কিংবদন্তি পিকে-র প্রয়াণে নিষ্প্রদীপ ভারতীয় ফুটবল, অমর হয়ে থাকবে তাঁর অবদান

নিজস্ব প্রতিবেদন : আসল নামটি বলার প্রয়োজন হত না । ফুটবল দুনিয়া চিনত তার পোশাকি  নামেই । ভারতীয় ফুটবলের  উত্থানের ইতিহাসে আগাগোড়া জড়িয়ে রয়েছে পি কে নামটি । ফুটবলার থেকে কোচ ভারতীয় ফুটবলে  সব ক্ষেত্রেই তার অবদান অনস্বীকার্য। ফুটবলার হিসেবে আন্তর্জাতিক আঙিনায় ভারতের নাম তুলে ধরার ক্ষেত্রে যেমন অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। তেমন কোচ হিসেবে ভারতীয় ফুটবলে জন্ম দিয়েছেন একাধিক দিকপাল ফুটবলারের । তাই ভারতীয় ফুটবলে কিংবদন্তি তিনি। ফুটবল ইতিহাসের মাইলস্টোনের অপর নাম পিকে ব্যানার্জি।  

পরাধীন ভারতে ১৯৩৬ সালে ২৩ শে জুন জলপাইগুড়ি জেলায় জন্ম প্রদীপ কুমার ব্যানর্জির । সেখানকার জেলা স্কুলে তার  পাঠ্যজীবন শুরু। বাবার বদলির চাকরির সুবাদে বাংলা ছেড়ে চলে যেতে হয় বিহারে । পাঠ্যজীবন শেষ করে তত্‍কালীন বিহারের জামশেদপুরে। ছাত্রজীবন থেকেই  ফুটবল আর পিকে একে অন্যের পরিপূরক । সেই কারনেই মাত্র উনিশ বছর বয়সে ১৯৫১ সালে বিহারের হয়ে সন্তোষ ট্রফিতে খেলার সুযোগ পান ভারতীয় ফুটবলের এই প্রতিভাবান স্ট্রাইকার। তিন বছর বিহারের হয়ে ফুটবল খেলার পর ১৯৫৪ সালে কলকাতায় চলে আসেন কি কে ব্যানার্জি । ততদিনে ফুটবলার পি কে-র নাম আকাশে বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।

কলকাতায় এসে যোগ দেন এরিয়ান ক্লাবে । ময়দান জুড়ে তখন  পি কে-র দাপট । পরের বছরই ইস্টার্ন রেল তাকে  অফার দেয়। পরিবারে অভাব ,সংসার চালাতে হবে । তাই ইস্টার্নরেলের চাকরি নিয়ে সেখানে যোগ দিলেন । ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৭ সাল টানা বারো বছর ইস্টার্নরেলের হয়ে খেলে তার ফুটবল কেরিয়ার শেষ করেছেন পি কে ব্যানার্জি ।
যে বছর ইস্টার্নরেলে যোগ দিয়েছিলেন সেই বছর অর্থাত্‍ ১৯৫৫ সালে  মাত্র উনিশ বছর বয়সে জাতীয় দলে সুযোগ পান তিনি । আটদলীয় একটি আন্তর্জাতিক টুর্ণামেন্টে  ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি । পি কে ব্যানার্জি বাংলার ফুটবলে একমাত্র ব্যক্তি ফুটবলার হিসেবে যেখানে জন্ম সেখানেই মৃত্যু । অর্থাত্‍ মোহনবাগান কিংবা ইষ্টবেঙ্গলের মোহকে দূরে সরিয়ে  সারাজীবন ইস্টার্নরেলেই খেলে গেছেন। এখানে খেলেই দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ভারতীয় ফুটবলে । ভারতীয় ফুটবলের এই কিংবদন্তী জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ছাপ ফেলেন অভিষেকের এক বছর পরেই ।

#১৯৫৬ সালে মেলবোর্ন অলিম্পিক।  সেই অলিম্পিকে সেমিফাইনালিস্ট দল ছিল ভারত । যা আজও  ভারতীয় ফুটবলে ইতিহাস । সেই ছাপান্ন সাল বলা হয় ভারতীয় ফুটবলের স্বর্ণযুগ । সেই দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন পি কে ব্যানার্জি ।

#এশিয়াডে সোনা জয়ী ভারতীয় দলের সদস্য পিকে । তিনটি এশিয়ান গেমসে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি । ১৯৫৮ টোকিও এশিয়ান গেমস,১৯৬২জাকার্তা এশিয়ান গেমস এবং ১৯৬৬ ব্যাঙ্কক এশিয়ান গেমস । ১৯৬২ জাকার্তা গেমসে সোনা জিতেছিল ভারত ।

#১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিকে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রদীপ ব্যানার্জি । সেই  অলিম্পিকে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে পিকে-র গোলেই ম্যাচ ১-১ গোলে অমীমাংসিতভাবে শেষ হয় ।

#জাতীয় দলের জার্সি গায়ে  তিনটি মারডেকা টুর্ণামেন্টে পদক জয়ী দলের সদস্য ছিলেন পিকে । কুয়ালালামপুরে ১৯৫৯ এবং ১৯৬৪ এই টুর্ণামেন্ট  রুপো এবং ১৯৬৫ সালে ব্রোঞ্চ পদক জিতেছিল ভারত ।

#পি কে ব্যানার্জি দেশের হয়ে খেলেছেন ৮৪টি ম্যাচ । গোল করেছেন ৬৫টি ।

 

মারডেকা শেষ পদক জেতার দু বছর পর মারাত্মক চোট পান । সেই চোট সারিয়ে মাঠে ফিরে আসা আর সম্ভব হয় নি পিকে-র । তাই ১৯৬৭ সালে ফুটবলকে বিদায় জানান ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তী । ফুটবলার হিসেবে ক্লাব ,রাজ্য এবং দেশে ছাপ রেখে যাওয়ার পর প্রবেশ কোচিং জীবনে ।

#ইষ্টবেঙ্গল ক্লাবে কোচিং কেরিয়ার শুরু ১৯৬৮ সালে। ক্লাব কোচিং এ সবচেয়ে বড় সাফল্য মোহনবাগানের হয়ে। আই এফ এ শিল্ড,রোভার্স কাপ এবং ডুরান্ড কাপ  মোহনবাগান ত্রি-মুকুট জিতেছিল পিকে-র কোচিংয়ে।

#জাতীয় দলের কোচিং-এ ব্যাটন হাতে তুলে নেন ১৯৭২ সালে । ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ভারতীয় দলের কোচ ছিলেন পিকে ।

#১৯৯১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত টাটা ফুটবল একাডেমি টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ছিলেন পিকে ব্যানার্জি। তাঁর হাত ধরে টাটা একাডেমি থেকে ভারতীয় ফুটবলে জন্ম নিয়েছিল অনেক প্রতিভা।

#১৯৯৯ সালে ভারতীয় ফুটবলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হয়েছিলেন ।

ফুটবলার থেকে কোচ, সব ক্ষেত্রে দাগ রেখে গেছেন পিকে ব্যানার্জি । তার স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি

#১৯৬১ সালে অর্জুন পুরস্কার পান
#১৯৯০ সালে পদ্মশ্রী সন্মানে ভূষিত হন

#২০০৪ সালে IFFHS বিচারে বিংশ শতাব্দীর সেরা ভারতীয় ফুটবলারের স্বীকৃতি পান

#২০০৫ সালে ফিফার তরফ থেকে শতাব্দীর সেরা ভারতীয় ফুটবলারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়

#ফিফার সর্বোচ্চ বিশেষ সন্মান FIFA ORDER OF MERIT এই সন্মানে সন্মানিত করা হয়
#আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি থেকে দেওয়া হয় আন্তর্জাতিক ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড

সেই কিংবদন্তি ফুটবলার প্রদীপ কুমার ব্যানার্জির জীবন প্রদীপ নিভে গেল । তার শরীর পঞ্চভূতে বিলিন হয়ে গেলেও ভারতীয় ফুটবলে তাঁর অবদান অমর হয়ে থাকবে । যা ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যত্‍ প্রজন্মের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা ।

আরও পড়ুন - প্রয়াত কিংবদন্তি পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়

English Title: 
A glorious chapter of Indian football came to an end with the passing of legend Pradip Kumar Banerjee
News Source: 
Home Title: 

কিংবদন্তি পিকে-র প্রয়াণে নিষ্প্রদীপ ভারতীয় ফুটবল, অমর হয়ে থাকবে তাঁর অবদান

কিংবদন্তি পিকে-র প্রয়াণে নিষ্প্রদীপ ভারতীয় ফুটবল, অমর হয়ে থাকবে তাঁর অবদান
Yes
Is Blog?: 
No
Section: