ধ্বনিভোটে রাজ্যভাগের প্রস্তাব পাশ করালেন মায়াবতী
আদর্শগত মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে রেখে মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীকে কোণঠাসা করতে একজোট হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের বিরোধী দলগুলি। কিন্তু স্বভাবসিদ্ধ স্টাইলে সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করলেন বহেনজি।
আদর্শগত মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে রেখে মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীকে কোণঠাসা করতে একজোট হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের বিরোধী দলগুলি। কিন্তু স্বভাবসিদ্ধ স্টাইলে সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করলেন বহেনজি। সোমবার, উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার দু`দিনের বিশেষ শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনই ধ্বনিভোটে উত্তরপ্রদেশ ভেঙে নতুন চার রাজ্য গড়ার প্রস্তাব পাশ করিয়ে নিলেন বিএসপি সুপ্রিমো। আগামী মার্চ মাসের বিধানসভা ভোটের আগে বহেনজির এই মাস্টারস্ট্রোক বিজেপি, সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেসকে যথেষ্ট বিপাকে ফেলল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
উত্তরপ্রদেশ 'অবলুপ্তির' প্রস্তাবের পাশাপাশি এদিন রাজ্য বিধানসভায় পাশ করিয়ে নেওয়া ভোট 'অন অ্যাকাউন্ট'। তার পরই বিধানসভার অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতুবি করে দেওয়া হয়। মনে করা হচ্ছে চলতি মাসেই রাজ্যপালের কাছে বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী। অতঃপর রাজ্য বিধানসভায় গৃহীত উত্তরপ্রদেশ ভাগের ওই প্রস্তাব পাঠানো হবে কেন্দ্রের কাছে। প্রথমে সেটিতে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের অনুমোদনের সিলমোহর লাগাতে হবে। তার পর সংসদের দুই কক্ষে সেই প্রস্তাব দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতায় পাশ করাতে হবে।
মায়াবতীর ব্লু-প্রিন্টে উত্তরপ্রদেশ ভেঙে নতুন চার রাজ্য-বুন্দেলখণ্ড, পূর্বাঞ্চল, অওধপ্রদেশ এবং পশ্চিমিপ্রদেশ গড়ার কথা বলা হয়েছে। গোরখপুর-সহ রাজ্যের পূর্বের ৩২ টি জেলা নিয়ে গঠিত হবে পূর্বাঞ্চল। সেখানে ৩১টি লোকসভা আসন ও ১৫৮ বিধানসভা আসন থাকবে। রাজধানী লখনউ-সহ উত্তরপ্রদেশের মধ্য ভাগের ১৪টি জেলা নিয়ে তৈরি হবে অওধ প্রদেশ। যার মধ্যে থাকবে ২৪টি লোকসভা আসন ও ১২১টি বিধানসভা আসন। পশ্চিমের ২২টি জেলা নিয়ে গঠিত হবে পশ্চিমি প্রদেশ। গাজিয়াবাদ এবং মিরাট শহর সম্বলিত এই রাজ্যে থাকবে ১৮টি লোকসভা ও ৮৯টিবিধানসভা আসন। প্রস্তাবিত চতুর্থ রাজ্যের নাম বুন্দেলখণ্ড। সেখানে জেলা এবং লোকসভা আসন সংখ্যা ৭। বিধানসভা কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৫।
৪০৩ আসন বিশিষ্ট উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় বর্তমানে ৩৯৭ জন বিধায়ক রয়েছেন। এদের মধ্যে ২২০ জন বিএসপির। কিন্তু আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের জন্য মায়াবতী-ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় ঠাঁই মেলেনি ৭০ জনের। এঁদের কয়েকজন ইতিমধ্যেই কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল এই টিকিট না পাওয়া বিধায়কদের সকলেই বিদ্রোহ করবেন। ফলে বিধানসভায় সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে বিএসপি সরকার। কিন্তু কার্যক্ষত্রে তা হয়নি।
রাজনৈতিক মহলের মতে, রীতিমতো ভোট রাজনীতির হোমওয়ার্ক করেই গোবলয়ের হৃদয়পুরে চারটি নতুন রাজ্যের প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়েছেন কাঁসিরামের মানসকন্যা। দীর্ঘদিন থেকেই বুন্দেলখণ্ডের `বঞ্চনা` নিয়ে সরব রাহুল গান্ধী। এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে মধ্যপ্রদেশ সীমানা লাগোয়া এই অঞ্চলে চমকপ্রদ ফল করেছে কংগ্রেস। বঞ্চনার অভিযোগ রয়েছে পূর্বাঞ্চলেও। সাম্প্রতিককালে বহিষ্কৃত সমাজবাদী সাংসদ অমর সিংয়ের নেতৃত্বে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই অঞ্চলে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবিতে ক্রমশ আন্দোলন দানা বাঁধছে। বিএসপি নেত্রীর অঙ্ক, নতুন রাজ্য গড়ার প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দুই অঞ্চলের অধিবাসীদের মানসিক `ক্ষত প্রশমন`-এর কাজ করবে।
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠ বলয়ের জেলাগুলি নিয়ে পৃথক হরিত্প্রদেশ গঠনের প্রস্তাব অনেক দিনের পুরনো। আরএলডি সুপ্রিমো অজিত সিংয়ের এই দাবির পিছনে জনসমর্থনও রয়েছে যথেষ্টই। নতুন `পশ্চিমিপ্রদেশ` রাজ্য গড়ার এই উদ্যোগে জাঠ ভোটের একাংশ অজিত সিংকে ছেড়ে বিএসপি-মুখী হবে বলেই বিএসপি নেতৃত্বের আশা।
অন্য দিকে অওধপ্রদেশ রাজ্য গড়ার প্রস্তাব অনেকটাই বহিনজীর মস্তিষ্কপ্রসূত। সাংগঠনিক ভাবে এই অঞ্চলে বিএসপি`র জনভিত্তি কিছুটা দুর্বল। নয়া রাজ্য গঠনের প্রস্তাব এনে মায়াবতী অযোধ্যা-লাগোয়া অঞ্চলে সমাজবাদী পার্টি ও বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক ভাঙাতে চাইছেন বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা। যদিও সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে মায়াবতী জানিয়েছেন, তাঁর রাজ্যভাগের প্রয়াসের পিছনে কোনও ভোটের গিমিক নেই। জনগণের স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রেখেই এই সিদ্ধান্ত। মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, রাজ্যের ৭৫টি জেলাকে কোনও একটি জায়গা থেকে শাসন করা অসম্ভব। সুষ্ঠু ভাবে প্রশাসনিক কাজকর্ম চালানোর জন্যই রাজ্য ভাগের প্রয়োজন।