এই সরকার আমাকে চায় না, তাই নালন্দার চ্যান্সলরের পদে আর থাকতে চাই না: অমর্ত্য সেন
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন অমর্ত্য সেন। দ্বিতীয়বার নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের পদে তাঁর নাম ঘোষণায় বিলম্ব হওয়ায় তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বর্ষীয়ান এই অর্থনীতিবিদ।
নয়া দিল্লি: নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন অমর্ত্য সেন। দ্বিতীয়বার নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের পদে তাঁর নাম ঘোষণায় বিলম্ব হওয়ায় তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বর্ষীয়ান এই অর্থনীতিবিদ।
আগামী জুলাই মাসে শেষ হচ্ছে প্রথমদফায় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর পদে অমর্ত্য সেনের সময়সীমা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্নিং বোর্ডের সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমেই নোবেল বিজয়ী বর্ষীয়ান এই অর্থনীতিবিদকে চ্যান্সেলর রূপে মেনে নিয়েছিলেন।
গভর্নিং বোর্ডের প্রতি লেখা একটি চিঠিতে অধ্যাপক সেন জানিয়েছেন এই সরকার তাঁকে চায় না। তাঁর মতে এই দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ''সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের মতামতের উপর নির্ভরশীল।'' তিনি জানিয়েছেন সরকারের আপত্তির জন্যই বলেই রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় দ্বিতীয়বার তাঁকে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর পদের জন্য নির্বাচনে সম্মতি জানাতে পারছেন না।
অমর্ত্য সেন বলেছেন বলেছেন ''জুলাই মাসের পর নালন্দার চ্যান্সেলর পদে সরকার যে আমাকে আর চায় না এই সত্যিটা মেনে নেওয়া আমার পক্ষে কষ্টের। টেকনিকালি সরকারের সেই ক্ষমতা আছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই বিলম্ব ও অনিশ্চয়তা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন ব্যবস্থা ও শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতির স্বার্থেই তাই আমি জুলাই মাসের পর থেকে আর নালন্দার চ্যান্সেলরের পদে থাকতে চাই না। যদিও গভর্নিং বোর্ডের তরফ থেকে বহুবার আমাকে এই দায়িত্ব সামলানোর অনুরোধ করা হয়েছে।''
এই বছরের ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি নালন্দার গভর্নিং বডির বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে দ্বিতীয়বারের জন্যও অমর্ত্য সেনের নাম চ্যান্সেলর হিসাবে গৃহীত হয়। কিন্তু, রাষ্ট্রপতি এখনও পাকাপাকি ভাবে শীলমোহর না দেওয়ায় গ্রাহ্যতা পায়নি এই সিদ্ধান্ত।
নালন্দার বোর্ডের তরফ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে এই বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে চিঠি দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
সংসদে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত অ্যাক্ট অনুযায়ী গভর্নিং বোর্ডের কোনও সিদ্ধান্তই স্বীকৃতি পাবে না যতক্ষণ না রাষ্ট্রপতি (ভিসিটর) সে বিষয়ে সম্মতি প্রদান করছেন।
নিজের চিঠিয়ে অধ্যাপক সেন লিখেছেন ''এক মাসের বেশি অতিক্রান্ত। এখন এটা স্পষ্ট যে গভর্নিং বডির সর্বসম্মত পছন্দকে স্বীকৃতি দিতে অপারগ ভিসিটর। কারণ একটাই। কেন্দ্র সরকার এই সিদ্ধান্তকে এখনও পর্যন্ত অনুমোদন দেয়নি। রাষ্ট্রপতির দফতর বা কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রক, কারোর তরফ থেকেই এখনও পর্যন্ত সদুত্তর মেলেনি। বোর্ড মেম্বাররা ভাল করেই জানেন আমাদের ভিসিটর (প্রণব মুখোপাধ্যায়) নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে ভীষণই উৎসাহী। কিন্তু নিশ্চয়ই কোনও কারণ আছে যার ফলে আমাদের পক্ষে বুঝতে আর অসুবিধা নেই যে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া তাঁর পক্ষে করা কঠিন বা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।''
২০১৩ সাল থেকেই তৎকালীন গুজরাত মুখ্যমন্ত্রী বর্তমান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর খোলাখুলি সমালোচনা করে আসছেন অমর্ত্য সেন। এমনকি ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগেও তিনি সাফ জানিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে মোদী দেখতে চান না তিনি। তবে নির্বাচনের পরে অবশ্য তিনি স্বীকার করে নিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে মোদীর মত বিরোধ থাকলেও দেশের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জনে মোদী সফল হয়েছেন।
মোদী বিরোধীতাই কি অমর্ত্য সেনের চ্যান্সেলর পদে পুনর্বহালে বিলম্বের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াল? নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদের এই খোলা চিঠির পর কিন্তু সেই বিতর্কই মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।