তা হলে ওয়ানডেতে এবার লক্ষ্য ট্রিপল সেঞ্চুরি!
পার্থ প্রতিম চন্দ্র
নিশ্চিত আজ আজহারউদ্দিন যেখানেই থাকুন একটু মুচকি হাসবেন। তাঁর এই প্রিয় ইডেনে এই শ্রীলঙ্কাই তাঁকে তাঁর জীবনের সবচেয়ে ট্র্যাজিক আর সমালোচনার হার উপহার দিয়েছিল। আজ সেই ইডেনেই আজ রোহিত শর্মা ২৬৪ রান। ইতিহাস মুচকি হাসল কী। ইস, সময় জিনিসটা কত নিষ্ঠুর। একটা সময় ভেদে কত কিছু বদলে যায়। আজ যেটা অসম্ভব হয়ে আকাশে ডানা মেলে, সেটা কাল সম্ভব হয়ে হামাগুড়ি দেয়।
১৯৯৬ বিশ্বকাপে ১৩ মার্চ, বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। শ্রীলঙ্কা প্রথমে ব্যাট করে তুলল ২৫১ রান। মনে আছে সেদিন টিভিতে এক বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, আড়াইশো রানটা বড্ড বেশি হয়ে গেল। কথাটা ২০১৪ এসে বললে! নিশ্চিত সেই বিশেষজ্ঞকে নিয়ে 'বাট অফ জোকস' শুরু হয়ে যাবে। এই যে আজ ইডেনে রোহিতের ইনিংসটা কী প্রমাণ করল? না, না, শ্রীলঙ্কার বোলাররাগুলো সব আঙুল চুষছিল, ফিল্ডারগুলো ঘুমোচ্ছিল, পিচটা একেবারে ব্যাটসম্যানদের কাছে গোলাপ বাগান হয়ে উঠেছিল এইসব নয়। রোহিতের ইনিংস প্রমাণ করল সম্ভব, হ্যাঁ সম্ভব। যে ওয়ানডে ক্রিকেটে আজ থেকে বছর কুড়ি আগে ২৫০ রানটা ছিল উইনিং স্কোর, ব্যাটসম্যান ১৫০ রান করলে সবাই হা হয়ে যেত। সেই ওয়ানডে ক্রিকেটে আজ একজন ব্যাটসম্যানই করে ফেলল ২৬৪। তাহলে এবার ওয়ানডে ক্রিকেটে কিসের অপেক্ষা থাকল! হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন ৩০০ রান। সেটা কী সম্ভব।
আর আগে দেখে নেওয়া যাক আজ রোহিতের ইনিংসের ছোট একটা দিক। আবার রোহিত আজ প্রথম ৫০ রান করতে নেন ৭২ বল। অর্থাত্ পরের ২১৪ রান করতে রোহিত সময় নিয়েছেন ১০১ বল। সেই হিসাবে দেখলে শুরু থেকেই মোটামুটি একই গতিতে খেলতে পারলে অনায়াসে একজন ব্যাটসম্যান অনায়াসে ৩০০ রানের ইনিংস গড়া ফেলবে।
এর শুরুটা হয়েছিল এক বছর আগে আইপিএলে ক্রিস গেইলের সেই ১৭৫ রানের ইনিংস দিয়ে। সেদিনই বোঝা গিয়েছিল ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানরা কী কী দেওয়াল ভাঙতে চলেছেন। ১৯৯৭ সালে ভারতের বিরুদ্ধে সঈদ আনোয়ারের ১৯৪ রানের ইনিংসের পর অনেকদিন ধরে সেই রেকর্ডটা ভাঙার চেষ্টা চলেছিল। কিন্তু অনেক কাছাকাছি গিয়েও সে রেকর্ড অক্ষত থেকে গিয়েছিল। তারপর ওয়ানডে নিয়ে একটা মিথ চালু হয়ে গিয়েছিল। সেটা হল যতই পেটাও ওয়ানডেতে কোনও ব্যাটসম্যান ডবল সেঞ্চুরি করতে পারবে না। বিশেষজ্ঞরাও অনেক হিসাব করে বলেছিলেন ছিলেন, ব্যাটসম্যান যতই মারুক বলে কুলবো না।
এসব মিথ যখন জাঁকিয়ে বসছে তখনই এল টি২০। ২০ ওভারের ক্রিকেটে একজন ব্যাটসম্যান ঠুকে বসলেন ১৫০। কথায় বলে না কোনও কঠিন কাজ করতে হলে আগে বিশ্বাস করতে হয়, সেটাই আনল আইপিএলে ম্যাককুলামের ইনিংসটা। ২০ ওভারে কেউ যদি ১৫০ করতে পারে তাহলে তার আড়াইগুণ বেশি সাইজের ক্রিকেটে ২০০ হবে না কেন! মিথ ভাঙার প্রথম কাজটা করলেন সচিন তেন্ডুলকর। ২০১০ গোয়ালিয়রে সচিন বিশ্বের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসাবে করেন দ্বিশতরান। আর তার চার বছর বাদে বিশ্বের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসাবে রোহিত শর্মা টপকে গেলেন আড়াইশোর গণ্ডি।
তাহলে এবার! এবারটার জন্য বিশ্বাসের সিড়িটা বিশেষ বাড়াতে হবে না। ছোট মাঠ, দুধুভাত বোলিং, পাটাস্ব পাটা পিচ আর সামনে ডিভিলিয়ার্স, গেইল, ওয়ার্নার, কিংবা ফের আমাদের রোহিত। ৩০০ হবে, হবে, হবেই...