রাত ২টোয় শপথ নিলেন গোয়ার নতুন মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত
বিজেপির একটি সূত্রের খবর, দুই শরিক মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টির নেতা সুদিন দাভালিকর ও গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টির বিজয় সারদেশাইকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে।
নিজস্ব প্রতিবেদন: মনোহর পর্রীকরের উত্তরসূরী পেল গোয়া। নতুন মুখ্যমন্ত্রী হলেন বিজেপির বিধায়ক প্রমোদ সাওয়ান্ত। সোমবার রাত ২টোয় শপথ নিলেন তিনি। ফলে লোকসভা নির্বাচনের আগে শরিকি মতানৈক্য মিটিয়ে গোয়ায় মুখরক্ষা হল মোদী-অমিতের দলের।
রবিবার সন্ধ্যায় প্রয়াত হন গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। বছর ৬৩-র ওই বিজেপি নেতা বছরখানেক ধরে অগ্নাশ্যয়ের ক্যানসারে ভুগছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০১৭ সালে গোয়ায় সরকার গঠনের চাবিকাঠি ছিলেন পর্রীকর। তিনি মুখ্যমন্ত্রী হলে তবেই সমর্থন দেওয়া হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন শরিকরা।
সেই পরিস্থিতিতে গোয়ার সরকার গড়তে পর্রীকর প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে পনজিম ফিরে যান। ফলে সরকার বাঁচাতে ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
আরও পড়ুন: গোয়ার নয়া মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির প্রমোদ সাওয়ান্ত, শরিকি চাপে জোড়া ডেপুটি
তাই তাঁর প্রয়াণে স্বাভাবিকভাবেই গোয়ায় রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। পর্রীকরের বদলি কে হবেন, সেটা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। সেই আলোচনায় ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গড়কড়িও।
সোমবার দিনভর শরিকদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা চলে বিজেপির। প্রত্যেক বিধায়কের সঙ্গে কথা বলেন নিতিন গড়কড়ি। মুখ্যমন্ত্রীর পদের দাবিদার হয়ে ওঠেন একাধিক শরিক নেতা। প্রত্যেকেই চাপ বাড়াতে থাকে বিজেপির উপর।
আরও পড়ুন: গোয়ায় পর্রীকরের উত্তরসূরী বাছতে নাজেহাল বিজেপি
ফলে মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা ও শপথগ্রহণের সময় ক্রমশ পিছোতে থাকে। ইতিমধ্যে গোয়ায় গিয়ে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শেষশ্রদ্ধা জানান প্রয়াত মনোহর পর্রীকরকে। বিকেলেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
তার পর জানা যায় যে গোয়ায় রাজনৈতিক সংকট মিটেছে। বিজেপি ও শরিকদের মতৈক্যে গোয়ার স্পিকার প্রমোদ সাওয়ান্তকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। রাত ১টা ৫০ মিনিটে শপথ নেন প্রমোদ।
একই সঙ্গে শপথ নেন অন্য মন্ত্রীরা। পর্রীকরের আমলে যাঁরা মন্ত্রী ছিলেন, তাঁরাও শপথ নিয়েছেন। বিজেপির একটি সূত্রের খবর, দুই শরিক মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টির নেতা সুদিন দাভালিকর ও গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টির বিজয় সারদেশাইকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে।
আরও পড়ুন: সাদামাঠা জীবন যাপনে গোটা দেশে নজির ছিলেন পর্রীকর, স্কুটারে করে যেতেন বিধানসভা
প্রসঙ্গত, গোয়া বিধানসভার আসন সংখ্যা ৪০। ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৪টি আসনে জিতেছিল। মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টির তিনজন, গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টির তিনজন ও তিনজন নির্দল বিধায়ক নিয়ে সরকার গড়েছিল বিজেপি।
গোয়া বিধানসভায় সরকার গড়ার ম্যাজিক ফিগার ২১। বিজেপির সরকার হয়েছিল তার থেকে দু'জন বিধায়ক (২৩) নিয়ে। ফলে একক বৃহত্তম দল হিসেবে ১৬টি আসন পেয়েও বিরোধী আসনে বসতে হয়েছে কংগ্রেসকে।
কিন্তু সম্প্রতি দু'জন কংগ্রেস বিধায়ক পদত্যাগ করেন। গত মাসে একজন বিজেপি বিধায়ক ফ্রান্সিস ডি'সুজা মারা গিয়েছেন। রবিবার প্রয়াত হলেন মনোহর পর্রীকর। ফলে এখন গোয়া বিধানসভার বিধায়ক সংখ্যা ৩৬ জন। তাই এখন ১৯ হল গোয়ার ম্যাজিক ফিগার। আর বিজেপি সরকার এখন ২১ জন বিধায়কের।
আরও পড়ুন: পানাজির মিরামর সৈকতে পর্রীকরে শেষকৃত্য সম্পন্ন পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়
তবে পরিস্থিতি বুঝে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছিল কংগ্রেস। রাজ্য সরকারের কাছে তারা চলে গিয়েছিল সরকার গঠনের দাবি নিয়ে। যদিও কংগ্রেস সেই সুযোগ পাইনি। শেষপর্যন্ত গোয়ায় অটুট বিজেপির সরকার।