙালিরা।
পাঁচের দশকে অসমে শুরু হয় বাঙাল খেদাও। তারপর আসুর আন্দোলন, উলফার হিংসা থেকে শুরু করে এখন নাগরিকপঞ্জির নামে চরম অনিশ্চয়তা। স্বাধীনতার পর ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে বরাবরই ভয়ে ভয়ে কেটেছে বাঙালির দিন। তিনসুকিয়ায় বাঙালিদের গণনিধন ফের উস্কে দিল আতঙ্ক। জাতীয় নাগরিকপঞ্জি আর নাগরিকত্ব সংশোধন আইন। এই দুটি বিষয়কে সামনে রেখে নতুন করে অশান্ত হতে শুরু করেছে অসম। নাগরিকপঞ্জি থেকে নাম বাদ যাওয়ার আশঙ্কায় অসমে বাঙালি সংগঠনগুলি প্রতিবাদে সামিল। অহমিয়া সংগঠনগুলিও পাল্টা রাস্তায়।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিল পাস হলে বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের আর অসমে থাকতে সমস্যা হবে না। যা নিয়ে গত কয়েকদিনে একাধিকবার হুমকি দেয় পরেশ বড়ুয়ার সংগঠন। পুজোর মুখে গৌহাটির ফ্যান্সিবাজারে বিস্ফোরণ ঘটায় উলফা। রাজনীতির চাপান-উতোর যাই চলুক না কেন, তিরাশির দুঃস্বপ্ন ফিরিয়ে আনার কথা বলে তাদের হুমকি কোনওভাবে ভুলতে পারছেন না বাঙালিরা।
বরাক উপত্যকার কাছাড়, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি। নামনি অসমের ধুবড়ি, বঙ্গাইগাঁও, বরপেটা, গোয়ালপাড়া এবং দারাং, মরিগাঁও, নগাঁওয়ের মতো জেলাগুলিতে বাঙালিরা পঞ্চাশ শতাংশ বা তার বেশি। আর যেসব জেলায় বাঙালিরা সংখ্যালঘু সেখানে বিপদ বেশি বই তো কম নয়। বাঙালিদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, খুন-জখম ও ভিটেমাটি ছাড়ার ব্যবস্থা। স্বাধীনতার পর থেকে একাধিকবার বাঙাল খেদাও আন্দোলন তীব্র হয়েছে অসমে।
শুধুমাত্র ১৯৬০ সালে প্রায় ৫০ হাজার বাঙালি অসম ছাড়তে বাধ্য হন। কটন কলেজ থেকে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনে কামরূপ জেলায় একের পর এক বাঙালিদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। নিহত হন ৯ জন।
১৯৬১-র ১৯শে মে বাংলা ভাষার অধিকার চেয়ে শিলচর স্টেশনে গুলিতে মারা যান ১১ জন বাঙালি।
১৯৭২ সালে অসমিয়া ভাষার দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে অসম ছাড়তে বাধ্য হন প্রায় ২০ হাজার বাঙালি।
১৯৭৯ সালে সার্বভৌম অসমের দাবিতে উলফা তৈরি হওয়ার পর জঙ্গি হানায় নিহত হন বহু বাঙালি।
১৯৮৩-র ১৮ই ফেব্রুয়ারি মরিগাঁওয়ের নেলি-সহ একাধিক গ্রামে গণহত্যায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় দু-হাজার।
অসম শান্ত করতে আসুর সঙ্গে চুক্তি সই করেন রাজীব গান্ধী। সেই চুক্তির সূত্রেই জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরি হচ্ছে। নাম বাদ গেছে চল্লিশ লক্ষ মানুষের। ডি-ক্যাম্পের ভয় আছে, তারওপর তিনসুকিয়ার হত্যালীলা অসমের বাঙালিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন- ধর্মনিরপেক্ষ নয়, হিন্দুরাষ্ট্রের দাবিতে সরব এই দেশের মুসলিমরা