অম্বেদকরের কার্টুন, চিদাম্বরমের ইস্তফার দাবি, ফের উত্তপ্ত সংসদ
ফের বিজেপির নিশানায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। এয়ারসেল-ম্যাক্সিস চুক্তিতে তাঁর ভূমিকা নিয়ে বিজেপির অভিযোগকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দিনের শুরুতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে লোকসভার অধিবেশন। বিতর্কিত এই চুক্তির বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন বিরোধী সাংসদরা।
ফের বিজেপির নিশানায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পালানিয়াপ্পন চিদম্বরম। এয়ারসেল-ম্যাক্সিস চুক্তিতে তাঁর ভূমিকা নিয়ে বিজেপির অভিযোগকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দিনের শুরুতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে লোকসভার অধিবেশন। বিতর্কিত এই চুক্তির বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন বিরোধী সাংসদরা। এর আগে, বৃহস্পতিবারই লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর ছেলের বিবৃতি পাঠ করেন। শুক্রবার অধিবেশনের শুরুতেই এর প্রতিবাদ করেন বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ। এই ইস্যুতে শুক্রবার রাজ্যসভাতেও প্রশ্নোত্তর পর্ব মুলতুবি রাখার দাবি জানিয়ে নোটিস দেয় বিজেপি। পরে এনসিআরটির মুখ্য উপদেষ্টা যোগেন্দ্র যাদব ও সুহাস পালাসিকর পদত্যাক করেন। মানবসম্পদ বিকাশমন্ত্রী কপিল সিবালের কার্টুন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেই এই পদক্ষেপ করেছেন বলে জানিয়েছেন দুজন।
স্পেকট্রাম দুর্নীতিতে পি চিদাম্বরমের ভূমিকা নিয়ে তদন্তের দাবির পাশাপাশি এনসিইআরটি'র পাঠ্যবইয়ে ছাপা বি আর অম্বেদকরের কার্টুন নিয়ে এদিন প্রবল উত্তেজনা ছড়ায় সংসদে। বিএসপি সাংসদরা বিষয়টি নিয়ে প্রবল প্রতিবাদ শুরু করেন। বিক্ষোভের জেরে মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভার অধিবেশন। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী কপিল সিবল পুরো বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা এবং আগামী শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক থেকে বি আর অম্বেদকরের বিতর্কিত কার্টুন বাদ দেওয়ার জন্য এনসিইআরটি'কে নির্দেশ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
২০০৬-এ পি চিদম্বরম কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন দুই টেলিকম সংস্থা এয়ারসেল ও ম্যাক্সিসের মধ্যে চুক্তি সই হয়। বিজেপির অভিযোগ, এই চুক্তির ফলে তত্কালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের ছেলে কার্তি লাভবান হন। গতকালও এই ইস্যুতে দফায় দফায় মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভার অধিবেশন। দুই টেলিকম সংস্থার চুক্তিতে অবৈধভাবে তিনি লাভবান হননি বলে গতকাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে চেন্নাইয়ে বিবৃতি দেন। বস্তুত, ২৬ এপ্রিল জনতা পার্টির সভাপতি সুব্রহ্ম্যণম স্বামীই প্রথম পি চিদাম্বরম ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে, ২০০৬ সালে মোবাইল পরিষেবা সংস্থা এয়ারসেলের সঙ্গে ম্যাক্সিসের চুক্তিতে আর্থিকভাবে উপকৃত হওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন। স্বামীর দাবি, বিদেশি বিনিয়োগ উন্নয়ন পর্ষদের সায় ছাড়া শিবশঙ্করনের মালিকানাধীন এয়ারসেল সংস্থার শেয়ার কিনতে পারতেন না মালয়েশিয়ার সংস্থা ম্যাক্সিসের কর্ণধার, অনাবাসী ভারতীয় ব্যবসায়ী আনন্দকৃষ্ণন। আর এই অনুমতির বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছিলেন তত্কালীন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম। এরপর এয়ারসেলের বেশ কিছু শেয়ার `অসব্রিজ হোল্ডিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস` নামে একটি কোম্পানি কিনে নেয়। যার আর্থিক মূল্য কয়েক`শো কোটি টাকা।
এই `অসব্রিজ হোল্ডিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস` নামক কোম্পানিটির ৯৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক চিদাম্বরমের ছেলে কার্তি। তাত্পর্যপূর্ণভাবে কার্তি-র সংস্থা এয়ারসেল শেয়ার হাতে পাওয়ার পরেই ম্যাক্সিস গোষ্ঠী এয়ারসেলের সিংহভাগ শেয়ার কেনায় অনুমতি পেয়ে যায়। প্রসঙ্গত, এয়ারসেন-ম্যাক্সিস `ডিল` নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে ইতিমধ্যেই ডিএমকে সাংসদ তথা প্রথম ইউপিএ সরকারের টেলিকমমন্ত্রী দয়ানিধি মারানের নামে মামলা করেছে সিবিআই। অভিযোগ, শিবশঙ্করণের উপর চাপ সৃষ্টি করে এয়ারসেলের শেয়ার বিক্রিতে বাধ্য করেছিলেন মারান। ম্যাক্সিসকে শেয়ার বিক্রির আগে টেলি-যোগাযোগ মন্ত্রকের ছাড়পত্র পাওয়া সত্ত্বেও বিভাগীয় মন্ত্রী দয়ানিধি মারানের কাছ থেকে ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয় অনুমতি পাননি শিবশঙ্করন। কিন্তু আনন্দকৃষ্ণনকে স্বত্ব বিক্রির এক মাসের মধ্যেই সেই অনুমতি মিলে যায়। আর এই ঘটনার পরেই মারানের পারিবারিক সংস্থা সান টিভিতে ৫৯৯ কোটি টাকা লগ্নি করেন আনন্দকৃষ্ণন। শিবশঙ্করণ নিজেই এই চাপ তৈরির কথা প্রকাশ্যে আনার পর ২০১১ সালের জুলাই মাসে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের বস্ত্রমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন দয়ানিধি মারান।