কাশ্মীরে ৩৭০ তুলে দিল কেন্দ্র, ২টি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হল জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ
৩৭০ ধারা তুলে দিতে রাষ্ট্রপতিকে সুপারিশ কেন্দ্রের। প্রস্তাবের চরম বিরোধিতা বিরোধীদের। তাঁদের দাবি, ৩৭০ ধারা তুলে দিলে বিশেষ সুবিধা হারাবে কাশ্মীর।
নিজস্ব প্রতিবেদন: কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা তুলে দিল কেন্দ্র। এর সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীর-২টি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হল। আর এর মাধ্যমেই কাশ্মীর ইস্যুতে 'নজিরবিহীন' সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিহাস তৈরির পথ প্রশস্ত করল মোদী সরকার। শুধু ৩৭০ ধারা নয়, ৩৫-এ ধারাও বাতিল করে কেন্দ্র। এর বিরোধিতায় রাজ্যসভায় চলছে তুমুল হই হট্টগোল। ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান গুলাম নবি আজাদ-সহ অন্যান্য বিরোধীরা।
কাশ্মীর ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর ক্যাবিনেট বৈঠকের পর অমিত শাহ সংসদে কী বিবৃতি দেন, তা জানতে এদিন গোটা দেশ ছিল উদ্বেল। বেলা ১১ টায় সংসদে বিবৃতি রাখতে ওঠেন অমিত শাহ। এরপর নজিরবিহীনভাবে সংসদে সংশোধিত জম্মু কাশ্মীর বিল পেশ করেন তিনি। রাষ্ট্রপতিকে এই বিলে সই করার সুপারিশ করে কেন্দ্র। এরপরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজ্যসভা। প্রস্তাবের বিরোধিতার সরব হন গুলাম নবি আজাদ, রামগোপাল যাদবরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়।
পরে ফের অধিবেশন শুরু হলে, বিরোধীদের হই হট্টগোলের মধ্যেই রাষ্ট্রপতির নির্দেশনামা পড়ে শোনান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পাস হয়ে যায় বিল। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের বিজ্ঞপ্তিতে সই করেন রাষ্ট্রপতি। এই বিলের মাধ্যমে কাশ্মীরকে পুনর্গঠন করা হবে। তিনটি ভাগে ভাগ করা হবে জম্মু-কাশ্মীরকে। ১. লাদাখ, ২. জম্মু ও ৩. কাশ্মীর। এরফলে জম্মু-কাশ্মীর আলাদা করে রাজ্যের মর্যাদা হারাচ্ছে। জম্মু কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। লাদাখকে জম্মু কাশ্মীর থেকে আলাদা করে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। লাদাখকে বিধানসভাবিহীন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
উপত্যকায় যে 'ঝড়' উঠেছে, তার আঁচ এদিন পড়ে সংসদেও। সকাল থেকেই রাজ্যসভায় যা ঘটল, বিশেষজ্ঞদের মতে তা এককথায় 'নজিরবিহীন'। কারণ সংসদের 'লিস্ট অফ বিজনেস'এ এই প্রস্তাব ছিল না। পরে 'রিভাইজড লিস্ট অফ বিজনেস'এ এই প্রস্তাব নিয়ে আসা হয়। রামগোপাল যাদব, গোলাম নবি আজাদরা কাশ্মীরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি।
এদিন ৩৭০ ধারা বিল পাস হওয়ার পরই ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিরোধীরা। 'রুল বুক' নিয়ে চেয়ারম্যানের টেবিলের কাছে পৌঁছে যান ডেরেক ও'ব্রায়েন। তাঁর অভিযোগ, এত কম সময়ে যে বিল সার্কুলেট হয়নি, সেটি কীভাবে টেবিল হয়ে যাচ্ছে? সেটি কীভাবে রাজ্যসভায় পাস করে দিলেন অমিত শাহ?
কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন মেহবুবা মুফতি। "আজকের দিন গণতন্দ্রের সবচেয়ে কালো দিন" বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
Today marks the darkest day in Indian democracy. Decision of J&K leadership to reject 2 nation theory in 1947 & align with India has backfired. Unilateral decision of GOI to scrap Article 370 is illegal & unconstitutional which will make India an occupational force in J&K.
— Mehbooba Mufti (@MehboobaMufti) August 5, 2019
HM Amit Shah in Rajya Sabha: Under the umbrella of Article 370 three families looted J&K for yrs. Leader of Opposition (GN Azad) said Article 370 connected J&K to India, it's not true. Maharaja Hari Singh signed J&K Instrument of Accession on 27 Oct 1947, Article 370 came in 1954 pic.twitter.com/qCkP1bdivv
— ANI (@ANI) August 5, 2019
রবিবারই কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। থমথমে জম্মু-কাশ্মীরে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ চড়ছে। অভিনেতা অনুপম খের জম্মু-কাশ্মীরের এই পরিস্থিতি নিয়ে টুইটে লিখেছেন, ‘শুরু হল কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের প্রক্রিয়া।’ তবে অনুপম খেরের মতামত যা-ই হোক না কেন, ঠিক কেন রাজ্যে এই তোড়জোড়, এই চূরান্ত তত্পরতা— তা এখনও স্পষ্ট নয়।
গোটা রাজ্যে জারি করা হয়েছে হাই অ্যালার্ট। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। ইতিমধ্যেই নিজের বাসভবনে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে হওয়া বিশেষ ক্যাবিনেট বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ঠিক কী সিদ্ধান্ত নেন, তা জানতে উদ্বেল ছিল গোটা রাজ্য।
ইতিমধ্যে গৃহবন্দি করা হয়েছে রাজ্যের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতিকে। গৃহবন্দি করা হয়েছে রাজ্যের অন্য আর এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা সাজ্জাদ লোনকে। ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। একই সঙ্গে বন্ধ ডিটিএইচ পরিষেবা ও টেলি যোগাযোগ।