গুলবার্গ গণহত্যা, সিট রিপোর্টে ক্লিনচিট মোদীকে
গত দু`মাস ধরেই বিষয়টি নিয়ে জল্পনা চলছিল তামাম গুজরাটের মিডিয়ায়। মঙ্গলবার তাতে আইনি শিলমোহর দিলেন আমদাবাদের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট এম এস ভাট। বিচারক ভাট জানিয়ে দিলেন, মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে গুলবার্গকাণ্ডে মদত দেওয়ার কোনও প্রমাণ নেই এই রিপোর্টে।
গত দু'মাস ধরেই বিষয়টি নিয়ে জল্পনা চলছিল তামাম গুজরাটের মিডিয়ায়। মঙ্গলবার তাতে আইনি শিলমোহর দিলেন আমদাবাদের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট এম এস ভাট। আবেদনকারী জাকিয়া জাফরিকে গুলবার্গ গণহত্যা সংক্রান্ত 'স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম' (সিট)-এর তদন্ত রিপোর্ট দেখার সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি বিচারক ভাট জানিয়ে দিলেন, মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে গুলবার্গকাণ্ডে মদত দেওয়ার কোনও প্রমাণ নেই এই রিপোর্টে। বিধানসভা ভোটের ৮ মাস আগে সিট-এর এই রিপোর্ট 'ছোটে সর্দার'কে রাজনৈতিক ভাবে কিছুটা স্বস্তি দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যদিও বিষয়টি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে পুরোমাত্রায়।
২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি গুজরাত দাঙ্গার সময় আমদাবাদের গুলবার্গ হাউসিং সোসাইটি গণহত্যায় নিহত হন প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরি-সহ ৬৯ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। ওই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরি। আমদাবাদের বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতা, পুলিস অফিসার ও আমলার বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
জাকিয়ার আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্তে নামে গুজরাত-দাঙ্গার বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। কিন্তু তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে `সিট`-এর রিপোর্টের ভিত্তিতে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে গুজরাত দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে কোনও রায় দেয়নি শীর্ষ আদালত। `আদালত বান্ধব` রাজু রামচন্দ্রনকে দিয়ে সিট-এর রিপোর্ট পর্যালোচনা করানোর পর গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর বিচারপতি ডি কে জৈনের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ এই মামলার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার আমদাবাদের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের উপর ছেড়ে দেয়।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত 'সিট'-এর তরফে আমদাবাদের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এস ভাটের কাছে সিল-বন্ধ খামে গুলবার্গ গণহত্যা মামলার 'ক্লোজার রিপোর্ট' জমা দেওয়া হয়। সে সময়ই গুজরাতের সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি করা হয়, মুখ্যমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে দাঙ্গায় প্ররোচণা দেওয়া বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় রাখার অভিযোগ উল্লিখিত হয়নি সিট-রিপোর্টে। অভিযুক্ত অন্য ৫৭ জন রাজনীতিক ও প্রশাসনিক কর্তার বিরুদ্ধেও প্রমাণ সংগ্রহে আপারগতার কথা সিট-রিপোর্টে স্বীকার করা হয়েছে বলেও দাবি করা হয় মিডিয়ায়।
সংবাদমাধ্যমে গুলবার্গ গণহত্যাকাণ্ডের দায় থেকে নরেন্দ্র মোদীকে রেহাই দেওয়ার কথা প্রচারিত হওয়ার পরই জাকিয়া জাফরির পাশাপাশি সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদ এবং মুকুল সিনহা মেট্রোপলিটন আদালতে পৃথক আবেদনপত্র পেশ করে সিট-রিপোর্টের কপি চেয়েছিলেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি গুলবার্গ গণহত্যার তদন্ত রিপোর্ট এবং আনুষঙ্গিক নথিপত্র কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে আমদাবাদের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে আপত্তি জানায় সিট। ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালত জাকিয়া জাফরির আবেদন বিবেচনার জন্য গ্রহণ করলেও তিস্তা শেতলবাদ এবং মুকুল সিনহার আর্জি নাকচ করে দেয় আদালত। বস্তুত গুলবার্গ গণহত্যাকাণ্ডে নিহত কংগ্রেস নেতার স্ত্রী'কে রিপোর্টের প্রতিলিপি দেওয়ার ব্যাপারে আদালতের সেদিনের পদক্ষেপের পর কিছুটা চাপে পড়েছিল মোদী সরকার। কিন্তু মঙ্গলবার আদালত প্রকাশিত সিট রিপোর্ট কিছুটা স্বস্তি দিল তাঁকে।