সীমান্ত সমস্যা মেটাতে নয়াদিল্লি-বেজিং চুক্তি

সীমান্ত সমস্যা এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে সই করল ভারত ও চিন। বুধবার নয়াদিল্লিতে তিন দিনের বৈঠক শেষে সাক্ষরিত এই চুক্তিতে সীমান্ত চিহ্নিতকরণের জন্য সুনির্দিষ্ট মেকানিজম গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।

Updated By: Jan 18, 2012, 06:08 PM IST

সীমান্ত সমস্যা এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে সই করল ভারত ও চিন। বুধবার নয়াদিল্লিতে তিন দিনের বৈঠক শেষে সাক্ষরিত এই চুক্তিতে সীমান্ত চিহ্নিতকরণের জন্য সুনির্দিষ্ট মেকানিজম গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের এই পঞ্চদশ বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন। অন্যদিকে সফরকারী চিনা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন সে দেশের `স্টেট কাউন্সিলর` দাই বিংগুয়ো।
প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালে বেজিং-এ ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পদে কর্মরত থাকার সময় সীমান্ত সমস্যার নিরসনে কার্যকরী মেকানিজম-এর রূপরেখা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন শিবশঙ্কর মেনন। এর পর তত্‍কালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রজেশ মিশ্রর সঙ্গে দাই বিংগুয়ো`র আলোচনার সূচনা হয়। ২০০৫ সাল থেকে চালু হয়, বিশেষ প্রতিনিধি স্তরের ধারাবাহিক বৈঠক।
দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী শুধুমাত্র সামরিক স্তরেই নয়, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক স্তরেও সীমান্ত সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবে দুই দেশ। দু’দেশের সংসদীয়, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কর্তাদের নিয়ে একটি প্রতিনিধি দল গঠন করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। ভারতের তরফ থেকে এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন বিদেশ মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব স্তরের এক অফিসার। চিনের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেবেন সীমান্ত বিষয়ক দফতরের ডিজি। নিয়মিত ভাবে এই দ্বিপাক্ষিক প্রতিনিধি দলের মধ্যে আলোচনা চলবে। তবে, বিশেষ প্রতিনিধিস্তরের বৈঠকে গৃহীত কোনও সিদ্ধান্ত সংশোধন বা পরিমার্জনের ক্ষমতা থাকবে না সংশ্লিষ্ট দ্বিপাক্ষিক প্রতিনিধি দলের।

অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং, সিকিমের ফিঙ্গার এরিয়া, জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখ-এর বেশ কিছু এলাকায় সীমান্ত চিহ্নিত করার বিষয়ে এখনও ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি দুই দেশ। তাই মানচিত্র বিনিময়-সহ নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট মেকানিজম গড়ে তোলার লক্ষ্যে ধারাবাহিক আলোচনা চালাচ্ছে ভারত ও চিন। ২০১০ সালে চিনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাওয়ের ভারত সফরের সময় সীমান্ত সমস্যার সমাধানে একটি কার্যকরী মেকনিজম গড়ে তোলার ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছিলেন মেনন-বিংগুয়ো।
গত বছরের নভেম্বর মাসে বিশেষ প্রতিনিধিস্তরের পঞ্চদশ পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও বিহারে বিশ্ব বৌদ্ধ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে নির্বাসিত তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামার অংশগ্রহণ নিয়ে কূটনৈতিক বিতর্কের জেরে আলোচনা পিছিয়ে যায়। পাশাপাশি দক্ষিণ চিন সাগরে তেল বিতর্ক, চিনের ইয়ুং প্রদেশে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের উপর নির্যাতন, অরুণাচলের বাসিন্দা বায়ুসেনার এক অফিসারকে ভিসা দিতে চিনের আপত্তি দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কে অনিশ্চয়তা তৈরি করে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই তিক্ততাকে দূরে সরিয়ে রেখে সীমান্ত চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট দৃঢ়তা দেখাতে সক্ষম হলেন মনমোহন সিং ও হু জিনতাও। এদিন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে দাই বিংগুয়ো জানান, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সমস্যাগুলির সমাধানের মাধ্যমে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে চিন সরকারের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

.