1993 Mumbai Bomb Blast: অভিশপ্ত 'ব্ল্যাক ফ্রাইডে'! কীভাবে মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছিল মুম্বই? ৩০ বছর পর ফিরে দেখা

1993 Mumbai Bomb Blast: ঠিক ৩০ বছর আগের একটা তারিখ— ১২ মার্চ, ১৯৯৩। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুসারে দিনটা ছিল শুক্রবার। ভারতের ইতিহাসে যা কুখ্যাত 'ব্ল্যাক ফ্রাইডে' (Black Friday) নামে পরিচিত। বিশ্বের ভয়ঙ্করতম জঙ্গি নাশকতার ঘটনাটি ঘটেছিল। মৃত্যু আর্তনাদ আর আতঙ্কে কেঁপে উঠেছিল মুম্বই (Mumbai)। ১৯৯৫ সালের পর থেকে এই নামেই শহরটিকে সবাই চেনে। সরকারি হিসেবে মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ২৫৭ জনের, জখম হয়েছিলেন ৭০০র বেশি। মতান্তরে, মৃতের সংখ্যা ৩০০-র কিছু বেশি, জখম ১৪০০। তবে মুম্বইকরদের মনে গেঁথে থাকা সেই জখম আগামী অনেক বছর ধরে দগদগে হয়ে থাকবে। 

Reported By: সব্যসাচী বাগচী | Edited By: সব্যসাচী বাগচী | Updated By: Mar 11, 2023, 08:33 PM IST
1993 Mumbai Bomb Blast: অভিশপ্ত 'ব্ল্যাক ফ্রাইডে'! কীভাবে মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছিল মুম্বই? ৩০ বছর পর ফিরে দেখা
১৯৯৩ সালে মুম্বই বিস্ফোরণের মূল মাথা দাউদ ইব্রাহিম এখনও ফেরার।

সব্যসাচী বাগচী 

প্রায় দেওলিয়া হয়ে যাওয়া ভারতবর্ষ (India) তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ড.মনমোহন সিংয়ের (Dr. Manmohan Singh) হাত ধরে সবে ডানা মেলতে শিখেছে। দেশে ঘটেছে আর্থিক উদারীকরণ। সচিন তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkar) তখনও ভারতীয় দলের উঠতি তারকা। সুনীল গাভাসকরের (Sunil Gavaskar) মায়া তখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি ক্রিকেট পাগল দেশ। মোবাইল, গুগল তো অনেক দূরের কথা, বিনোদনের হাতিয়ার ছিল শুধু দুরদর্শন ও বেতার। তাও সবার জন্য সেই উপকরণ বরাদ্দ ছিল না। ঠিক এমন সময় কেঁপে উঠেছিল দেশের মায়ানগরী বোম্বে (Bombay)। আরব সাগরের তীরে বেড়ে ওঠা শহরটার রং রক্তে লাল হয়ে উঠেছিল। চারিদিকে শুধু মৃতদেহ ও তাঁদের ঘিরে পরিবার-পরিজনদের হাউমাউ করে কান্নার আওয়াজ শোনা যেত। 

ঠিক ৩০ বছর আগের একটা তারিখ— ১২ মার্চ, ১৯৯৩। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুসারে দিনটা ছিল শুক্রবার। ভারতের ইতিহাসে যা কুখ্যাত 'ব্ল্যাক ফ্রাইডে' (Black Friday) নামে পরিচিত। বিশ্বের ভয়ঙ্করতম জঙ্গি নাশকতার ঘটনাটি ঘটেছিল। মৃত্যু আর্তনাদ আর আতঙ্কে কেঁপে উঠেছিল মুম্বই (Mumbai)। ১৯৯৫ সালের পর থেকে এই নামেই শহরটিকে সবাই চেনে। সরকারি হিসেবে মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ২৫৭ জনের, জখম হয়েছিলেন ৭০০র বেশি। মতান্তরে, মৃতের সংখ্যা ৩০০-র কিছু বেশি, জখম ১৪০০। তবে মুম্বইকরদের মনে গেঁথে থাকা সেই জখম আগামী অনেক বছর ধরে দগদগে হয়ে থাকবে। 

সেই দুপুরে মাত্র ২ ঘন্টা ১০ মিনিটের হত্যালীলায় প্রায় শেষ হতে বসেছিল বাণিজ্য নগরী। মোট ১২টি জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল জঙ্গিরা। সেই হামলার 'কালা দিন' অনেকের চোখে এখনও ভেসে ওঠে। আরডিএক্স-এর (RDX) সেই কান ফাটিয়ে দেওয়া শব্দ এখনও অনেকের কানে একনাগাড়ে বেজে যায়। প্রিয়জনদের সেই দুর্দশা মনে করে ঘুম ভেঙে যায় অনেক মুম্বইকরের! 

মুম্বই বিস্ফোরণের নেপথ্য কাহিনী....  

মুম্বই বিস্ফোরণের নেপথ্যে ছিল বাবরি মসজিদ ভেঙে দেওয়া (Demolition Of Babri Masjid)। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং তাদের সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা বাবরি মসজিদ গুড়িয়ে দেয়। পুরো ভারত জুড়েই দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এই দাঙ্গায় গোটা দেশে প্রায় ২০০০ মানুষ মারা যান, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন মুসলমান। সেই হামলার আঁচ পড়েছিল মুম্বইতেও। টাইগার মেমন-সহ (Tigar Memon) বেশ কয়েকজনের অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এমনটাই ছিল হিন্দুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। সেই অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছিল দাউদ ইব্রাহিম (Dawood Ibrahim), টাইগার এবং'ডি কোম্পানি'-র (D Company) বেশ কয়েকজন সক্রিয় সদস্য। প্রাথমিক ভাবে লালকৃষ্ণ আদভানি (Lal Krishna Advani) ও প্রয়াত বালা সাহেব ঠাকরেকে (Bal Thackeray) হত্যা করার ছক কষা হয়েছিল। কিন্তু দুই প্রবীণ নেতার কঠোর নিরাপত্তা এবং আরও বড় আকারের নাশকতার জন্য শহরের বুকে হত্যালীলা চালানোকেই সঠিক মনে করেছিল কুচক্রীরা। যদিও বোমা বিস্ফোরণের কয়েকদিন আগে গোটা পরিবারকে দুবাই পাঠিয়ে দেওয়ার পর, ১১ মার্চ সকালের দিকে টাইগারও দুবাই চলে যায়। এরপর আর সে আর ভারতে ফিরে আসেনি। 

কী হয়েছিল ১৯৯৩-এর ১২ মার্চ? সেই দুপুরে মোট ১২টি জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটে। সেই দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক..... 

১) দুপুর ১:৩০ মিনিট- প্রথম বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ বিল্ডিংয়ের বেসমেন্ট, মৃত ৮৪, আহত ২১৭ 

২) দুপুর ২:১৫ মিনিট- নারসি নাথা স্ট্রিট, কাত্থা বাজার, মৃত ৪, আহত ১৬ 

৩) দুপুর ২:৩০ মিনিট- শিব সেনা ভবন লাগোয়া পেট্রোল পাম্প, মৃত ৪, আহত ৫০ 

৪) দুপুর ২:৩৩ মিনিট- নারিম্যান পয়েন্ট, এয়ার ইন্ডিয়া বিল্ডিং, মৃত ২০, আহত ৮৭ 

৫) দুপুর ২:৪৫ মিনিট- মাহিমের জেলে কলোনি, মৃত ৩, আহত ৬ 

৬) দুপুর ২:৪৫ মিনিট- সেঞ্চুরি বাজার, ওরলি, মৃত ১১৩, আহত ২২৭ 

৭) দুপুর ৩:০৫ মিনিট- জাভেরি বাজার, মৃত ১৭, আহত ৫৭ 

৮) দুপুর ৩:১০ মিনিট- বান্দ্রার হোটেল সি রক 

৯) দুপুর ৩:১৩ মিনিট- দাদারের প্লাজা সিনেমা, মৃত ১০, আহত ৩৭ 

১০) দুপুর ৩:২০ মিনিট-হোটেল জুহু, আহত ৩ 

১১) দুপুর ৩:৩০ মিনিট- সাহার বিমানবন্দরের টার্মিনাল 

১২) দুপুর ৩:৪০ মিনিট- হোটেল এয়ারপোর্ট, মৃত ২, আহত ৮ 

অধিকাংশ এলাকাতেই বিস্ফোরণ ঘটেছিল গাড়ি বোমায়। কয়েকটি জায়গায় স্কুটার বোমা ব্যবহার করেছিল জঙ্গিরা। হোটেলগুলিতেও স্যুটকেস বোমা রেখে এসেছিল অতিথির ছদ্মবেশে ঘর ভাড়া নেওয়া কয়েকজন জঙ্গি। শহরের মোট ১৩টি জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা থাকলেও, একটি জায়গার বোমা অকেজো হয়ে যায়। বিপুল সংখ্যক মৃত্যু আর বেনজির ধ্বংসলীলায় হতচকিত ছিল মু্ম্বই। চমকে উঠেছিল গোটা দেশ। 

আরও পড়ুন: Swati Maliwal: 'ছোটবেলায় বাবার হাতেই আমার যৌনহেনস্থা ঘটেছিল, রক্তের দাগ এখনও ভুলিনি'! শুনে স্তম্ভিত দেশ...

আরও পড়ুন: Tejashwi Yadav: এবার তেজস্বী যাদবকে তলব! জমি-দুর্নীতি মামলায় তাঁকে ডেকে পাঠাল সিবিআই...

কীভাবে ছক কষেছিল দাউদ ইব্রাহিম? 

বিস্ফোরণের কয়েকদিন পরেই উঠে এসেছিল দাউদের নাম। মুম্বই থেকে পালিয়ে পাকিস্তানে ঘাঁটি গাড়া আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ এবং পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই (ISI)এই ভয়ংকর নাশকতার ছক তৈরি করেছিল বলে জানা যায়। দাউদের মূল সহযোগী হিসেবে উঠে এসেছিল 'ডি কোম্পানি'-র সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যবসায়ী (পড়ুন স্মাগলার) টাইগারের নাম। নাশকতা চালানোর জন্য ১৯ জন যুবককে বেছে নিয়েছিল টাইগার। তাদেরকে সে দুবাই (Dubai) ঘুরিয়ে পাকিস্তানে (Pakistan) পাঠায়। পাকিস্তানে অস্ত্রশস্ত্র এবং বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রশিক্ষণ নিয়ে সেই ১৯ মুম্বইতে ফেরে। 

শিব জয়ন্তী উদযাপনের দিন হামলা চালানোর ছক কষেছিল জঙ্গিরা। কিন্তু যে ১৯ জন পাকিস্তান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুম্বই ফিরেছিল, তাদের মধ্যে গুল নুর মহম্মদ শেখ নামে এক জন ৯ মার্চ, ১৯৯৩ পুলিসের হাতে ধরা পড়ে যায়। নাশকতার ছক ফাঁস হয়ে যাবে বুঝতে পেরে আর দেরি করেনি সন্ত্রাসবাদীরা। ১২ মার্চই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেওয়া হয় মুম্বইতে।  

মুম্বই বিস্ফোরণের মামলা 

এই বিস্ফোরণের জন্য টেররিস্ট অ্যান্ড ডিসরাপ্টিভ অ্যাক্ট (Terrorist and Disruptive Activities Act) এর আওতায় মামলা হয়। ১৯৯৫ সালে শুরু হয় মামলার কাজ। ১২৯ জন অভিযুক্তর মধ্যে ১০০ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় ২০০৬ সালে। যদিও এখনও অনেকে ধরাই পরেনি। যেমন টাইগার মেমন, তাঁর ভাই আয়ুব মেমন, দাউদ ইব্রাহিম নিজে সহ আরও অনেকে। মূল অভিযুক্ত দাউদ এখনও পাকিস্তানে। টাইগারও পাকিস্তানে বলেই খবর। যদিও টাইগারের ভাই ইয়াকুব মেমনের (Yakub Memon) ফাঁসি হয়ে গিয়েছে ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই। মেমন পরিবারে আরও তিন সদস্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছে। তবে দাউদ ও টাইগার এখনও অধরা। 

১৯৯৩-এর সেই বিস্ফোরণের সময় দাউদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল আবু সালেম (Abu Salem)। নাশকতার ষড়যন্ত্রে সেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল। গ্রেফতারি এড়াতে সে প্রথমে মধ্য এশিয়ায় আশ্রয় নেয়। পরে চলে যায় পর্তুগালে। কয়েক বছর পর সেই দেশের রাজধানী লিসবন থেকেই পরে আবু সালেমকে থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল বিশেষ টাডা আদালত (TADA)। আবু সালেমের সঙ্গে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল মুস্তফা দোসা, ফিরোজ খান, তাহের মার্চেন্ট, রিয়াজ সিদ্দিকি এবং করিমুল্লা খানও। তবুও বোমা বিস্ফোরণের নিহত ও আহতদের পরিবার এখনও শান্তি পাননি। কারণ মূল দুই পান্ডা যে এখনও ফেরার। 

শুধু ১৯৯৩ সালের ১২ মার্চ নয়। এরপর ২০০৬ সালের ১১ জুলাই মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনে বোমা বিস্ফোরণ করা হয়। ঠিক দু'বছর পর ২০০৮ সালের ২৬ অক্টোবর আজমল কাসাভ ও তার অন্য জঙ্গি সতীর্থরা ফের মুম্বইকে রক্তাক্ত করেছিল। তবে এত ঝড় সহ্য করার পরেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এই শহর। নিপীড়িত মানুষগুলোর দলা পাকানো কান্নার মাঝেও সমুদ্রের অগণিত ঢেউয়ের মতোই হাসছে খেলছে মুম্বই। 

তথ্যসূত্র: (মুম্বই পুলিসের বিশেষ আর্কাইভ। এবং অনুরাগ ক্যাশপের 'ব্ল্যাক ফ্রাইডে' সিনেমা)

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App) 

.