নাগরিকত্ব জট কাটাতে ৩ দফা শর্ত দিয়ে আরও বিভ্রান্তি বাড়াল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক
কী করলে ভারতের নাগরিক হওয়া যাবে? তা নিয়ে বিভ্রান্তির বিভীষিকা।
নিজস্ব প্রতিবেদন: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বিতর্কে সাফাই দিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সেই টুইট ঘিরে শুরু হয়েছে বিভ্রান্তি। নাগরিক কারা? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বক্তব্য ৩টি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের মুখপাত্রের টুইটে দাবি, জন্ম সংক্রান্ত শংসাপত্রই নাগরকিত্বের প্রমাণ। নিরক্ষর যাঁরা, স্থানীয়দের সাক্ষ্যের ভিত্তিতেও মিলবে নাগরিকত্ব। আর ১৯৭১ সালের আগে যাঁরা, তাঁরা প্রত্যেকেই দেশের নাগরিক।
কী করলে ভারতের নাগরিক হওয়া যাবে? তা নিয়ে বিভ্রান্তির বিভীষিকা। এক এক সময় এক এক রকম বার্তা সরকারের তরফে। দিনভর তুমুল বিক্ষোভ-প্রতিবাদের আঁচ পেরোনোর পর সন্ধেয় টুইট করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তাতে নাগরিকত্বের তিনটি শর্তের কথা বলা হয়। কী সেই শর্ত?
নাগরকিত্বের নয়া শর্ত
১. জন্ম তারিখ ও জন্মস্থানের শংসাপত্র দিলেই নিজেদের নাগরিক প্রমাণ করা যাবে। এই ধরনের তালিকা প্রকাশ করা হবে যাতে কোনও সাধারণ মানুষের হেনস্থার শিকার না হন।
Spokesperson,MHA: Citizenship of India may be proved by giving any document relating to date of birth or place of birth or both.Such a list is likely to include a lot of common documents to ensure that no Indian citizen is unduly harassed or put to inconvenience. #CitizenshipAct pic.twitter.com/OAPB4D6gis
— ANI (@ANI) December 20, 2019
২. নিরক্ষর, যাঁদের হাতে শংসাপত্র সেভাবে নেই। স্থানীয়দের পরিচিতি, বয়ান ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তাঁদের নাগরিকত্ব মিলতে পারে।
৩. কারওর পূর্বপূরুষ যদি ৭১ সালের আগে এসে থাকেন, তাঁদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করার দরকার নেই।
এর আগে সরকারি সূত্রে ৮৭ সালের প্রসঙ্গ সামনে আসে। নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫ এবং পরবর্তী কালে যে সব আইন সংশোধন হয়েছিল, তাতে কিছু শর্তের কথা বলা আছে।
নাগরিকত্বের আইনি শর্ত
১. কেউ যদি ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি বা তার পর ১৯৮৭ সালের পয়লা জুলাইয়ের আগে ভারতে জন্মান, তিনি এ দেশের নাগরিক।
২. কেউ যদি ১ জুলাই, ১৯৮৭ বা তারপর ৩ ডিসেম্বর ২০০৪ বা তার আগে ভারতের জন্মান, এবং তাঁর বাবা বা মায়ের মধ্যে কেউ যদি ভারতীয় নাগরিক হন, তাহলে তিনিও এ দেশের নাগরিক।
বিভ্রান্তির নাগরিকত্ব
প্রশ্ন উঠছে নয়া টুইটে নিরক্ষর নাগরিকদের যে মৌখিক চিহ্নিতকরণের কথা বলা হচ্ছে সেটা কী? তাহলে কি নাগরিকত্ব প্রমাণের বছরের সীমারেখা কোনটা, ৮৭ না ৭১? যদি ৮৭ হয়, তাহলে নতুন করে ৭১-এর উল্লেখ কেন? অসমের NRC-র ক্ষেত্রে যে শর্ত প্রযোজ্য, সেই একাত্তরের সময়সীমা কি সারাদেশেই প্রযোজ্য? ৭১ সালের আগে কে কীভাবে এসেছেন, তার প্রমাণই বা কি করে হবে?
ভোটার কার্ড, আধার কার্ড বা পাসপোর্টকে নাগরিক পরিচয় হিসেবে গ্রাহ্য করতে চাইছে না সরকার। আর এখানে ছড়িয়েছে আরও বিভ্রান্তি। পাসপোর্ট তো ভারতীয় নাগরিককেই দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট কেন নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়? তাহলে তো বলতে হয়, ভারতের নাগরিক নয়, এমন ব্যক্তিকেও পাসপোর্ট দিয়েছে সরকার। অথচ কদিন আগেই মুম্বইয়ের একটি আদালত রায় দিয়েছিল, ভোটার কার্ড আর পাসপোর্ট ভারতের নাগরিকত্বের প্রমাণ। তাহলে? ফলে দিনের শেষেও, কী করলে ভারতের নাগরিক হওয়ার সৌভাগ্য হবে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েই গেল।
আরও পড়ুন- গণভোট নিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন মমতা, বললেন আমি তো..