গররাজি প্রশান্তভূষণ, নতুন মধ্যস্থতাকারীর নাম প্রস্তাব সরকারের

ছত্তিসগড়ে অপহৃত জেলাশাসক অ্যালেক্স পল মেননের মুক্তির জন্য তিন মধ্যস্থতাকারীর নাম প্রস্তাব করেছিল মাওবাদীরা। কিন্তু,তাঁদের দু`জন মধ্যস্থতাকারী হওয়ার বিষয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করায় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে দু'জন মধ্যস্থের নাম প্রস্তাব করা হল।

Updated By: Apr 24, 2012, 08:48 AM IST

ছত্তিসগড়ে অপহৃত জেলাশাসক অ্যালেক্স পল মেননের মুক্তির জন্য তিন মধ্যস্থতাকারীর নাম প্রস্তাব করেছিল মাওবাদীরা। কিন্তু,তাঁদের দু`জন মধ্যস্থতাকারী হওয়ার বিষয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করায় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে দু'জন মধ্যস্থের নাম প্রস্তাব করা হল। সিপিআই (মাওবাদী)-এর তরফে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জেলাশাসকের শারীরিক অবস্থা খারাপ। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন টালবাহানা করলে পরিস্থিতির জন্য তারাই দায়ী থাকবে। শুধু সরকারই নয়, জেলাশাসকের স্ত্রী ও তাঁর পরিবারের ওপর চাপ বাড়িয়ে মাওবাদীরা বলেছে, জেলবন্দিদের মুক্তির বিষয়ে তাঁরাও যেন সরব হন। এই পরিস্থিতিতে অসুস্থ মেননের চিকিত্‍সার জন্য সরকারের তরফে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ওড়িশায় ইতালিয় নাগরিক অপহরণ কাণ্ডে মধ্যস্থতাকারী বিডি শর্মা, টিম আন্নার সদস্য প্রশান্ত ভূষণ ও  ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন বিধায়ক মণীশ কুঞ্জম- সুকমার জেলাশাসক অ্যালেক্স পল মেননের মুক্তির জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সোমবার এই তিনজনের নাম প্রস্তাব করে মাওবাদীরা। গতকাল রাতে, মাওবাদীদের দক্ষিণ বস্তার ডিভিশনাল কমিটির সচিব বিজয় মারকেমের স্বাক্ষরিত ই-মেল বার্তা প্রশাসনের কাছে পৌঁছয়। ই-মেলে তিন মধ্যস্থতাকারীকে টারমেটলা যেতে  বলা হয়। যদিও প্রশান্ত ভূষণ ও মণীশ কুঞ্জম মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনে পত্রপাঠ অসম্মতি জানান।
এদিন সর্বদল বৈঠকের প্রস্তাব খারিজ করে রমন সিং সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়ে মাওবাদীরা বলে, অপহৃত জেলাশাসকের শারীরিক অবস্থা খারাপ। প্রশাসন টালবাহানা করলে পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য তারাই দায়ী থাকবে। মধ্যস্থতাকারীদের হাতে ওষুধ পাঠানোর কথাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু সরকারই নয়, জেলাশাসকের স্ত্রী, পরিবার ও আইএএস অফিসারদের সংগঠনের ওপরও চাপ বাড়াতে চেয়েছে মাওবাদীরা। চিঠিতে বলা হয়েছে, মাওবাদীদের দাবিমতো জেলবন্দিদের ছেড়ে দিতে তাঁরাও যেন সরকারকে অনুরোধ করেন। এরপরই মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দুই প্রাক্তন আমলা-নির্মলা বুচ এবং এস কে মিশ্রর নাম প্রস্তাব করা হয় প্রশাসনের তরফে।
প্রথমে স্বামী অগ্নিবেশ মধ্যস্থতা করতে চাইলেও ছত্তিসগড় সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল না হওয়ায় তাঁকে এই দায়িত্বে চায়নি মাওবাদীরা। ছত্তিসগড়ের জঙ্গল এলাকায় এখন কেন্দুপাতা তোলার মরসুম। কেন্দুপাতার ব্যবসার একটা অংশ মাওবাদীদের কাছে পৌঁছয়। ফলে, জেলাশাসকের মুক্তির জন্য সরকারের সঙ্গে দর কষাকষির বিষয়টি তারা দ্রুত মিটিয়ে নিতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে, বিশেষ সূত্রে খবর, জেলাশাসককে ঠিক কোথায় বন্দি রাখা হয়েছে তার হদিশ মিলেছে। তারপরই, বস্তারে মাওবাদী বিরোধী অভিযান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র।

সূত্রে খবর, একটি চালকহীন নজরদারী আকাশযান ইতিমধ্যেই অপহৃত জেলাশাসকের সন্ধান পেয়েছে। প্রায় ৫০০ মাওবাদী জেলাশাসককে ঘিরে রেখেছে বলে খবর। কেন্দ্রের তরফে ছত্তিসগড় সরকারকে এ ব্যাপারে সম্ভাব্য সমস্ত রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। অপহরণের ঘটনা ও জেলাশাসকের মুক্তির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংয়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। রমন সিং জানিয়েছেন জেলাশাসকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবরকম চেষ্টা করা হবে। তবে, মাওবাদীদের শর্তগুলি ছত্তিসগড় সরকার মানতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ রয়েছে।
প্রথমত, যে আটজনের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে, তাঁদের অনেকেই শীর্ষস্থানীয় মাওবাদী নেতা ও বহু গুরুতর মামলায় অভিযুক্ত। দ্বিতীয়ত, অপারেশন গ্রিন হান্ট বন্ধ করা রাজ্যের পক্ষে সম্ভব নয়। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারেরও অনুমোদন প্রয়োজন। তবে, দান্তেওয়াড়া ও রায়পুরের জেলে বন্দি আদিবাসীদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে পারে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই, জেলাশাসকের মুক্তির জন্য পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে জরুরি বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম।

.