পাকিস্তানের পর এবার দক্ষিণ আফ্রিকাকেও উড়িয়ে দিল ভারত, ধোনিদের নজর এবার গ্রুপ সেরার দিকে

যে প্রোটিয়ারা একেবারে ফেভারিট হয়ে খেলতে নেমেছিল

Updated By: Feb 22, 2015, 05:40 PM IST
 পাকিস্তানের পর এবার দক্ষিণ আফ্রিকাকেও উড়িয়ে দিল ভারত, ধোনিদের নজর এবার গ্রুপ সেরার দিকে

ভারত- ৩০৭/৭
দক্ষিণ আফ্রিকা-১৭৭ (৪০.২ ওভার)
ভারত জয়ী ১৩০ রানে। ম্যাচের সেরা শিখর ধাওয়ান।

পার্থ প্রতিম চন্দ্র: অ্যাডিলেডে গত রবিবার পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে অল উইন রেকর্ড বজায় ছিল। আর সপ্তাহ ঘুরতেই মেলোবর্নে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপে ভারতের সবচেয়ে বড় গাঁট খুলে গেল। পরপর দুটো ম্যাচ জিতে ধোনির বজায় রাখলেন দুটো সত্যকে। একটা সত্য হল বিশ্বকাপে ভারতকে পাকিস্তান হারাতে পারে না, আর মিথ (দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভারত বিশ্বকাপে হারাতে পারে না)-টিথ এসব ধোনির ক্ষেত্রে কাজে আসে না।

অবশেষে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারল ভারত। অবশ্য শুধু হারাল বললে কম বলা হয়, এর চেয়ে বরং ভাল প্রোটিয়াদের পিষে ফেলল মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। শুরু থেকে শেষ অবধি প্রশ্নাতিত আধিপত্য রেখে এবি ডিভিলিয়ার্সের দলকে ১৩০ রানে হারাল ধোনির দল। যে প্রোটিয়ারা একেবারে ফেভারিট হয়ে খেলতে নেমেছিল, ম্যাচের শেষে স্কোরবোর্ড দেখলে কোনও ছোট দেশের মনে হচ্ছে। খাতায় কলমে চলতি বিশ্বকাপের সবচেয়ে ভারী ব্যাটিংলাইন আপ মাত্র ৪০ ওভারেই খতম হয়ে গেল।

মেলবোর্নের উইকেটে ৩০৭ বিশাল স্কোর বলা যাবে না, তবু দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটকে নিয়ে ক্লিশে হয়ে যাওয়া চোকার্স তকমাটা মেলোবর্নের এই ম্যাচে পরতে পরতে প্রমাণ করল। দলের সবচেয়ে বড় ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন রান আউট হয়ে। যিনি কি না আজ ফিল্ডিং করে জন্টি রোডসের ধাঁচে দু দুটো রান আউট করে উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। এবি-র আউটকে অনেকেই বলছেন, শিকারই যখন শিকার। রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই চাপে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০১৩ সালে ভারতের বিরুদ্ধে পরপর তিনটে ওয়ানডে শতরান করা কুইন্টন ডি কককে দ্রুত ফিরিয়ে দিয়ে সামি যে চাপটা শুরু করেছিলেন, একেবারে শেষ অবধি সেই চাপটা বজায় ছিল।

এর সিংহভাগ কৃতিত্ব মোহিত শর্মার। শুধু বল হাতে নয় ফিল্ডার মোহিতও চমকে দিলেন। সামি, মোহিতের চাপের রাখার কৌশলটা অশ্বিন বজায় রাখলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা কোনও দিনই স্পিন খেলায় সিদ্ধহস্ত নয়, আইপিএলের যুগে এসেও নয়। অশ্বিন সেই সুযোগের পুরোটা কাজে লাগালেন। তবে একা অশ্বিন কেন সুযোগের সদ্বব্যবহার বললেই আসবে শিখর ধাওয়ানের কথা। বিশ্বকাপে তাঁর দলে থাকা নিয়ে কম কথা হয়নি। ফর্মের ধারে কাছে ছিলেন না। কিন্তু অ্যাডিলেডে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মূল্যবান ৭৩ রানের পর আজ নিজের বউয়ের পাড়ায় যে ইনিংসটা খেলে দিলেন তাতে ধোনিদের আত্মবিশ্বাসটা আকাশছোঁয়া হয়ে গেল। আজ জয়ের পর ধোনিদের নিয়ে যে উচ্ছ্বাসটা মেলবোর্ন থেকে মুম্বইয়ে হল তাতে কে বলবে এই দলটাই অস্ট্রেলিয়া সফরে এসে একটা ম্যাচও জেতেনি। ধাওয়ানের ১৩৭ রানের পাশে সমান উজ্জ্বল হয়ে তাকবে রাহানের ৭৯। স্টেইন, পার্নেলেদের চোখেচোখ রেখে অবিশ্বাস্য সব শট খেলে মওকা মওকা রবটা রাহানের ব্যাটই তুলেছিল। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হারের লজ্জার মুখে পড়তে হল দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

আজকের এই জয়টা চলতি বিশ্বকাপের নিরিখে কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ-১) এই জয়ের ফলে নক আউট রাউন্ড কার্যত নিশ্চিত। কারণ এরপর গ্রুপ লিগে একমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া আর কোনও টেস্ট খেলিয়ে দেশের বিরুদ্ধে খেলতে হবে না। ২) গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা খুব গুরত্বপূর্ণ কারণ সেক্ষেত্রে কোয়ার্টার ফাইনালে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে এড়িয়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ মিলবে। ৩) বিশ্বকাপ শুরুর আগে হারতে হারতে মনোবলটা যে জায়গায় গিয়েছিল, সেটা থেকে উদ্ধার হওয়া গেল, ৪) প্রথম একাদশ কার্যত ঠিক হয়ে গেল। একমাত্র জাদেজার জায়গায় বিনির একটা সুযোগ থাকছে, ৫) এত দিন ধরে বিশেষজ্ঞরা সেমিতে চারের দলের মধ্যে রাখছিলেন অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউঝিল্যান্ডকে। এবার এই তালিকায় ভারতের নাম ঢুকছে। তবে এতে ধোনিদের বিশেষ সুবিধা হবে না।

 

ভারতের পরের ম্যাচ সংযুক্ত আরবআমিরশাহি, শনিবার।

.