সংসদের কলঙ্কিত দিনের পর দেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আচরণ এখন স্ক্যানারের তলায়

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কতটা দায়িত্ববান? গতকাল সংসদের কলঙ্কিত দিনের পর বড় হয়ে উঠেছে এই প্রশ্ন। সাংসদদের মর্যাদা রক্ষায় তাঁদের দেহ তল্লাসির নিয়ম রাখাই হয়নি। যার ফল ভুগল বৃহস্পতিবারের সংসদ। এরপর কি বদলাবে নিয়ম? নাকি এভাবেই বারবার লজ্জায় মুখ ঢাকবে ভারতীয় গণতন্ত্রের পীঠস্থান?

Updated By: Feb 14, 2014, 11:46 PM IST

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কতটা দায়িত্ববান? গতকাল সংসদের কলঙ্কিত দিনের পর বড় হয়ে উঠেছে এই প্রশ্ন। সাংসদদের মর্যাদা রক্ষায় তাঁদের দেহ তল্লাসির নিয়ম রাখাই হয়নি। যার ফল ভুগল বৃহস্পতিবারের সংসদ। এরপর কি বদলাবে নিয়ম? নাকি এভাবেই বারবার লজ্জায় মুখ ঢাকবে ভারতীয় গণতন্ত্রের পীঠস্থান?

পেপার স্প্রে ছড়ানো, ছুরি বের করে ভয় দেখানোর অভিযোগ, হাতাহাতি, মাইক, কম্পিউটার ভেঙে ফেলা... কি দেখেনি তেরোই ফেব্রুয়ারির সংসদ!

প্রশ্ন, আর কতদিন? পকেটে পেপার স্প্রে কিংবা ছুরি নিয়ে লোকসভায় ঢুকে পড়াটা সাংসদদের কাছে নিতান্তই জলভাত। তল্লাসির কোনও বিধি নেই। কারণ সাংসদদের মতো ভিভিআইপি-দের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে সেই নিয়ম রাখা হয়নি। কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত কি ঠিক? এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বৃহস্পতিবারের ঘটনা। দাবি উঠছে কড়া নিয়ম-কানুন চালু করার।
নিরাপত্তার ব্যাপারে হেলাফেলা এবং সাংসদদের উদাসীনতার ছবি আরও স্পষ্ট হয়ে যায় একটি পরিসংখ্যানে।

রাজ্যসভার রিপোর্ট বলছে, ২০০৭ থেকে ২০১২, এই ছ-বছরে মোট ৬৮১টি সিকিউরিটি টুলস অর্থাত গুরুত্বপূর্ণ নথি হারিয়েছেন সাংসদরা। এর মধ্যে আছে সংসদ থেকে ইস্যু হওয়া পরিচয় পত্র, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বা আরএফ ট্যাগ ও সংসদে ঢোকার অনুমতিপত্র। যা একেবারেই তাঁদের নিজস্ব। হারিয়ে ফেলার তালিকায় আছে পার্কিং পাস।

সংসদ থেকে ইস্যু হওয়া এই সব গুরুত্বপূর্ণ নথি বেহাত হওয়ার ফল হতে পারে মারাত্মক। সেগুলি ব্যবহার করে যে কারোর পক্ষে সংসদের ভিতরে ঢুকে পড়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে কোথায় দাঁড়িয়ে সংসদের নিরাপত্তা? হামলার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

দায়িত্ব কি সত্যিই ঠিকমতো পালন করছেন সাংসদরা?দিনের পর দিন বিক্ষোভের জেরে বন্ধ থাকছে সংসদের কাজকর্ম। আটকে থেকেছে বহু গুরুত্বপূর্ণ বিল। হয়নি জরুরি আলোচনা। ক্ষতি হয়েছে সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা। কিন্তু বন্ধ হয়নি বিক্ষোভ। এবার কি তাহলে স্পিকার, চেয়ারম্যানদের আরও কঠোর হওয়ার সময় এসেছে?
লোকসভা-রাজ্যসভায় গণ্ডগোলে জড়িত সাংসদদের শাস্তির দায়িত্ব স্পিকারের। কোনও সাংসদকে সাসপেন্ড করা কিংবা বহিষ্কারের অনেক উদাহরণ পাওয়া যায় সংসদীয় ইতিহাসে।

গণ্ডগোলের দায়ে চার বার সাসপেন্ড হন রাজ্যসভার সাংসদ রাজ নারাইন। কক্ষ ছাড়তে অস্বীকার করায় প্রতিবারই মার্শাল ডেকে তাকে বের করে দিতে হয়।

গোডে মুরাহারি ১৯৬২তে তিন বার এবং ১৯৬৬তে দু বার সাসপেন্ড হয়েছিলেন।

সাসপেনশনের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৮৯। ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের তদন্তে গঠিত ঠক্কর কমিশনের রিপোর্ট পেশের সময় হাঙ্গামা করার দায়ে এক সপ্তাহের জন্য সাসপেন্ড হয়েছিলেন তেষট্টি জন সাংসদ।

বৃহস্পতিবার সংসদকাণ্ডের পর স্পিকার মীরা কুমার ১৮ জনকে সাসপেন্ড করেছেন।

শুধু লোকসভা-রাজ্যসভাই না, বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভাগুলিও বহুবার বিধায়কদের পেশি আস্ফালনে অশান্ত হয়ে উঠেছে।

কয়েকদিন আগে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় হাতাহাতিতে আহত হন এক বিধায়ক।
পশ্চিমবঙ্গেও বিধানসভা ভাঙচুর, বিধায়কদের হাতাহাতি, আহত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে।

সংসদীয় আইন অনুযায়ী,
কোনও সাংসদ গণ্ডগোল করলে ৩৭৩ নম্বর ধারায় তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে লোকসভা কক্ষ থেকে বের করে দিতে পারেন স্পিকার।

৩৭৫ নম্বর ধারায়, বড় গণ্ডগোলের ক্ষেত্রে স্পিকার দোষী সাংসদদের অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করতে পারেন। অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতুবি করে দেওয়ার ক্ষমতাও দেওয়া আছে স্পিকারের হাতে।

বিরোধী মত প্রকাশের সব রকম সুযোগ আছে সংসদে। বিতর্ক-আলোচনা থেকে ভোটাভুটি, সবই সম্ভব। তা সত্ত্বেও হিংসাত্মক বিক্ষোভে বারবার পণ্ড হচ্ছে সংসদের কাজকর্ম। বাহুবলীদের হাতে সংসদের গরিমা নষ্ট হলে দলমতনির্বিশেষে তাঁদের কড়া শাস্তি দেওয়া হোক। আরও কঠোর হোন স্পিকার-চেয়ারম্যানরা। বিভিন্ন মহল থেকে এখন এই দাবিই উঠছে।

.