প্রাণ বাঁচাতে গৃহবন্দী কেরালার 'রিজওয়ানুর-প্রিয়াঙ্কা'
এ যেন আর এক রিজওয়ানুর-প্রিয়াঙ্কার কাহানী। পালটে গেছে শুধু জায়গাটা। কলকতার বদলে কেরালার কোঝিকোড়।
কোঝিকোড়: এ যেন আর এক রিজওয়ানুর-প্রিয়াঙ্কার কাহানী। পালটে গেছে শুধু জায়গাটা। কলকতার বদলে কেরালার কোঝিকোড়।
২৪ বছরের ইঞ্জিনিয়ার গৌতম ভালবেসে বিয়ে করেছিল ২১ বছরের দাঁতের ডাক্তারি পাঠরতা অনশিদাকে। কিন্তু বিয়ের একমাস পড়েও নিজেদের বাড়ি থেকে বেড়তে পারছে না দু'জনের কেউই। প্রতি মুহূর্তে খুন হয়ে যাওয়ার হুমকি পাচ্ছেন তাঁরা।
গৌতমের সঙ্গে ৯ মাসের প্রেমের সম্পর্ক অনশিদার। অনশিদার বাবা-মা জোর করে অন্য জায়গায় তাঁর বিয়ে ঠিক করার পর দু'জনে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। কিন্তু তারপর থেকে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু হুমকি তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাঁদের।
ফেসবুকে দু'জনের প্রোফাইল ভরে গেছে গালাগালিতে। তাদের বিয়ে ধর্মবিরোধীতা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে দাবি করেছে অনেকে, বলছে অধিকার নেই দু'জনের বেঁচে থাকার। শুধু ফেসবুক নয় হুমকি দেওয়া হচ্ছে ফোনেও। দিনদিন বাড়ছে হুমকির পরিমাণ। সারাদিন তাদের বাড়ির সামনে ঘোরাফেরা করছে বাইকবাহিনী। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে হুমকি দিচ্ছে তারা। বাড়ি লক্ষ্য করে ছুঁড়ছে পাথর। ভেঙে ফেলেছে জানলা। বাড়ির সামনে পুলিস প্রহরার পড়েও হুমকিতে বিন্দুমাত্র লাগাম পড়েনি। আতঙ্কে বাড়ির বাইরে পা রাখতে পারছে না এই যুগল।
গৌতম জানিয়েছেন তিনি নিজে কোনও ধর্মে বিশ্বাস করেন না। আনশিদা ইসলামে বিশ্বাস করলেও তাতে তাঁর বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। ভারতের মত তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দেশে এই ধরণের ভয়াবহ অবসস্থার সম্মুখীন হতে হবে দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি দু'জনের কেউই।
স্থানীয় সার্কেল ইন্সপেক্টর জোশি জোস জানিয়েছেন তাঁরা এই যুগলকে যথাসাধ্য নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। চেষ্টা করছেন শান্তি বজায় রাখার। কোন সংগঠন এখনও পর্যন্ত এই ঘটনার দায় স্বীকার করেনি। তবে জোস জানিয়েছেন এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক শক্তি কাজ করছে না।
আনশিদা জানেন না তিনি আর কোনও দিন কলেজে পারবেন কিনা। গৌতমও জানেন না কবে থেকে আবার কাজে যোগ দেবেন তিনি। এখন শুধু ভয় আর আতঙ্কের সঙ্গে দিন গুজরান চলছে দু'জনের।
গৌতমের বাবা-মা এই দুঃসময়ে দু'জনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। গৌতমের বাবা সুধাকরণ জানিয়েছেন তাঁর প্রধান লক্ষ্য যেকরে হোক আনশিদার পড়াশোনা ফের শুরু করা। সবার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন তিনি।
নিরুপায় হয়ে গৌতম ও আনশিদা ঠিক করেছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ওম্মেন চান্ডির কাছে সরাসরি সাহায্য প্রার্থনা করবেন।