তদন্তে নেমে 'বিচিত্র চরিত্র' ইন্দ্রাণীর মোটিভ খুঁজতে ধন্দে গোয়ান্দারাও
লাগামছাড়া উচ্চাকাঙ্খা। সেই তাড়না থেকে একের পর এক সম্পর্ক। বিত্তের শিখরে পৌছতে একটার পর একটা বিয়ে যেন এক একটা সিঁড়ির ধাপ। নিজের স্বার্থে ছেলেমেয়েকেও ভাইবোন বলে পরিচয়। মেয়েকে নিকেশ করতেও হাত কাঁপল না মায়ের। ক্রাইম সাইকোলজিতে বিচিত্র ক্যারেক্টার ইন্দ্রাণী মুখার্জি।
হাসি মুখের মাঝবয়সী ঝকঝকে মহিলা। বাইরে থেকে দেখে কিচ্ছুটি বোঝার উপায় নেই। তদন্তে নেমে ইন্দ্রাণী মুখার্জির কর্মকাণ্ড দেখে তাজ্জব গোয়েন্দারাও। কেরিয়ার আর টাকার জন্য একজন কতদূর এগোতে পারে, ইন্দ্রাণী কাণ্ডের পরতে পরতে উঠে আসছে তার উদাহরণ।
----
গুয়াহাটির সুন্দরনগর এলাকায় বাড়ি। বাবা ছিলেন অসম সরকারের সাধারণ কর্মচারী। ক্লাস এইটে প্রথম অ্যাফেয়ার। তার জন্য একবার বাড়ি থেকেও পালান ইন্দ্রাণী। পরে ফিরেও আসেন। হায়ার সেকেন্ডারির পর ভর্তি হন শিলংয়ের লেডি কেনি কলেজে। সেখানেই সিদ্ধার্থ দাসের সঙ্গে আলাপ। বেকার সিদ্ধার্থকে স্বাবলম্বী করতে বাবা ইউকে বোরার কাছ থেকে টাকাও নেন ইন্দ্রাণী। সিদ্ধার্থর সঙ্গে সম্পর্ক থাকাকালীন শিলংয়ের এক শোরুমের ম্যানেজারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে ইন্দ্রাণীর। তাতেও থামেনি অভিসার। সিদ্ধার্থের ভাই সম্পর্কে যিনি দেওর হন, তাঁর সঙ্গেও একটা সম্পর্ক তৈরি হয় ইন্দ্রাণীর। দেওরের সঙ্গেই কলকাতায় পালিয়ে আসেন ইন্দ্রাণী। এরপর আর কিছু জানা যায়নি। বাড়ির সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল না।
----
পুরুষময় জীবনে ফের নতুন সঙ্গী জামশেদপুরে। চাকরি নিয়ে আসেন ইন্দ্রাণী। পরিচয় হয় সঞ্জীব খান্নার সঙ্গে। তখন কেবল্ টিভির ব্যবসা করতেন সঞ্জীব। কলকাতায় চলে আসেন দুজনে। ১৯৯৩ সালে বিয়ে। সঞ্জীবের জীবনসঙ্গিনী হওয়ার পরই সমাজের অভিজাতমহলে যাতায়াত শুরু হয় ইন্দ্রাণীর। সঞ্জীবের মামা জিএম কপুর প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট হিসেবে প্রসিদ্ধ। তাঁর বাড়িতেই বড় হন সঞ্জীব। পরিচিতির সেই সূত্রকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন অভিজাত ক্লাবে যেতে শুরু করেন ইন্দ্রাণী। একটা সময় ইন্দ্রাণী পিআর এজেন্সি খুলে মুম্বইয়ে পাকাপাকি ভাবে বসবাস শুরু করেন। ২০০১ সালে স্টার ইন্ডিয়া গ্রুপে জয়েন করেন ইন্দ্রাণী। খুব শিগগিরই সিইও পিটার মুখার্জির কাছের জন হয়ে ওঠেন। তার কিছুদিনের মধ্যেই সঞ্জীবের সঙ্গে ডিভোর্স। ২০০২ সালে পিটার মুখার্জিকে বিয়ে করেন ইন্দ্রাণী।
----
এত কিছুর মধ্যে গুয়াহাটিতে মিখাইল আর শিনা বড় হচ্ছিল দাদু-দিদিমার কাছে। দুজনেই জানতেন না মা কোথায়। হঠাত্ খবরের কাগজে একদিন জানতে পারেন পিটার মুখার্জিকে বিয়ে করেছে ইন্দ্রাণী। তারপরই বাবা ইউকে বোরা মেয়ে ইন্দ্রাণীকে চিঠি লেখেনে। ২০০৫ সালে মায়ের সঙ্গে কলকাতায় প্রথম দেখা মিখাইল ও শিনার। সেখানেই নাকি ইন্দ্রাণী বলে দেন, ছেলেমেয়ের পরিচয় তিনি প্রকাশ্যে আনতে পারবেন না। ভাইবোন হিসেবেই পরিচয় দেবেন তিনি। মিখাইল জানিয়েছেন, তাঁদের পরিবারে আর্থিক কষ্ট প্রকট হচ্ছিল। সম্পর্ক গোপন রাখতে টাকার টোপ দেন ইন্দ্রাণী। মাসে মাসে মোটা টাকা। তার বিনিময়ে ভাইবোন সেজে থাকবে নিজের ছেলেমেয়ে। ঝাঁ চকচকে কেরিয়ার আর আয়েশকি জিন্দেগি, তার জন্য এতটাই এগিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী। সম্প্রতি বাড়িতে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তাতেই কি বেঁকে বসেছিল ছেলে-মেয়ে? তার জন্যই কি শেষ পর্যন্ত নিজের মেয়েকে খুন করল মা? উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা।