এ যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ! ভেনেজুয়েলার খাদ্য সংকটের মতোই চলবে লুঠ, সাহায্যের আর্তি নাট্যকর্মীদের
নাট্যকর্মী নিরুপমবাবু তাই হয়তো বললেন, "নিম্নবিত্ত মানুষরা ভেনিজুয়েলার খাদ্য সংকটের সময়ের মতোই লুট করে খাবে, রেশন দোকানের দিকে তাকালেই সেই হাহাকারের ছবি ধরা পড়ছে।"
নিজস্ব প্রতিবেদন: হাহাকার! এই শব্দটাতেও বর্তমান পরিস্থিতি ব্যক্ত করা যায় না। ছবিটা স্পষ্ট, পুরুলিয়া থেকে গোবরডাঙা। ভারত থেকে মেক্সিকো। শিল্পীসত্ত্বাও কোনও মঞ্চে নয়, বাস্তবের রঙ্গমঞ্চে দাঁড়িয়ে বলছে, ভাত চাই ভাত। মেক্সিকোর জোকালোয় পথশিল্পীরা পোস্টার হাতে রাস্তায় নেমেছেন। পোস্টারে লেখা, “আর পারছি না। এবার সাহায্য চাই।” জোকার সেজে, ব্যাটম্যান সেজে, অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন কাজের মানুষেরা শেষমেশ রাস্তায় নামতে বাধ্য হলেন। টানা লকডাউনের জেরে হাতে কাজ নেই। খাবেন কী? সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু তাতে কি আর হয়!
পেশায় ঝুমুর শিল্পী, পুরুলিয়ার বিজয় দাস, জনসংস্কৃতি নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত। এই চরম দুর্দশায় নিজের অবস্থার বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, "পরিস্থিতি বড়ই খারাপ, বড়জোর আর একমাস টেনেটুনে চালানো যাবে। তারপর?" অর্থাৎ সুদূর মেক্সিকো কেন, এ বাংলার পরিস্থিতিও তাই। যাঁরা যাত্রা, নাটক করে সংসার চালাতেন তাঁদের মাথার উপর যেন বাজ ভেঙে পড়েছে! কতদিন হয়ে গেল হাতে টাকা আসেনি। আর কাজ! কেউ কেউ যে হাতে বড় বড় শিল্পীদের মেকাপ করেছে, সেই হাতে দুমুঠো ভাত পাওয়ার জন্য ব্রাসের বদলে দাড়িপাল্লা তুলে নিচ্ছে।
আরও পড়ুন:পাথর বৃষ্টি-পাল্টা টিয়ার গ্যাস, বাড়ি ফেরা নিয়ে সুরাটে খণ্ডযুদ্ধ পুলিস-পরিযায়ী শ্রমিকদের
মেক্সিকোর শিল্পীরা রাস্তায় নেমে বলছেন," হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার খরচ কই?" শুধুই প্রশ্ন, উত্তর অজানা। যে নাট্যকর্মী, নাটকের সময় দৌড়ে এসে আগেভাগে নাটকের আবহ সঙ্গীতের পসরা সাজিয়ে বসে যেত, কিংবা যে সিড়ি দিয়ে উঠে আলোটা বাঁধত, তাঁদের কথা কেউ কী ভাবছে।
রানাঘাট সৃজন নাট্যদলের হয়ে নাট্যচর্চা করেন নিরুপম ভট্টাচার্য। তিনি বলছেন কয়েকজন নাট্যকর্মীরা এদের কথা ভেবে সাধ্যমত কাজ করছেন। কিন্তু অনেকাংশেই কাজগুলো কলকাতা কেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। জেলায় কম হলেও ৪৮ হাজার নাট্যকর্মী রয়েছেন। তাঁদের কী হবে? তাও কিছু নাটকের দল সাধ্যমতো তাঁদের কথা ভেবে কাজ করছে এই অনেক। তিনি বললেন, "এটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধই বটে, পরমাণু বোমা হয়তো পড়ছে না। কিন্তু তাঁর জায়গায় অনাহার সেই কাজ করে দিচ্ছে।"
ভবিষ্যতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই যে সকলে হইহই করে নাটক দেখতে চলে আসবে এমনটাও মানতে নারাজ নাট্যকর্মীরা। সেক্ষেত্রে তাঁদের ভবিষ্যৎ! গোয়ার নাট্যশিল্পী রাজদীপ নায়ক, একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন তাঁদের রাজ্যের প্রায় ১৫০০ নাট্যকর্মী, যারা দুবেলা ভাতের জন্য় নাটকের সঙ্গে যুক্ত, লকডাউনে তাঁদের বেহাল দশা। সরকারের সাহায্য চাই।
শিল্পের কোনও দেশ হয় না প্রত্যেকটা মঞ্চের একটি অন্য মঞ্চের সঙ্গে নাড়ির টান রয়েছে। গোয়া, গোবরডাঙা কিংবা কল্যাণী সব জায়গারই ছবিটা সমান। তাই আজ মেক্সিকোয় প্রতিবাদ হচ্ছে কাল হয়তো ভারতে হবে। নাট্যকর্মী নিরুপমবাবু তাই হয়তো বললেন, "নিম্নবিত্ত মানুষরা ভেনিজুয়েলার খাদ্য সংকটের সময়ের মতোই লুট করে খাবে, রেশন দোকানের দিকে তাকালেই সেই হাহাকারের ছবি ধরা পড়ছে।"