ওড়িশা সাইক্লোনের পরে ছিল না হদিশ, শ্রাদ্ধও হয়ে গিয়েছিল! ফিরলেন সেই 'মৃত'...
Odisha Super Cyclone 1999: ওড়িশার সুপার সাইক্লোনে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন পুরী জেলার পাত্তি গ্রামের এই কীর্তিচাঁদ। তাঁর পরিবার বহু অপেক্ষার পরে ভেবে নিয়েছিলেন তিনি হয়তো মারা গিয়েছেন। তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর নামে ডেথ সার্টিফিকেট বের করা হয়। কিন্তু জীবনে ফিরলেন তিনি! একাকিত্বের অন্ধকার থেকে সাহচর্যের আলোয়।
কমলাক্ষ ভট্টাচার্য: শ্রাদ্ধশান্তি হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু ফিরলেন সেই 'মৃত'! না, এ কোনও ভূতের গল্প নয়, রহস্য়রোমাঞ্চও নয়। এ ঘোর বাস্তব। মৃত্যু থেকে জীবনে ফিরলেন বছর তিয়াত্তরের ওড়িশার কীর্তিচাঁদ। ফিরলেন প্রায় বিস্মৃতির অতল থেকেই। প্রায় ২৩ বছর পরে নিজের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হলেন তিনি। হলেন হ্যাম রেডিয়োর সৌজন্যে, বিশাখাপত্তনমের মিশনারিজ অফ চ্যারিটির কল্যাণে।
কী ঘটেছিল?
১৯৯৯ সালে ওড়িশার সুপার সাইক্লোনে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন পুরী জেলার পাত্তি গ্রামের এই কীর্তিচাঁদ। সে এক ভয়ংকর সময়। দিন দিন মৃতের সংখ্যা বাড়ছিল। অ-ভূতপূর্ব সেই ঝড়ের ধ্বংস-ছবি প্রত্যক্ষ করে তখন প্রতিদিনই চমকে উঠছেন মানুষ। কীর্তিচাঁদের পরিবারও বহু অপেক্ষার পরে ভেবে নিয়েছিলেন তিনি হয়তো মারা গিয়েছেন। তাঁর শেষকৃত্য যথাবিহিত অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর নামে ডেথ সার্টিফিকেট বের করা হয়। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারকে ক্ষতিপূরণের টাকাও দেয় ওড়িশা সরকার।
আরও পড়ুন: Tipu Sultan Birth Anniversary: বাঘচিহ্নিত সিংহাসনে যেন সত্যিই বসে থাকতেন এক ব্যাঘ্রপুরুষ...
এদিকে কীর্তিচাঁদ তখনও জীবিত! তাঁর পরিচয় তখনও জ্ঞাত নয়। তবে ২০০৪ সালে তাঁকে বিশাখাপত্তনমের রাস্তায় দেখতে পেলেন স্থানীয় এক ভদ্রলোক। তিনি মাঝে-মাঝে কীর্তিচাঁদকে খেতে-টেতে দিতেন। পরে তিনি ক্রমে দেখেন, ওই ভদ্রলোক ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তখন বিশাখাপত্তনম মিশনারিজ অফ চ্যারিটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সেটা ২০১২ সাল। তার পর থেকে তিনি সেখানেই ছিলেন। সেখানেই চিকিৎসা চলছিল তাঁর। কিন্তু স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। নাম-ধাম কিছুই বলতে পারছিলেন না। বলার মধ্যে বলছিলেন শুধু-- 'বাবু'! বিশাখাপত্তনম মিশনারিজ অফ চ্যারিটিও বহু চেষ্টা করে কীর্তিচাঁদের সাকিনঠিকানা বের করে তাঁকে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দিতে। কিন্তু ওই প্রায়-দুর্বোধ্য এক 'বাবু'-র সূত্র থেকে প্রায় কোনও রহস্যের কিনারাই করা যায় না। অবশেষে তারা হ্যাম রেডিয়োর সঙ্গে যোগাযোগ করে। হ্যাম রেডিয়ো ক্রমে বুঝতে পারে, এই ভদ্রলোক ওড়িশাবাসীই। কেননা, ওডিশার মানুষজনই একমাত্র কোনও কথার উত্তরে 'হ্যাঁ'-এর পরিবর্তে 'বাবু' বলে থাকেন। তখন আবার নতুন করে খোঁজ-খোঁজ। অবেশেষে, সেই খোঁজাখুঁজির শেষে মুশিকল আসান। ফিরলেন তিনি ফিরলেন। প্রায় দু'দশকেরও বেশি সময় ধরে বিচ্ছিন্ন থাকার পরে নিজের পরিবারের লোকজনদের মুখ দেখতে পেলেন কীর্তিচাঁদ! জীবনেই তো ফিরলেন! একাকিত্বের অন্ধকার থেকে সাহচর্যের আলোয়। হ্যাম রেডিয়োর কল্যাণে তাঁকে ফিরে পেয়ে স্পষ্টতই কৃতজ্ঞ আপ্লুত তাঁর পরিবার। হ্যাম রেডিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়েছে তারা।
বিশাখাপত্তনমে মিশনারিজ অফ চ্যারিটির নির্মল হৃদয় হোমে পড়ে থাকা কার্যত স্থবির হয়ে যাওয়া অসুস্থ এই মানুষটিকে তাঁর সাকিনে ফেরাল যারা, সেই বাংলার হ্যাম রেডিও, কী বলছে তারা?
হ্যাম রেডিয়ো, পশ্চিমবঙ্গ রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগবিশ্বাস বলেন-- বিশাখাপত্তনমের মিশনারিজ অফ চ্যারিটির তরফে সাদাজ হোসেন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁরা বলেন, এক ভদ্রলোককে তাঁরা পেয়েছেন, ২০১২ সালে। তিনি তাঁদের হোমেই আছেন। তিনি নাম-ঠিকানা ইত্যাদি কিছুই বলতে পারছেন না। স্মৃতিশক্তি নেই। প্রায় মানসিক ভারসাম্যের মতো অবস্থা। তারপর আমরা হ্যাম রেডিয়ো নেটওয়ার্কে পুরীতে তাঁর ছেলেকে পাই। আমরা জানতে পারি, ১৯৯৯ সালের ওড়িশা সুপার সাইক্লোনে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন। ইতিমধ্যেই তিনি মৃত বলেও ঘোষিত এবং ওড়িশা সরকারের তরফে ক্ষতিপূরণও তাঁর পরিবার পেয়েছে। যাই হোক, আমরা বেহরামপুরে তাঁর ছেলের হাতে তাঁকে তুলে দিচ্ছি। বিশাখাপত্তমন মিশনারিজ অফ চ্যারিটি থেকে তিনি বেহরামপুরের মিশনারিজ অফ চ্যারিটিতে আসছেন। আমরা খুবই গর্বিত ও আনন্দিত এই কারণে যে, এমন একজন মানুষকে আমরা তাঁর পরিবারে ফিরিয়ে দিতে পারলাম।