CAA: লোকসভা ভোটের আগে বড় পদক্ষেপ মোদী সরকারের, দেশজুড়ে লাগু সিএএ
CAA: ঘোষণার খবর আসতেই এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, আজ যদি সরকার সিএএ করে বলে আপনি দেশের নাগরিক তাহলে এতদিন কি এরা নাগরিক ছিল না?
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: জল্পনা ছিলই। শেষপর্যন্ত দেশজুড়ে লাগু হয়ে গেল সিএএ। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা সিএএ সংসদে পাস হয়ে গিয়েছে অনেকদিন আগেই। কিন্তু চার বছরে পেরিয়ে যাওয়ার পরও তার কোনও বিধি তৈরি হয়নি। এনিয়ে বিরোধীরা বারেবারেই সুর চড়াচ্ছিল। এবার বিধি তৈরি করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিল কেন্দ্র।
আরও পড়ুন- 'CAA-র নামে অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হলে, আন্দোলন প্রতিবাদ হবে'
কী রয়েছে সিএএ আইনে? ওই আইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানে মতো দেশগুলি থেকে মুসলিম ছাড়া অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা যারা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে এসেছেন তারা এদেশের নাগরিকত্ব পাবেন। আজ প্রকাশ করা হচ্ছে সেই আইনের বিধি। সিএএ-র বিধির প্রকাশের খবরের পরই নবান্নে একটি জরুরি বৈঠকে ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, তিনি বলেন কারও নাগরিকত্ব বাতিল হলে ছেড়ে কথা বলব না।
সিএএ নিয়ে বাংলা, অসম ও ত্রিপুরার মতো রাজ্যের মানুষ সমস্যায় পড়তে পারেন। এমনটাই আশঙ্কা করা হচ্ছিল কোনও কোনও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে। কারণ এনআরসি হওয়ার পর অসমের ৪০ লাখ মানুষ সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলেন। এনিয়ে বাংলায় বড় কোনও আন্দোলন না হলেও দিল্লির শাহিনবাগে এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন হয়। তা নিয়ে তোলপাড় হয় দেশ।
দেশভাগের পর থেকেই ওই তিন রাজ্য প্রতিবেশী দেশ থেকে মানুষ এসে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা ভোট দিয়েছেন তাদের ভোটার কার্ড রয়েছে, আধার রয়েছে, রেশন কার্ড-সহ অন্যান্য নথিপত্র রয়েছে। তারাও আতঙ্কে রয়েছেন। এমনই একটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সম্প্রতি রাজ্যের কয়েকটি জেলায় অনেকের আধার বাতিল হয়ে গিয়েছিল। এনিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। রাজ্যের বিজপি নেতাদের দিকে এনিয়ে প্রশ্ন ধেয়ে আসতে থাকে। শেষপর্য়ন্ত আসরে নামে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুম ৃদার ও কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে তারা জানান কারও আধার বাতিল হবে না। সূত্রের খবর, একটি অ্যাপ আনা হবে। যারা কাছে যে নথি আছে তা ওই অ্যাপে আপলোড করতে হবে। আর যার কাছে কোনও নথি নেই তিনি স্বঘোষিত তথ্য দেবেন। তারই ভিত্তিতে কোনও একজনকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
সিএএ-র বিজ্ঞপ্তি জারির খবরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, সিএএর নামে কারও অধিকার কেড়ে নেওয়া হলে আন্দোলন হবে। তবে আইনটা আগে আমি দেখব। যদি দেখি কোনও শ্রেণির মানুষের উপরে বৈষম্য হচ্ছে তাহলে তার বিরোধিতা করব। কোনও বৈষম্য মানব না।
মোদীর গ্যারান্টি মানে প্রতিশ্রুতি পূরণের গ্যারান্টি।
১৯৪৫ সাল থেকে ধর্মীয় কারণে উৎপীড়িত জনগোষ্ঠী; মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রত্যেক ব্যক্তি সমনাগরিকত্বের দাবি তে সোচ্চার হয়েছেন।
আজ অপেক্ষার অবসান হল।নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনের (CAA) নোটিফিকেশন জারির মাধ্যমে এই আইন কার্যকর হবে… pic.twitter.com/25Nm5Oagz1
— Suvendu Adhikari (Modi Ka Parivar) (@SuvenduWB) March 11, 2024
এদিকে, বিজেপির দাবি, সিএএ কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য নয়। বরং নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যই। এনিয়ে শুভেন্দু অধিকারী সোশ্যাল মিডিয়া লেখেন, মোদীর গ্যারান্টি মানে প্রতিশ্রুতি পূরণের গ্যারান্টি। ১৯৪৫ সাল থেকে ধর্মীয় কারণে উৎপীড়িত জনগোষ্ঠী; মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রত্যেক ব্যক্তি সমনাগরিকত্বের দাবি তে সোচ্চার হয়েছেন। আজ অপেক্ষার অবসান হল। নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনের (CAA) নোটিফিকেশন জারির মাধ্যমে এই আইন কার্যকর হবে গোটা দেশে। আজ এই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে স্মরণ করি এবং পূর্ণব্রহ্ম পূর্ণাবতার শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর ও শিবাবতার শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের শ্রীচরণে প্রণাম নিবেদন করি।
চার বছরেও বেশি সময় আগে সিএএ পাস হলেওএর বিধি তৈরিতে এতটা দেরি কেন? বিরোধীদের দাবি, লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়েই একেবারে ভোটের মুখে সিএএ বিজ্ঞপ্তি জারি করল কেন্দ্র। কারণ এর প্রবল এক রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে ভোটে। বিশেষ করে অসম, বাংলা ও ত্রিপুরার মতো রাজ্যে। বিরোধীদের বক্তব্য, সিএএ-র সঙ্গে নাগরিকত্ব দেওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। শুধুমাত্র ভোটের বাজার মাত করতেই এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হল। কারণ যারা এতদিন ভোট দিয়ে এসেছেন তারা ইতিমধ্যেই ভারতের নাগরিক। ফলে এনিয়ে তর্ক বিতর্ক চলতেই থাকবে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)