লোকসভায় পেশ হল লোকপাল বিল
দিনভর প্রবল বিতণ্ডা আর দফায় দফায় অধিবেশন মুলতুবির পর অবশেষে লোকসভায় পেশ হল লোকপাল বিল। লোকপাল বিলের সঙ্গেই এদিন বহুচর্চিত খাদ্য সুরক্ষা বিলটিও পেশ হয়েছে লোকসভায়।
দিনভর প্রবল বিতণ্ডা আর দফায় দফায় অধিবেশন মুলতুবির পর অবশেষে লোকসভায় পেশ হল লোকপাল বিল। লোকপাল বিলের সঙ্গেই এদিন বহুচর্চিত খাদ্য সুরক্ষা বিলটিও পেশ হয়েছে লোকসভায়।
আন্না হাজারের দাবি এবং আপত্তিগুলিকে কার্যত অগ্রাহ্য করেই লোকপাল বিলের খসড়ায় সবুজ সঙ্কেত দিয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। কিন্তু তাতে জটিলতা কাটেনি এক ফোঁটাও। বরং টিম আন্নার পাশাপাশি জোরাল আপত্তি এসেছে বিজেপি'র তরফেও। বিশেষত সিবিআই'কে লোকপালের আওতার বাইরে বিষয়টি কোনও ভাবেই মানতে নারাজ প্রধান বিরোধী দলের নেতারা। এদিন লোকসভায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ। সরকারের পেশ করা লোকপাল বিল প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে লোকপাল প্যানেল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের 'কোটা'র জন্য লালু-মুলায়মের দাবি ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সকালে লোকসভার অধিবেশন শুরু হওয়া মাত্রই একযোগে লোকপাল প্যানেলে সংখ্যালঘু সংরক্ষণের দাবিতে সরব হন লালু-মুলায়মরা। অন্য দিকে বহুজন সমাজ পার্টির সাংসদরা সিবিআই'কে লোকপালের আওতায় আনার দাবি তুলে বিল পেশে বাধা দেন। তুমুল বিক্ষোভের কারণে প্রথমে বেলা দু'টো পর্যন্ত সভা মুলতুবি করে দেন স্পিকার মীরা কুমার। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, বিএসপি সাংসদদের নিরস্ত করে বিল পেশের পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
ফলে ফের বেলা ৩টে পর্যন্ত মুলতুবি হয় অধিবেশন। লালুপ্রসাদ যাদব, মুলায়ম সিং যাদবরা লোকপাল বিল পেশের প্রকাশ্য বিরোধিতা করার পর রাজনৈতিক মহল মহিলা বিল পর্বের মতোই অশনিসংকেত দেখতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত সরকারের তরফে এই দাবি বিবেচনা করে লোকপাল বিলের খসড়ায় প্রয়োজনীয় সংশোধনের সম্ভাবনার আশ্বাস দেওয়ার পর বিল পেশের সুযোগ মেলে। নতুন লোকপাল বিল পেশের পাশাপাশি অগাস্ট মাসে পেশ করা লোকপাল বিলটি এদিন প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার পক্ষ।
আগামী ২৭ তারিখ থেকে লোকপাল বিল নিয়ে সংসদে বিতর্ক হবে। তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে ওই দিন থেকেই মুম্বইয়ে তিন দিনের অনশন কর্মসূচির মাধ্যমে তৃতীয় দফার 'লোকপাল আন্দোলন'-এর সূচনা করবেন রালেগাঁও সিদ্ধির প্রবীণ গান্ধীবাদী নেতা।
অগাস্ট মাসে আন্না হাজারের আন্দোলনে বাধ্য হয়েই সংসদে পেশ হওয়া লোকপাল বিলটি প্রত্যাহারের কথা জানায় কেন্দ্রীয় সরকার। বৃহস্পতিবার লোকসভায় পেশ হয়েছে নতুন লোকপাল বিল। তবে যে লোকপাল বিলটি সংসদে পেশ হয়েছে তাতে আন্না হাজারের আপত্তি এবং দাবিগুলিকে অনেকাংশেই অগ্রাহ্য করেছে সরকার। যেমন,
*শর্তসাপেক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পদকে লোকপালের আওতায় রাখা হয়েছে। বিদেশনীতি, পরমাণু শক্তি, মহাকাশ গবেষণা, অভ্যন্তরীণ ও বহির্দেশীয় নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলিতে প্রধানমন্ত্রীর পদ তদন্তের আওতায় আসবে না। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করতে হলে নয় সদস্যের লোকপাল বেঞ্চের তিন চতুর্থাংশের ঐকমত্য চাই। তদন্ত ক্যামেরাবন্দি করা হবে না, এবং অভিযোগ খারিজ হলে তার রেকর্ড প্রকাশ করা যাবে না।
* লোকপালের আওতায় সিবিআইকে রাখা হয়নি। তবে নির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের তদন্তের ক্ষেত্রে সিবিআই তদন্তের রিপোর্ট লোকপালকে দেবে। সেই রিপোর্ট লোকপাল প্যানেলের অন্তত তিন সদস্য খতিয়ে দেখার পর চার্জশিট গঠন, খারিজ অথবা বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেবেন। চার্জশিট ফাইল হলে বিশেষ লোকপাল আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে।
* লোকপালের আওতায় কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রুপ সি কর্মীরা আসবেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করবে চিফ ভিজিলেন্স কমিশন। চিফ ভিজিলেন্স কমিশন তার রিপোর্ট দেবে লোকপালকে।
* লোকপাল নিজের থেকে কোনও তদন্তের নির্দেশ দিতে পারবে না। সেজন্য দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ লোকপালের কাছে জমা পড়তেই হবে।
* লোকপালকেও সংসদের কাছে দায়বদ্ধ রাখার চেষ্টা বিলে করা হয়েছে। লোকপাল প্যানেল হবে নয় সদস্যের। তাতে সংরক্ষণের প্রচলিত বিধি মানা হবে। প্যানেলের অর্ধেক সদস্যকে নেওয়া হবে বিচার বিভাগীয় ক্ষেত্র থেকে।
* লোকপাল প্যানেলের চেয়ারম্যানের মেয়াদ পাঁচ বছর। নিয়োগ করবে একটি বিশেষ কমিটি। কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার স্পিকার, লোকসভার বিরোধী দলনেতা ও দেশের প্রধান বিচারপতি। নির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে লোকপাল চেয়ারম্যানকে সংসদে ইমপিচ করা যাবে। সেক্ষেত্রে প্রস্তাবে ১০০ জন সাংসদের সই থাকতে হবে।