বৃন্দাবনে বিধবাদের দোল, সাদা শাড়িতে লাল বসন্ত, সিঁথিতে প্রেমের পরশ
সৌরভ পাল
"রঙ দে চুনারিয়া,
রঙ দে,
রঙ দে চুনারিয়া।
অ্যায়েসে রঙ দে কে রঙ নাহি ছুটে।
অ্যায়েসে রঙ দে কে রঙ নাহি ছুটে,
ধোবিয়া ধোয়ে চাহে সারি উমারিয়া...।।"
লাল রঙ নয়,
নয় সবুজ,
নিজের রঙেই রাঙা হবে ওরা। কারোর বয়স ১৯। কারো ২৯, কারোর ৫২। কেউ কেউ আছেন ৮০। বয়সের ফারাক থাকলেও এরা সবাই এক শব্দের বাঁধনে বাঁধা। 'বিধবা'। এমন এক শব্দ, যা কেড়ে নিয়েছে ওদের জীবনের সমস্ত রঙ। বসন্তের ফাগুনে শব্দকে জব্দ করে বৃন্দাবনের আকাশে বাতাসে রাসলীলা, রঙের মেলা।
'ওরে ভাই, ফাগুণ লেগেছে বনে বনে...', তাই মনের সমস্ত ধূসর অন্ধকার সাদা কালোকে, রামধনু রঙে রঙিন করে দেবে বৃন্দাবন। সাদা রঙের বিধবা বসন রঙিন হবে লালে। উত্তর প্রদেশের বৃন্দাবনে গোপীনাথ মন্দিরে রঙের খেলায় মাতোয়ারা হবেন ১০০০ বিধবা। বৃন্দাবনের সবথেকে পুরনো মন্দির গোপীনাথ মন্দির। এখানে আশ্রিতা সবাই 'গোপী'। আর সহস্র হাজারো গোপীদের নাথ একজনই, ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণ।
রঙের প্যালেট গুলোর কথা কার না মনে আছে? সাদা পাতা আর ক্যানভাস গুলো মনের ভাবনায় তুলির টানে পায় জীবন, ফুটে ওঠে জলছবি। মনের প্রতিচ্ছবি। বৃন্দাবনের গোপীনাথ মন্দিরের সাদা ক্যানভাসে মনের প্রতিচ্ছবিই তুলে ধরে হোলি। ললাটে বিন্দু বিন্দু রঙের ফোটা, আয়রে আমার লাল, আয়রে আমার নীল, মুখে মুখে হাসি আর চোখের কোনে হীরে জমাট বাধা। ৩৬৫ দিনের একটা দিন। ভক্ত আর ভক্তের মিল মর্তেই। যাদের রঙ মানে কেবলই সাদা, তাঁদের জীবনে এইদিন ঈশ্বর মানে লাল-নীল-হলুদ-সবুজ। মনের অন্দর থেকে সুরে তালে ছন্দে যেন কোরাস বাজে, "মোহে, রঙ দে চুনারিয়া"।
আর বিদায় বেলায় যে সুরে মূর্ছে যায় গোটা বৃন্দাবন, "যাও গো এবার যাবার আগে রাঙিয়ে দিয়ে যাও"। বসন্ত যেমন শান্তিনিকেতনে, ফাগুণ তেমন বৃন্দাবনেও। "বুরা না মানো, হোলি হ্যায়"।