প্রয়াত একশো দিনের 'কারিগর' রঘুবংশ সিং, ৩ দশকের 'সঙ্গী'কে হারালেন লালু
কয়েক দিন আগেই হাসপাতালে বসে লালুকে চিঠি দিয়ে রঘুবংশ লেখেন, কর্পূরি ঠাকুরের মৃত্যুর পর ৩ দশক ধরে আপনার সঙ্গে আছি। তবে, আর নয়।
নিজস্ব প্রতিবেদন: দল ছেড়েছেন তিন দিন আগে। আজ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন লালু প্রসাদ যাদবের তিন দশকের সঙ্গী তথা প্রাক্তন আরজেডি নেতা রঘুবংশ প্রসাদ সিং। রবিবার সকালে দিল্লি এইমস-এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। জনপ্রিয় প্রকল্প 'মনরেগা' তাঁরই মস্তিষ্ক প্রসূত বলে মনে করা হয়।
কোভিড আক্রান্ত হয়ে সপ্তাহ খানেক আগে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন রঘুবংশ। গতকাল রাতে শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাঁকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মানলেন ৭৪ বছর বয়সী এই দুঁদে নেতা। তিন দিন আগে হাসপাতালে বসেই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। সামনে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। সবাইকে চমকে আরজেডি সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদবকে চিঠি লিখে দল ছাড়ার ঘোষণা করেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তে বিহারের রাজনীতিতে নয়া জল্পনা শুরু হয়ে যায়।
বলা যায়, রঘুবংশ ছিলেন লালুর 'ডানহাত'। ৩ দশকের রাজনৈতিক সঙ্গী তাঁর। জননায়ক কর্পূরি ঠাকুরের মৃত্যুর পর দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে ওঠেন রঘুবংশ। ১৯৭৭ সাল থেকে রাজনীতির ময়দানে। বৈশালী লোকসভা কেন্দ্র থেকে পাঁচবার সাংসদ। ১৯৯৬ সালে জনতা দল এবং ১৯৯৮ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত আরজেডির হয়ে লোকসভার সাংসদ হয়েছেন। তবে, মোদী ঝড়ের কাছে শেষ দুবার পরাস্ত হন তিনি।গত লোকসভা নির্বাচনে লোক জনশক্তি পার্টির বীণা দেবীর কাছে কার্যত গোহারা হারেন তিনি।
বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কর্পূরি ঠাকুরের ক্য়াবিনেটের মন্ত্রী হয়ে সংসদীয় রাজনীতিতে হাতেখড়ি শুরু হয়। মনমোহন সিং সরকারের প্রথম ইউপিএ-তে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী ছিলেন রঘুবংশ। সে সময়ই একশো দিনের কাজ (মনরেগা) প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মনে করা হয়, এই প্রকল্প তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত।
উল্লেখ্য, পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি কাণ্ডে লালু প্রসাদ যাদবের কারাবাসের পর থেকেই আরজেডিতে গুরুত্ব কমতে থাকে রঘুবংশের। লালু পুত্র তেজস্বী যাদবের হাতে দলের রাশ আসতে কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এরপর গত বিধানসভা নির্বাচনে নীতীশ কুমারের সঙ্গে হাত মেলানোয় দল বিরোধী কিছু মন্তব্য করতে দেখা যায় তাঁকে। যা নিয়ে রঘুবংশের বিরুদ্ধে তেজস্বীর প্রবল অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল বলে জানা যায়।
কয়েক দিন আগেই হাসপাতালে বসে লালুকে চিঠি দিয়ে রঘুবংশ লেখেন, কর্পূরি ঠাকুরের মৃত্যুর পর ৩ দশক ধরে আপনার সঙ্গে আছি। তবে, আর নয়। বিহারের সাধারণ মানুষ তথা দলের কর্মীদের থেকে প্রচুর ভালবাসা পেয়েছি। এমন সিদ্ধান্তের জন্য তাঁদের কাছে দুঃখিত। লালুও জেল থেকে একটি হৃদয় বিদারক চিঠি লেখেন। তাঁকে দল না ছাড়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রঘুবংশ যে পাল্টা চিঠিটা লেখেন, তা লালুকে নন, বিহারের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের উদ্দেশে। তারপরই জোরালো হয় জল্পনা।
আরও পড়ুন- দিল্লি পুলিস আরএসএসের উইং হিসাবে কাজ করছে, বিস্ফোরক অধীর চৌধুরি
লালুর সঙ্গেও যে মতবিরোধ তৈরি হচ্ছিল সম্প্রতি একটি ঘটনা তার প্রমাণ। রঘুবংশ চেয়েছিলেন মহাজোটে মজলিস ই ইত্তেহাদুল মুসলমান (এমআইএম)-কে সামিল করাতে। মিম কট্টর বিচারধারার দল হওয়ায় লালু প্রসাদ এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেননি। তখন রঘুবংশ ক্ষোভ প্রকাশ্যে এনে বলেছিলেন, লালুপ্রসাদ আমার থেকে বেশি বোঝেন। তবে কাজটা করে ফেলেন বড্ড দেরিতে।