Year Ender 2022: গুজরাতে গেরুয়া ঝড় থেকে রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রা... একনজরে বাইশের দেশ
বছরের শুরু হয়েছিল রাজনৈতিকভাবে তুঙ্গে থাকা উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের মরসুমের সঙ্গে এবং শেষ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাতে বিজেপি-র ব্যাপক জয়ের দিয়ে। উল্লেখযোগ্যভাবে, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি- সেন্ট্রাল বুরু অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-ও খবরের শিরোনামে রয়েছে।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: আমরা ২০২২ সালের শেষ পর্বে পৌঁছে গিয়েহি। ২০২২ দেশের সালটি মানুষের জন্য একটি রোলার কোস্টার রাইড ছিল। দুই বছরের বিধিনিষেধ পেরিয়ে প্রায় একটি কোভিড-মুক্ত বিশ্বে শ্বাস নিয়েছি আমরা। কোভিড নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরেই দেশের রাজনৈতিক করিডোর প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। রাজনৈতিকভাবে উল্লেখযোগ্য কিছু স্মৃতি রেখে বিদায় নিতে চলেছে ২০২২। বছরের শুরু হয়েছিল রাজনৈতিকভাবে তুঙ্গে থাকা উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের মরসুমের সঙ্গে এবং শেষ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাতে বিজেপি-র ব্যাপক জয়ের দিয়ে। উল্লেখযোগ্যভাবে, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি- সেন্ট্রাল বুরু অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-ও খবরের শিরোনামে রয়েছে।
২০২২ সালের নির্বাচন
২০২২ সালে, গোয়া, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব, মণিপুর, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, গুজরাট এবং দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের (এমসিডি) নির্বাচন হয়েছে। ২০২২ সালেও ভারতীয় জনতা পার্টির আধিপত্য অব্যাহত রয়েছে। এই গেরুয়া দল পাঁচটি রাজ্য নির্বাচনে জিতেছে। বিজেপি জিতেছে গোয়া, উত্তরাখণ্ড, মণিপুর, উত্তর প্রদেশ এবং গুজরাত। সেখানে কংগ্রেস শুধুমাত্র একটি রাজ্যে জয় পেয়েছে সেটি হিমাচল প্রদেশ। সবচেয়ে বড় চমক দেখা গিয়েছে পঞ্জাবে। সেখানে আম আদমি পার্টি (AAP) কংগ্রেসকে মসনদ থেকে সরিয়ে নতুন সরকার গঠন করেছে। AAP তার প্রথম পূর্ণাঙ্গ রাজ্যে জয় পেয়েছে। ইউপি এবং গুজরাতে বিজেপির জয়ও ছিল রেকর্ড-ব্রেকিং। ৩৭ বছরে, প্রথমবার কোনও শাসক দল পর পর দুইবার উত্তর প্রদেশে ক্ষমতায় ফিরেছে। গুজরাতে, বিজেপি সপ্তমবার সরকার গঠন করেছে। ১৮২টি আসনের মধ্যে ১৫৬টি আসন জিতে তারা নিজের রেকর্ড ভেঙেছে। পুরসভায় ১৫ বছরের বিজেপির আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে AAP এমসিডি নির্বাচনেও জিতেছে।
কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন
২৫ বছর পরে অনুষ্ঠিত হওয়ায় কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন বড় খবর। অভ্যন্তরীণ নির্বাচন না করা এবং পরিবারবাদী রাজনীতির পক্ষ নেওয়ার জন্য দলটির প্রচুর সমালোচনা করা হয়েছিল। তাই, সমালোচকদের চুপ করানোর জন্য শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস আভ্যন্তরীণ নির্বাচন করে। এই নির্বাচন বিতর্কমুক্ত ছিল না। এর আগে, জানা গিয়েছিল যে গান্ধী পরিবারের অনুগত অশোক গেহলোত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিন্তু তিনি তার রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পদ শচীন পাইলটের হাতে ছাড়তে অস্বীকার করে। কোনওমতে পার্টি এই বিরোধিতার মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। গান্ধী পরিবারের সমর্থন নিয়ে মল্লিকার্জুন খার্গে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং অন্য পক্ষ থেকে ছিলেন শশী থারুর। তনি G-23 সদস্যদের মধ্যে একজন ছিলেন যারা পার্টিতে আমূল সংস্কার চেয়েছিলেন। নির্বাচনটি ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছিল, এবং ১৯ অক্টোবর ভোট গণনা হয়। শশী থারুর পেয়েছিলেন ১,০৭২ ভোট আর খার্গে পেয়েছিলেন ৭,৮৯৭ ভোট।
ভারত জোড়ো যাত্রা
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তার দলের হারানো নির্বাচনী জমি ফিরে পেতে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন। গান্ধীর নেতৃত্বে পদযাত্রা সম্প্রতি ১০০ দিন পূর্ণ করেছে। বিজেপি এটিকে 'ব্র্যান্ড রাহুল'-কে ফের চালু করার চেষ্টা বলে অভিহিত করেছে। কন্যাকুমারী থেকে জম্মু ও কাশ্মীর পর্যন্ত এই যাত্রা, ৩,৫৭০ কিলোমিটার বিস্তৃত। ১৫০ দিন ধরে চলবে এই যাত্রা। রাহুল গান্ধী বলেন যে তিনি মানুষের মধ্যে ভালবাসা ছড়িয়ে দিতে এই পদযাত্রা করছেন।
শিব সেনা
২০২২ সাল উদ্ধব ঠাকেরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনার জন্য একটি দুঃস্বপ্ন ছিল। বিদ্রোহের কারণে দলটি দুটি বিভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। জুন মাসে, শিবসেনা নেতা একনাথ শিন্ডে তার নিজের দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। তিনি কয়েক ডজন বিধায়কের সঙ্গে গুয়াহাটিতে উড়ে যান। MVA সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এই বিদ্রোহ শেষ হয়। মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয় উদ্ধব ঠাকরেকে। বিজেপির সমর্থনে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন শিন্ডে। দলের নেতৃত্বের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে রয়েছে। শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউতের গ্রেফতার হওয়া এই আগুনে ইন্ধন যোগ করেছে।
ন্যাশনাল হেরাল্ড কেস
ন্যাশনাল হেরাল্ড কেস ২০২২ সালে গান্ধী পরিবারকে সমস্যায় ফেলে। এই বছর কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি সোনিয়া গান্ধী এবং তার ছেলে রাহুল গান্ধী প্রথমবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) অফিসে হাজির হন। জুলাইয়ে সোনিয়া গান্ধী কোভিড সংক্রমণ সামলে তিনবার ইডির সামনে হাজির হন। রাহুল গান্ধীকে ইডি অফিসে পাঁচ বার প্রশ্ন করা হয়। ইডি-র এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কংগ্রেস তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। কংগ্রেস নেতারা দেশব্যাপী প্রতিবাদ শুরু করেন এবং একবার তারা 'ভারত বন্ধ' করেছিলেন। তবে, তারা দাবি করেছে যে এই বিক্ষোভ বেকারত্বের বিরুদ্ধে। এই বিক্ষোভে কিছু হিংসার ঘটনাও ঘটেছে। পুলিসের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম।
আরও পড়ুন: UP Politics: সপায় দায়িত্ব পেলেন না শিবপাল! কী জানালেন অখিলেশ?
হিজাব বিবাদ
বছরের শুরুর দিকে কর্ণাটকে অশান্তি শুরু হয়। রাজ্য সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের হিজাব ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। হাইকোর্ট এই নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার পর বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে যায়। অক্টোবরে, শীর্ষ আদালত একটি বিভক্ত রায় প্রদান করে। একজন বিচারক বলেন যে রাজ্য সেখানকার স্কুলগুলিতে ইউনিফর্ম বিধি প্রয়োগ করতে পারে এবং অন্য বিচারক হিজাব পরাকে নিজের পছন্দের বিষয় হিসাবে বর্ণনা করেন।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন
দ্রৌপদী মুর্মু ভারতের ১৫ তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এই পদে সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন দ্রৌপদী মুর্মু। এছাড়াও তিনিই এই পদে অধিষ্ঠিত প্রথম আদিবাসী মহিলা।
জি-২০ প্রেসিডেন্ট
ভারত ১ ডিসেম্বর, ২০২২ সালে এক বছরের জন্য G-20-এর সভাপতিত্ব গ্রহণ করেছে। ভারত ৩২টি বিভিন্ন ওয়ার্কস্ট্রীম জুড়ে ৫০টিরও বেশি শহরে ২০০টিরও বেশি বৈঠকের আয়োজন করবে।
আরও পড়ুন: সুড়ঙ্গের অন্ধকারে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র লুকিয়ে রাখা, আর আপনি পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছেন গাড়ি নিয়ে...
শ্রদ্ধা ওয়াকার মার্ডার
নিজের প্রেমিকা শ্রদ্ধা ওয়াকারকে খুনের পর তাঁর দেহ ৩৫ টুকরো করা থেকে ফ্রিজারে দেহাংশ সংরক্ষণ। তদন্তে উঠে আসে একের পর এক ভয়ংকর হাড়হিম করা চাঞ্চল্যকর তথ্য। একদিকে ফ্রিজে যখন প্রেমিকার দেহাংশ থেকে কাটা মুণ্ডু মজুত, সেই অবস্থাতেও ফ্ল্যাটে নিত্য নতুন বান্ধবীদের নিয়ে এসে উদ্দাম যৌনতায় মেতেছে আফতাব। পাশাপাশি, শ্রদ্ধাকে খুনের পর প্রতিদিন রাত ২টো থেকে শুরু হত প্রেমিকার কাটা দেহাংশ জঙ্গলে ফেলার জন্য আফতাবের অভিযান। ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় ওই ৩৫ টুকরো ফেলে আফতাব।
ভাঙল মোরবি ব্রিজ
গুজরাটের মোরবিতে ব্রিটিশ আমলে তৈরি কেবল সেতু ভেঙে কমপক্ষে ১৪১ জনের মৃত্যু হয়। প্রায় ১৭৭ জনকে উদ্ধার করা হয়। আমেদাবাদ থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ১৫০ বছরের পুরনো এই ব্রিজ। টানা ৭ মাস ধরে সেতুটির মেরামতি হয়েছে। তারপরেও কীভাবে সেতুটি ভেঙে পড়ল, তা বুঝতে পারছে না প্রশাসন। ৫ সদস্যের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি ব্রিজটি ভেঙে পরার কারণের তদন্ত করছে। কন্সট্রাকশন কোম্পানির ম্যানেজার সহ ৯ জনকে আটক করা হয়। অভিযোগ, মেরামতির পর নির্ধারিত সময়ের তিন দিন আগেই মানুষ চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হয়। এমনকি, শতাব্দী প্রাচীন সেতুটির সংস্কারের পর পুনরায় চালু করার আগে সুরক্ষা শংসাপত্রও পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। বিপর্যয়ের নেপথ্যে গাফিলতির প্রমাণ মিলেছে। ভারবহন ক্ষমতার অতিরিক্ত মানুষ উঠেছিলেন। ব্রিজে লাথি মারা হয়েছিল। ঝাঁকানোও হয়েছিল। এই ঝুলন্ত সেতুর যখন তার ছিঁড়ে যায়, তখন নারী এবং শিশুসহ প্রায় ৫০০ লোক ছিলেন সেতুর উপরে। সেতু ভেঙে তাঁরাও নদীতে পড়ে যান। সেতু ভেঙে যাওয়ার পরে মানুষ একে অপরের উপরে পড়ে যায়। ভিডিয়োতে অনেককে মরিয়া হয়ে সেতুর বেঁচে থাকা অংশ আঁকড়ে থাকতে দেখা যায়। পাশাপাশি দেখা যায় কিছু মানুষ সাঁতার কেটে পাড়ে ওঠারও চেষ্টা করছেন। সেতু খোলার ৫ দিনের মাথায় কীভাবে ভেঙে পড়ল সেতু? সেতু বিপর্যয়ের দায় কার? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
জ্ঞানবাপী মসজিদ
বেনারসের কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের সংলগ্ন জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে বহুদিন ধরে নানা তর্ক বিতর্ক চলছে। এই নিয়ে কমিটি গড়া হয়েছিল। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। শেষমেশ বেনারস কোর্ট আর্কিওলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার উপর সমীক্ষার দায়িত্ব দেয়। সেই পদ্ধতিরই এক পর্বে এসে এই মসজিদের চত্বরের পশ্চিম দেওয়ালের দিকে হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ মেলে। জানা যায় জ্ঞানবাপী মসজিদে মিলেছে শিবলিঙ্গের অস্তিত্ব। দাবি করা হয়েছে যে মসজিদ কমপ্লেক্সের মধ্যে একটি পুকুরে একটি ‘শিবলিঙ্গ’ পাওয়া গিয়েছে। এই পুকুর মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনার আগে ‘ওয়াজু’ অথবা শুদ্ধিকরণ আচারের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই সময় মামলার বিচারক পুকুরটি সিল করার নির্দেশ দেন।
নূপুর শর্মার মন্তব্য
জুন মাসে, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মুখপাত্র নূপুর শর্মা নবী মহম্মদ সম্পর্কে তার আপত্তিকর মন্তব্যের মাধ্যমে ভারতে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিলেন। এটি একটি কূটনৈতিক বিতর্কে পরিণত হয়।
উত্তরপ্রদেশের কানপুরে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। অনেক রাজ্যে বিক্ষোভ হয় এবং দেশের বিভিন্ন অংশে শর্মার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
ক্ষোভের পরে, বিজেপি তাকে পাঁচ জুন দল থেকে সাসপেন্ড করে।