স্টেশনে পড়ে পরিযায়ী শ্রমিক মায়ের দেহ, 'ঘুম' থেকে তুলতে চাদর নিয়ে খেলে যাচ্ছে দুধের শিশু!

অত্যধিক গরম, খিদে ও জলকষ্টে ট্রেনেই প্রাণ হারান ওই মহিলা। অত্যধিক গরম ও খিদেয় মৃ্ত্যু হয়েছে বছর দুয়েকের এক শিশুরও।

Updated By: May 27, 2020, 02:56 PM IST
স্টেশনে পড়ে পরিযায়ী শ্রমিক মায়ের দেহ, 'ঘুম' থেকে তুলতে চাদর নিয়ে খেলে যাচ্ছে দুধের শিশু!

নিজস্ব প্রতিবেদন : রেলস্টেশনে প্ল্যাটফর্মের উপর পড়ে মায়ের নিথর দেহ। আর মায়ের গায়ে জড়ানো চাদর নিয়ে খেলে যাচ্ছে বছর তিনেকের এক অবুঝ শিশু। কখনও চাদর ধরে টানছে সে। কখনও সেই চাদর নিয়ে নিজের মাথা ঢাকছে। কখনও চাদর ফেলে রেখে একবার প্ল্যাটফর্মে ঘুরে আসছে। এসেই আবার মায়ের গায়ের চাদর ধরে টানছে। মা শুয়ে আছে... অনেকক্ষণ ধরে। কিছুতেই উঠছে না। আর মাকে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দুধের শিশু। কিন্তু মায়ের আর 'ঘুম' ভাঙছে না। মায়ের 'ঘুম' আর ভাঙবেও না কোনওদিন। কিন্তু অবুঝ শিশুমন তা বুঝবে কী করে? করোনা, লকডাউন, পরিযায়ী শ্রমিক! এই শব্দগুলোর সঙ্গে এখনও যে তাঁর কোনও পরিচিতি-ই ঘটেনি। তাই সে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মাকে 'ঘুম' থেকে তোলার। দেশজুড়ে পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যার এই নিদারুণ মর্মান্তিক ছবি ক্যামেরাবন্দি হয়েছে বিহারে।

পরিবারের লোকদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, গুজরাটে কাজ করতেন ওই মহিলা। বিহারে বাড়ি ফেরার জন্য রবিবার সেখান থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত স্পেশাল ট্রেনে ওঠেন ওই মহিলা। দীর্ঘদিন ধরে খাদ্যাভাবে তাঁর শরীর ভালো ছিল না। এরপর ট্রেনের ভিতর খাবার ও জলের অভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। শেষে সোমবার মুজফ্ফরনগরে ট্রেন ঢোকার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। অত্যধিক গরম, খিদে ও জলকষ্টে ট্রেনেই প্রাণ হারান ওই মহিলা। 

এরপর ট্রেন মুজফ্ফরপুরে পৌঁছালে, ওই মহিলার নিথর দেহ ট্রেন থেকে নামানো হয়। দেহ নামিয়ে যখন প্ল্যাটফর্মে শুইয়ে রাখা হয়েছে, তখনই ওই মহিলার একরত্তি শিশু তাঁর গায়ে জড়ানো চাদর নিয়ে খেলতে শুরু করে। মাকে তোলার জন্য টানাটানি করতে থাকে সে। স্টেশনে উপস্থিত জনৈক ক্যামেরাবন্দি করে সেই ছবি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিয়ো পোস্ট হতেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। শুধু ওই মহিলা নয়, জানা গিয়েছে অত্যধিক গরম ও খিদেয় বিহারের ওই স্টেশনে মৃ্ত্যু হয়েছে বছর দুয়েকের এক শিশুরও। রবিবার দিল্লি থেকে পরিবারের সঙ্গে ট্রেনে উঠেছিল ওই শিশু।

একদিকে করোনার জেরে লকডাউন। কাজ নেই, টাকা নেই, খাবার নেই। অন্যদিকে তীব্র গরম, দাবদাহ, জল নেই। কষ্টটা চতুর্গুণ হয়ে গিয়েছে। বেঁচে থাকার জন্য এক অসম লড়াই লড়ছেন ওরা। পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর জন্য রেল স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সঙ্গে ঠিকমতো কো-অর্ডিনেশন করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।

আরও পড়ুন, মহারাষ্ট্র থেকে ফেরার পথে মৃত্যু পিংলার পরিযায়ী শ্রমিকের, ২৪ ঘণ্টা বাসেই পড়ে রইল দেহ

.