Rinku Singh, IPL 2023: ব্যক্তিগত সাফল্যের পরেও কেন মাটিতে পা রেখে চলতে চাইছেন নাইট তারকা? জানতে পড়ুন
রাজ্য দল উত্তর প্রদেশ থেকে আইপিএল জগতে নিজের আলাদা পরচিতি গড়ে তুলেছেন। তবে শিকড়কে ভুলে যাননি। আলিগড় স্পোর্টস অ্যাকাডেমির দুস্থ খুদে ক্রিকেটারদের দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন কাঁধে। নিঃশব্দে জুগিয়ে যাচ্ছেন, তাদের ব্যাট-বলের জোগান। অ্যাকাডেমিতে আগে ছিল না কোনও আবাসিকদের হস্টেল। অর্জুন সিংয়ের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেটাও তৈরি করেছেন।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ১৪ ম্যাচে ৪৭৪ রান। ব্যর্থ হয়ে চলতি আইপিএল-এ (IPL 2023) সাত নম্বরে শেষ করা কলকাতা নাইট রাইডার্সের (Kolkata Knight Riders) সর্বোচ্চ স্কোরার রিঙ্কু সিং (Rinku Singh)। গোটা লিগে নবম। লিগে প্রথম ১০ ব্যাটারের মধ্যে সেরা ব্যাটিং গড় ৫৯.২৫। কেকেআর (KKR) যে ছ’টা ম্যাচ জিতেছে, তার মধ্যে তিনটে ম্যাচে মূল কারিগর রিঙ্কু। শাহরুখ খান (Shah Rukh Khan) পর্যন্ত ‘পাঠান’ ছবির পোস্টারে নিজের মুখের বদলে রিঙ্কু মুখ বসিয়ে দিয়েছিলেন। তবে আলিগড়ের রিঙ্কু কিন্তু এত সাফল্যের পরেও আবেগে ভেসে যেতে রাজি নন। বরং মাটিতে পা রেখেই চলতে চান। কারণটাও অকপটে জানালেন মারকুটে ব্যাটার।
অর্থকষ্ট খুব কাছ থেকে দেখা রিঙ্কু কিন্তু খুবই বাস্তববাদী। তাই বলছিলেন, "আমি যে ভাবে ব্যাট করতাম, ঠিক সেভাবেই এবারের আইপিএল-এ ব্যাট করেছি। তবে এটা ঠিক যে পাচ-ছয়টা ইনিংস আমার জীবন একেবারে বদলে দিয়েছে। আমাকে এর আগে কয়েক জন চিনতেন। তবে সেই ইনিংসগুলোর পর থেকে অনেকেই আমাকে চিনতে শুরু করেছেন। গ্যালারি থেকে আমার নামের আওয়াজ উঠছিল। সেটা শুনে অবশ্যই ভালো লাগত। তবে আমি জানি এই ব্যাপারগুলো খুবই আপেক্ষিক। মাত্র দুই মিনিটের চাকচিক্য। যারা আজ আমাকে কাঁধে তুলে রাখছেন, রান না করতে পারলে সেই লোকগুলোই গাল-মন্দ করবেন।"
রিঙ্কুর বাবা খানচন্দ সিং স্থানীয় এলাকায় এলপিজি গ্যাস সরবরাহ করতেন। পাঁচ-ভাই বোনের সংসারে অভাব-অনটনের সঙ্গে মিতালি গড়েই জীবনের চলার পথ গড়তে হয়েছে বাঁ-হাতি এই ক্রিকেটারকে। এগুলো সব ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। এটুকুতে যে রিঙ্কুর ব্যাপ্তিকে ধরা মুশকিল। এর বাইরে একটা অন্য রিঙ্কুও রয়েছে। রিঙ্কুর বাবা যে কোম্পানির গ্যাস সরবরাহ করতেন, সেই গ্যাস এজেন্সির সামনের লনে ব্যাট হাতে ক্রিকেট অনুশীলনে ডুবে থাকতেন রিঙ্কু। তখন ওঁর বয়স পাঁচ কি ছয়! বাইক নিয়ে যাওয়ার সময় সেই দৃশ্য হামেশাই চোখে পড়ত ফাসাহতের। আর চোখে পড়েছিল দু’জনের-অর্জন সিং ফকিরা ও মাসুদ আমিনির। জহুরি জহর চেনে, তাঁরাও রিঙ্কুকে চিনেছিলেন। নিয়ে এসেছিলেন আলিগড় স্পোর্টস অ্যাকাডেমিতে। ক্রিকেট অভিযাত্রায় সেই প্রথম দীক্ষা লাভ বাঁ-হাতি ব্যাটারের। তারপর অনূর্ধ্ব-১৯, রনজি হয়ে আজকের আইপিএল। রিঙ্কু নিজের ছন্দে এগিয়েই চলেছেন। অর্থাভাব যে পরিবারে নিত্য সঙ্গী, সেখানেও রিঙ্কু তাঁর স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছিলেন। অবশ্য সেইজন্য রিঙ্কু তাঁর পরিবার ও ফাসাহত, অর্জুন সিং কিংবা মাসুদ আমিনিদের মতো কুশীলবদের প্রতি সবসময় কৃতজ্ঞতা জানিয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন: Sourav Ganguly VS Virat Kohli, IPL 2023: বিরাটকে নিয়ে টুইট বিতর্কে ট্রোলারদের কড়া জবাব দিলেন সৌরভ
ফেলে আসা সেই দিনগুলো নিয়ে আলোচনা উঠলেই রিঙ্কু বলেন, "সবাই আমার সাফল্যটাই দেখল, পিছনের কঠিন পরিশ্রমটা দেখল না। দুঃস্থ এক পরিবার থেকে উঠে এসেছি আমি। অর্থ ছিল না। লেখাপড়া করতে পারিনি। অর্থ জোগাড় করার জন্য মা আমাকে সাফাইকর্মীর কাজ করতে বলেছিলেন। এরকম অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় ছিল ক্রিকেট। ক্রিকেটের জন্য আমি কঠিন পরিশ্রম করতে রাজি ছিলাম। বিভিন্ন সময়ে অনেক মানুষ আমাকে সাহায্য করেছেন। কেকেআর যেভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে তার জন্যই আজ আমি এখানে এসে পৌঁছেছি।"
রিঙ্কু অনেক আগেই জেনে গিয়েছিলেন যে তাঁর জীবন যদি কেউ বদলাতে পারে, সেটা একমাত্র ক্রিকেট। একটা সময় তিনি ঠিক করে ফেলেন যে ক্রিকেটের উপরই পুরোপুরি নিজের নজর রাখবেন। দিল্লিতে একটি টুর্নামেন্ট চলাকালীন ম্যান অফ দ্য সিরিজের পুরস্কার হিসেবে তাঁকে একটি মোটরবাইক উপহার দেওয়া হয়। সেই বাইকটা তিনি সিলিন্ডার ডেলিভারির কাজে ব্যবহার করেছিলেন। আর সেই ক্রিকেটই রিঙ্কুর জীবন বদলে দিল। এতটাই বদলে গিয়েছে তাঁর জীবন যে, নাইট তারকা রিঙ্কু এখন ভবিষ্যতের 'রিঙ্কু' গড়ার কাজে নেমেছেন।